এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,০৭ জুন : বিভিন্ন প্রজাতির আমের জন্য দেশ জুড়ে খ্যাতি পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার ৷ তার মধ্যে অন্যতম “কুমারখা” আম । একমাত্র পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকাতেই পাওয়া যায় বিরল প্রজাতির এই আম । বিদেশেও “কুমারখা” আমের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে । ফি বছর প্রচুর পরিমানে এই আম বিদেশে রপ্তানি করা হয় । লাভের মুখ দেখেন আম চাষিরা । কিন্তু এবারে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে বিখ্যাত কুমারখা আমের ফলন খুব কম হয়েছে । ফলে মাথায় হাত পড়ে গেছে আম চাষীদের । এবারে কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আম চাষীরা ।
“কুমারখা” আমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রাচীন ইতিহাস । মূলত ব্রিটিশ আমলে হরিশ্চন্দ্রপুরের জমিদাররাই এই আম তৈরি করিয়েছিলেন । উত্তরপ্রদেশের বিশেষ আমের সঙ্গে স্থানীয় আমের মিক্স ব্রিড করে এই আম উৎপাদন করা হয় বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা । হরিশ্চন্দ্রপুরের মিশ্র জমিদার পরিবারের সদস্য চিরঞ্জিত মিশ্র বলেন, ‘কুমারখা আমের বিশেষ ইতিহাস রয়েছে । হরিশ্চন্দ্রপুর ছাড়া এই আম কোথাও পাওয়া যায় না। সেই সময়ের জমিদাররা এইভাবেই রোপণ করেছিলেন। উত্তর প্রদেশ এবং স্থানীয় আমের সংমিশ্রণ এই আম। পূর্বসূরীদের থেকে জানতে পারি ব্রিটিশ গভর্নরদের খুশি করতে এই আম দেওয়া হতো । দেশ ও বিদেশে কুমারখা আমের বিশেষ কদর রয়েছে । আমাদের পরিবারের বহু সদস্য দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকেন । তাঁদের প্রত্যেক বছর এই আম পাঠানো হয় । এছাড়া যারা এই আম চাষ করেন তারাও আম বিদেশে রপ্তানি করেন ।’
রাজ্যের কোথাও চাষ না না হওয়ার কারনে প্রতি বছর কুমারখা আমের আশায় হরিশ্চন্দ্রপুরের দিকে তাকিয়ে থাকেন দেশ ও বিদেশের আম প্রেমীরা । কিন্তু এবারে ঘূর্ণিঝড় “ইয়াস” ও তার আগে শিলাবৃষ্টির কারনে বিখ্যাত এই আমের ফলন অনেক কম হয়েছে । কৃষি দপ্তর সুত্রে খবর, প্রতি বছর “কুমারখা” আমের উৎপাদন হয় ৪০০-৫০০ টন । রাজ্য ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে ফি বছর ৫০-১০০ টন আম বিদেশে রপ্তানি হয় । কিন্তু এবারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ১০০ টন আম উৎপাদন হবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে কৃষি দপ্তরের আধিকারিকরা ।
কুমারখা আম চাষী অরবিন্দ দাস বলেন,” দশ পনেরো বছর ধরে এই আম চাষ করছি। এই আম হরিশ্চন্দ্রপুর ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না। অন্য বারের তুলনায় এবারে ফলন খুব কম হয়েছে । বিদেশে রপ্তানি তো দূরের কথা, এলাকার মানুষই ঠিকভাবে এই আম পাবে কিনা সন্দেহ । এবারে আমার প্রায় ২-৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে যাবে।’
এই পরিস্থিতিতে আম চাষীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন হরিশচন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেন । তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে যাদেরই ক্ষতি হয়েছে আমরা তাদের পাশে আছি । দুয়ারে ত্রাণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকম সাহায্য করা হবে। প্রত্যেক চাষী সাহায্য পাবেন।’।