প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ সেপ্টেম্বর : স্কুলে চাকরি করে দেয়ার নামে আর্থিক প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন এক তৃণমূল নেতা। ধৃতের নাম দেবাশীষ পাল। তার বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার বড়া শ্যামবাজার এলাকায়। তিনি মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন। আউসগ্রামের গুসকরা এলাকাবাসী এক তরুনীর দায়ের করা আর্থিক প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগে ভিত্তিতে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ বুধবার রাতে গুসকরা শহর এলাকায় থেকে তাকে গ্রেফতার করে। যদিও বৃহস্পতিবার নিজের দায়ের করা অভিযোগের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেন ওই তরুণী। তিনি বলেন, দেবাশীষের সঙ্গে তার যে পারিবারিক ঝুট ঝামেলা ও ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল ,সেটা মিটে গেছে।তাই তিনি কেস তুলে নিচ্ছেন।
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন জানিয়েছেন, ‘আউসগ্রামের ওই মহিলা পুলিশের কাছে দেবাশীষ পালের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন । তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত নেমে পুলিশ বুধবার রাতে গুসকরা শহর এলাকা থেকে দেবাশীষ পালকে গ্রেফতার করে। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলার রুজু করে বৃহস্পতিবার তাকে কাটোয়া মহকুমা আদালতে পেশ করা হয়েছে’।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে,তদন্তের প্রয়োজনে বিচারক ধৃত দেবাশীষ পালকে ৪ দিনের পুলিশি
সেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন ।
মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী এদিন বলেন, ’ওই তরুণীর আনা এই ধরনের অভিযোগের বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বের কানে যাওয়ায় ভাল্যগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে দেবাশীষ পাল কে সরিয়ে দেওয়া হয়। এখন তো শুনছি ওই তরুণী আবার অন্য কথা বলছেন !’ ‘তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন,’পুলিশ বিষয়টি দেখছে । আসল ঘটনা রহস্য পুলিশ নিশ্চয়ই উদঘাটন করবে ।’
পুলিশ জানিয়েছে,গুসকরার ওই তরুণী মাসখানেক আগে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা দেবাশীষ পালের বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে নিজেই লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তারপর একই বিষয় নিয়ে তিনি কলকাতা হাইকোর্টেও মামলা করেন। তরুণী অভিযোগ করেছিলেন,” গত বছর তৃণমূল কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি দেবাশীষ পাল টাকার বিনিময়ে তাঁকে দু’মাসের মধ্যে কোন স্কুলে গ্রুপ ’সি’ কিংবা গ্রুপ ’ডি ’ পদে চাকরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। সেইমতো তিনি দেবাশীষ পালকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও চাকরি হয় না। তিনি টাকা ফেরত চাইতে গেলে ওই তৃণমূল নেতা তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। তরুণী তার অভিযোগে এও দাবি করেন, ধর্ষণের কারণে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে তাঁর গর্ভের সন্তান নষ্ট করে দেয় তৃণমূল নেতা দেবাশীষ”।এরপর এদিন কাটোয়া মহকুমা আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে ওই তরুণী সম্পূর্ণ পাল্টি খেয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ’হাইকোর্টে আমি মামলা করেছিলাম আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে। সেটা সংবাদমাধ্যম কি করে জানতে পারলো তা আমি বুঝতে পারছি না’। একই সঙ্গে এদিন তিনি বলেন, ’মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি দেবাশীষ পালের সঙ্গে আমার একটু পারিবারিক ঝুট ঝামেলা হয়েছিল।যেটুকু ঝুট ঝামেলা ছিল সেটা মিটে গেছে। আমি আমার করা কেস তুলে নিচ্ছি’। কোন কারনে ভয়ে কেস তুলে নিতে চাইছেন কিনা জানতে চাওয়া হলে ওই তরুণী বলেন ,’আমি নাবালিকা নাকি, যে কেউ আমাকে ভয় দেখিয়ে কেস তোলা করাবে। ঝামেলা মিটে গেছে তাই আমি কেস তুলে নিচ্ছি বলে তরুণী এদিন মন্তব্য করেন’। পাশাপাশি তরুণী এও বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব আশীষ পালকে পুনরায় ভাল্যগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদে ফিরিয়ে দিক এটাই তিনি চান ।।