এইদিন ওয়েবডেস্ক,কেতুগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),১৩ অক্টোবর : “সংসার সুন্দর হয় রমনীর গুণে” । কিন্তু সেই রমনীই যদি যেচে অশান্তি ডেকে আনেন তাহলে কিভাবে একটা সংসার ধ্বংস হয়ে যায়, তার প্রমান পাওয়া গেলো পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে । পারিবারিক অশান্তির জেরে স্টেরয়েড জাতীয় অতিরিক্ত ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন স্ত্রী৷ কিন্তু দ্রুত চিকিৎসা করানোয় তিনি প্রাণে বেঁচে যান । এই ঘটনার জের ধরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন অপমান করলে তার ঠিক কয়েক ঘন্টার মধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন স্বামী । মৃত যুবকের নাম সত্যজিৎ সাহা (২৮)। আত্মহত্যার আগে তিনি একটি সুইসাইড নোট লিখে গেছেন ৷ যাতে তিনি তার মৃত্যুর জন্য শ্বশুর কৃষ্ণগোপাল, শাশুড়ি শতরূপাদেবী এবং শ্যালক সুমনকে দায়ী করে গেছেন৷ অবশ্য তিনি এটাও জানিয়ে গেছেন যে স্ত্রীর প্রতি তাঁর কোনও অভিযোগ নেই । এই ঘটনায় মৃতের ভাই রাজু সাহা কেতুগ্রাম থানায় সুইসাইড নোটে উল্লিখিত ওই তিনজনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ অভিযুক্তদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে ।
জানা গেছে,সত্যজিৎ সাহা ব্যবসা করতেন । সেই সূত্রে একই থানা এলাকার কাঁটাডিহি গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণগোপাল করের মেয়ে মৌমিতার সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে৷ বছর সাতেক আগে তাদের বিয়ে হয় । দম্পতির ৫ বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। মৌমিতা স্নায়ূরোগী । তার চিকিৎসা চলছে ।
পরিবার সূত্রে খবর, দাম্পত্য কলহের সূত্রপাত মৌমিতার বাপের বাড়ির চাহিদা মেটানোকে কেন্দ্র করে । মেয়ে মৌমিতা স্নায়ূরোগী জেনেও কৃষ্ণগোপাল ও শতরূপাদেবীরা তাদের জামাইয়ের কাছে থেকে টাকা আনার জন্য তাকে চাপ দিত বলে অভিযোগ । মৌমিতাও স্বামীর স্বার্থের কথা না ভেবে তার বাপের বাড়িতে আর্থিক সাহায্য করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতেন৷ স্ত্রীর চাপে পড়ে সেই চাহিদা পূরণ করে আসতে হত সত্যজিৎকে । কিন্তু সত্যজিতের বাবা-মা তাদের বউমার এই প্রকার মানসিকতাকে মোটেই মেনে নিতে পারতেন না । এই কারনে মৌমিতার সঙ্গে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে বনিবনা হত না । তাই নিত্যনৈমিত্তিক অশান্তি থেকে বাঁচতে সত্যজিতের বাবা মিলন সাহা ছেলের জন্য গ্রামেই আলাদা একটি বাড়ি তৈরি করে দেন । নতুন বাড়ি নির্মাণের জন্য সত্যজিতেরও বাজারে বেশকিছু ধারদেনা হয়ে গিয়েছিল । এনিয়ে তিনি চাপেও ছিলেন । সেই দেনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তারই দেওয়া স্ত্রীর একটি সোনর চেন বন্ধক রাখার পরিকল্পনা নেন সত্যজিৎ। কিন্তু বাধ সাধেন মৌমিতা । স্বামী না বলে সব গহনা বিক্রি করে দেবে এই সন্দেহে তিনি সমস্ত গহনা সুমন করকে ডেকে এনে বাপেরবাড়িতে পাঠিয়ে দেন। আর এনিয়েই দম্পতির মধ্যে অশান্তি চুড়ান্ত আকার ধারন করে৷
জানা গেছে,সোমবার সকালে মৌমিতা স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে একসঙ্গে বেশ কিছু নার্ভের ওষুধ খেয়ে নেন । নার্ভের ওষুধে সাধারণত স্টেরয়েড থাকে৷ ওষুধ খাওয়ার পরে তার ঝিমুনি শুরু হলে তাকে প্রথমে কেতুগ্রামের রামজীবন হাসপাতালে এবং পরে বোলপুরের সিয়ান হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । যদিও চিকিৎসার পর ওইদিন বিকেলেই ছেড়ে দেওয়া হয় তাকে ৷ কিন্তু মৌমিতাকে তাঁর দাদা শ্বশুরবাড়ি যেতে না দিয়ে সঙ্গে করে নিজেদের বাড়ি নিয়ে যান । সত্যজিতও যান তাদের সঙ্গে । যদিও সোমবার রাতে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন । কিন্তু সত্যজিৎ যতক্ষণ শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন সেই সময়ে শ্বশুর, শাশুড়ি ও শ্যালক মিলে তাকে চুড়ান্ত অপমান করে বলে অভিযোগ ।
মৃতের ভাই রাজু সাহা বলেন,’দাদা অপমানিত হয়ে বাড়ি ফিরে এসে খুব কান্নাকাটি করে। আমরা জিজ্ঞেস করলে শ্বশুরবাড়িতে হওয়া অপমানের কথা সব খুলে বলে ৷ আজ সকালে অনেক বেলা পর্যন্ত দাদা ঘুম থেকে উঠছে না দেখে আমরা অনেক ডাকাডাকি করি । কিন্তু দাদা কোনো উত্তর না দেওয়ায় আমাদের সন্দেহ হয় । শেষ পর্যন্ত দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকলে দাদাকে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখা যায় ৷’ তিনি জানান,দাদাই বৌদির জন্য কিছু সোনার গহনা কিনে দেন। কিন্তু শ্বশুরবাড়ি সমস্ত গহনা আটকে রেখে দেওয়ায় দাদা প্রচন্ড মানসিক চাপে ছিল । কারন দাদা চেয়েছিল এই অসময়ে ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হতে । কিন্তু বউদি ও তার বাপের বাড়ি তা হতে দিল না বলে অভিযোগ তার । ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ ।।