শ্যামসুন্দর ঘোষ ও প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান, ০২ আগষ্ট : স্বামীকে খুন করার জন্য প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে ’থ্রিলার ফিল্মের’ চিত্র নাট্যকেও হার মানিয়ে দেওয়ার মত পরিকল্পনা কষেছিলেন স্ত্রী। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে স্বামী মণিরুল মন্ডল আর্ত চিৎকার জুড়ে দিতেই স্ত্রী ডলি বিবি ও তাঁর প্রেমিক সাদ্দাম শেখের যাবতীয় পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায় । যা নিয়ে মঙ্গলবার রাতে থেকে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের লোহার গ্রামে।
পরিবারের অন্য লোকজন ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে হাত ও পা বাঁধা অবস্থায় মণিরুলকে
উদ্ধার করে। পরে তারা একই ঘরের খাটের তলায়
মাদুর চাপা দিয়ে লুকিয়ে থাকা মণিরুলের স্ত্রী ডলির প্রেমিক সাদ্দামকে দেখতে পেয়ে তাকে পাকড়াও করে । এরপর শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কাছে ধরা দিয়ে স্বামী মণিরুলকে খুনের পরিকল্পনার কথা স্বীকার করে নেন বধূ ডলি বিবি। সেই স্বীকারোক্তি শোনার পরেই পরিবার পরিজন ও প্রতিবেশীদের ব্যাপক রোষের মুখে পড়ে বধূ ডলি বিবি ও তাঁর
প্রেমিকার উপরে । খবর পেয়ে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে উত্তেজনা সামাল দিয়ে ডলি বিবির প্রেমিককে ধরে থানায় নিয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য মণিরুলকে নিয়ে যাওয়া হয় মন্তেশ্বর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থকেন্দ্রে।এস ডি পিও (কালনা) সপ্তর্ষি ভট্টাচার্য্য রাতে জানান,’গোটা ঘটনায় দু’পক্ষের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে ।’
মন্তেশ্বরের লোহার গ্রামের বাসিন্দা মণিরুলের পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন,প্রায় ৯ বছর আগে মণিরুলের বিয়ে হয় কালনার বুলবুলিতলা এলাকার তরুণী ডলির। তাঁদের সাত বছর বয়সী একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।দিল্লিতে রেডিমেড গার্মেন্টের দোকানে কাজ করতেন মণিরুল । তিন মাস আগে তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন । বর্তমানে তিনি এলাকায় টোটো চালিয়ে সংসার চালান।পরিবারের অভিযোগ মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়ির একটি ঘরে মণিরুলকে ঠান্ডা দুধের সঙ্গে কিছু মিশিয়ে খাইয়ে তাকে ঘুমে আচ্ছন্ন করে হাত ও পা শক্ত করে বেঁধে দেয় স্ত্রী ডলি ও তাঁর প্রেমিক। এরপর ডলি ও তাঁর প্রেমিক সাদ্দাম শেখ মিলে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মণিরুলকে খুন করার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ।
মণিরুল এদিন অভিযোগে বলেন,’মঙ্গলবার রাতে খাওয়াদাওয়ার আমার স্ত্রী আমার হাত পা টিপতে টিপতে হঠাৎ করে হাত ও পা দুটি শক্ত করে বেঁধে দেয় । আর তখনই সন্দেহ হয় । যদিও তার আগে স্ত্রী আমাকে ঠান্ডা দুধ খেতে দেয় । তা খেয়ে আমি ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি । মনে হয় ওই দুধেই কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল । এরপর আমার স্ত্রী ও সাদ্দাম আমার মুখে বালিশ চাপা দিয়ে আমাকে প্রাণে মেরে দেওয়ার চেষ্টা করে। ঘুম আচ্ছন্ন অবস্তাতেই তা বুঝতে পেরে আমি প্রণে বাঁচার জন্য জোর চিৎকার শুরু করি । তা শুনেই আমার পরিবারের লোকজন ধাক্কা মেরে দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে আমাকে উদ্ধার করে ।’
মণিরুলের ভাই রেজাবুল মন্ডল বলেন,’দাদার চিৎকার শুনেই আমরা গভীর রাতেই ঘুম থেকে উঠেপড়ি। ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকতেই দেখি দাদার হাত ও পা বাঁধা রয়েছে । পাশেই তখন বৌদি রয়েছে । দাদা তখন ইশারায় খাটের তলার দিকে দেখায় । খাটের তলায় তাকাতেই দেখি যুবক সাদ্দাম খাটের তলায় মাদুর চাপা দিয়ে লুকিয়ে রয়েছে ।’ আর মণিরুলের ছেলে কবীর মন্ডল জানায়,’আমার মা ওই যুবকটার সাথে রোছ ফোনে কথা বলত।বাবাকে জানাব বললেই মা আমাকে মেরে ফেলবে বলত ।’
পরিবারের লোকজনের হাতে ধরা পড়ার পড়
জেরায় সাদ্দাম শেখ স্বীকার করে তাঁর বাড়ি
মুর্শিদাবাদের কাশীপুর।আগে মণিরুলের পরিবারের কেউই সাদ্দামকে দেখেননি।মণিরুলের বাড়িতে বা এলাকায় তার আসা যাওয়াও ছিল না।
পরিবারের দাবি,ধরা পড়ার পরডলি বিবি ও তাঁর প্রেমিকা সাদ্দাম স্বীকার করে,’ফোনে তাদের আলাপ । পরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে । প্রায় দু’আড়াই বছর হল তারা প্রেম ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে রয়েছে । মঙ্গলবার রাতের অন্ধকারে প্রেমিকা ডলির সঙ্গে দেখা করতে এসে সে মণিরুলকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কষে ফেলে ।একই ভাবে ডলি বিবিও স্বীকার করে নেন,তাঁর সঙ্গে দেখা করতেই রাত ১২ টা নাগাদ মণিরুল তাঁদের বাড়িতে ঢুকেছিল । হাত পা বেঁধে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে মণিরুলকে খুনের চেষ্টার ঘটনার কথা ডলি ও তাঁর প্রেমিক দু’জনেই স্বীকার করেছে বলে পরিবার
সদস্যরা দাবি করেছেন ।।