জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,হাওড়া,২৬ মার্চ : জন্মের সময় বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মত সুগার, থাইরয়েড, ব্লাড প্রেসার, ক্লোস্টেরল, ওবেসিটি ইত্যাদি যেন মানুষের সঙ্গেই পৃথিবীতে আসছে । ওষুধের নাম উঠছে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের তালিকায়। আর্থিক কারণে সুস্থভাবে বাঁচার তাগিদে মানুষ খুঁজতে শুরু করেছে বিকল্প পথ। তখনই মানুষের সামনে হাজির হয়েছে ‘যোগা’ বা ‘ইয়োগা’। প্রাচীন যুগ থেকেই ‘যোগা’-র হাত ধরেই ভারতের মুনি-ঋষিরা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের সুস্থ রেখেছিলেন ।
ইয়োগা বা যোগ অভ্যাস হল দেহ, মন ও আত্মাকে যুক্ত করে সুস্থ থাকার এক প্রাচীন পদ্ধতি। ইয়োগা বা যোগ তো শুধু ব্যায়াম নয়, এর আসল অর্থ হল চেতনা। ইয়োগা কথার সাধারণ অর্থ মিলন। দেহ, মন ও শক্তি- এই তিনটি জিনিসের সমন্বয়ে আমাদের শরীর চলে। ইয়োগা এই তিনটির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, মিলন ঘটায়। নিয়মিত যোগচর্চার মাধ্যমে অসুস্থ শরীর রোগমুক্ত ও সুস্থ হয়ে ওঠে। সুস্থ শরীর আরও সতেজ হয়ে ওঠে। চঞ্চল ও দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মন শান্ত হতে থাকে।
এই দিকে লক্ষ্য রেখে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ইয়োগা বা যোগ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বহু শিক্ষার্থী নিজেদের সুস্থ রাখার তাগিদে সেখানে নিয়মিত ইয়োগা চর্চা করেন। শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য আয়োজিত হচ্ছে ইয়োগা প্রতিযোগিতা । আগামী ১০ ই এপ্রিল ‘বেঙ্গল যোগা ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের’ পরিচালনায় এবং বালি রিম্পা যোগা মন্দিরের ব্যবস্হাপনায় বেলুড় পাবলিক লাইব্রেরী হলে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ৫৩ তম সারা বাংলা যোগাসন প্রতিযোগিতা । প্রসঙ্গত ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই রিম্পা যোগা মন্দির এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চলেছে ।
উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই সারা রাজ্য থেকে সহস্রাধিক মহিলা ও পুরুষ প্রতিযোগী এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জায়গার অভাবে মোটামুটি ২৫০-৩০০ জন প্রতিযোগীকে সুযোগ দেওয়া হবে। অংশগ্রহণকারীদের কয়েকটি বিভাগে ভাগ করা হবে। প্রতি বিভাগের প্রথম স্হানাধিকারীদের নিয়ে যোগ সুন্দর ও যোগ সুন্দরী প্রতিযোগিতা হবে ।
যোগা প্রতিযোগিতার কথা শুনে খুশির সুর ঝরে পড়ল আসানসোলের বাসিন্দা বাষট্টি বছরের ‘যুবক’ ধনঞ্জয় মুখার্জ্জীর কণ্ঠে। তিনি বললেন পেশাগত কারণে শরীর চর্চার সুযোগ ছিলনা। দিন দিন স্হূল হতে শুরু করি। একইসঙ্গে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করে। অবসরের পর একজনের পরামর্শে যোগ ব্যায়াম শুরু করি। নিজেকে অনেকটাই ফিরে পেয়েছি। এখন আমার কাছে অনেকেই আসে। তাদের কেউ কেউ হয়তো আগামী দিনে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে।
প্রতিযোগিতার অন্যতম উদ্যোক্তা রিম্পা যোগা মন্দিরের মুনমুন ভৌমিক বললেন,’করোনার জন্য মাঝের দু’টো বছর বন্ধ থাকলেও সবার সহযোগিতায় গত সতেরো বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে আমরা এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে চলেছি।
তিনি আরও বললেন যেভাবে প্রতিযোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে সেটা এই রাজ্যে যোগার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত করে। আশা করা যায় আগামী দিনে মানুষ সুস্থ থাকার জন্য ওষুধের পরিবর্তে যোগাকেই আঁকড়ে ধরবে ।’।