এইদিন ওয়েবডেস্ক,ফ্লোরিডা,২৪ আগস্ট : লেকে সাঁতার কাটছিলেন বছর চৌত্রিশের এক যুবক । এদিকে তাঁকে লক্ষ্য করে যে প্রায় ১২ ফুটের লম্বা একটি বৃহৎ কুমীর (alligator) এগিয়ে আসছে সেটি তার নজরে পড়েনি । তারপর যুবক নাগালের মধ্যে আসতেই ঘার থেকে তাঁর পুরো মাথাটি মুখের মধ্যে পুরে ফেলে কুমীরটি । কুমীরের দাঁতের চাপে ভেঙে যায় মাথার খুলির একাংশ । বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় চোয়াল । এদিকে আশেপাশে সাহায্য করার মতও কেউ নেই । ওই অবস্থায় অলৌকিকভাবে কুমীরের খপ্পর থেকে বেঁচে ফিরলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্য ফ্লোরিডার বাসিন্দা জেসি লা ভার্দে (JC La Verde) নামে ওই যুবক ।
মুখ এবং চোয়ালের পুনর্গঠন অস্ত্রোপচার এবং একটি ক্র্যানিওটমি(craniotomy) করার জন্য হাসপাতালে ১০ দিন কাটাতে হয়েছে লা ভার্দেকে । চিকিৎসকরা তাঁর ডান টেম্পোরাল লোবের (temporal lobe) অংশটি সরিয়ে ফেলেছেন যা তার ফাটা মাথার খুলি থেকে একটি ভাঙা হাড় দ্বারা ছিদ্র হয়ে গিয়েছিল । প্রায় ৬ ঘন্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার । তবে ভবিষ্যতে তার আরও কয়েকটি অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হবে । মাথার ডান পাশ রক্ষা করার জন্য তাকে এখন হেলমেট পরে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা ।
দমকল বিভাগে চাকরি করেন ফ্লোরিডার বাসিন্দা জেসি লা ভার্দে । এক সহ কর্মীর সঙ্গে গত ৩ আগস্ট ফ্লোরিডার (Florida) টাম্পার (Tampa) কাছে থনোটোসাসা (Lake Thonotosassa) লেকে গিয়েছিলেন । সেখানে যাওয়ার পর লেকের জলে সাঁতার কাটতে থাকেন ভার্দে । এদিকে তখন তাঁর সঙ্গীটি অ্যাডভেঞ্চার রেসের জন্য একটি প্রচারমূলক ভিডিও তৈরি করছিলেন । তিনি ড্রোনের সাহায্যে ভিডিও রেকর্ড করার সময় লা ভার্দের উপর কুমীরের হামলা রেকর্ড হয়ে যায় ।
লা ভার্দে বলেন, ‘আমি সাঁতরানোর সময় কুমীরটিকে একদম লক্ষ্য করিনি । তারপর হঠাৎ ইঁটের মত কোন শক্ত জিনিসে আমার মাথা ঠুঁকে যায় । বস্তুটা কি বোঝার আগেই ওই প্রাণীটি আমার ঘাড় থেকে সমগ্র মাথাটা মুখে পুরে নিয়ে সজোরে দাঁত বসিয়ে দেয় । আমি পালানোর চেষ্টা করি । কিন্তু ব্যর্থ হই । তখন আমি বাম হাত দিয়ে প্রাণীটির একটি দাঁত ধরি । ডান হাত দিয়ে তার জিহ্বা টেনে ধরি । মাঝে মাঝে প্রাণীটির মুখে আঁচর কাটতে থাকি ।’
তিনি বলেন, ‘এদিকে প্রাণীটির দাঁতের চাপে আমার চোয়াল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় । মাথার খুলি ফাটিয়ে দাঁত বসিয়ে দেয় । ওই অবস্থাতেই আমি আমার ডান দিকে ঘুরতে থাকি । আর তার কিছুক্ষণের মধ্যেই কুমীরটি আমায় ছেড়ে পালিয়ে যায় । এরপর আমি সাঁতরে লেকের পাড়ে উঠে আসি ।’
বৃহদাকৃতির ওই কুমীরের খপ্পর থেকে বেঁচে ফিরে আসার কারন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যেহেতু প্রাণীটির মুখের ভিতরে আমার মাথা ছিল তাই আদপে ওটা কি প্রাণী ছিল তা আমার বোধগম্য হচ্ছিল না । আমি বিভ্রান্ত ছিলাম । তবে সম্ভবত আমার থেকে বেশি বিভ্রান্ত ছিল ওই প্রাণীটি । কারন কুমীরটি এই ধরনের প্রতিরোধ প্রত্যাশা করেনি । কুমীরটির কাছে হার স্বীকার না করা এবং তার জিহ্বা টেনে ধরা বা মুখের ভিতরে আঁচর কাটার কারনেই সে আমায় ছেড়ে পালিয়ে যায় বলে আমার মনে হয় । তবে ওই পরিস্থিতিতে কুমীরের সঙ্গে লড়ে যাওয়াটা আমার কাছে অলৌকিক ঘটনা ।’।
তথ্যসূত্র ও ছবি : স্কাই নিউজ ।