এইদিন ওয়েবডেস্ক,তিরুচিরাপল্লী,১২ সেপ্টেম্বর :১৫০০ বছরের প্রাচীন মন্দিরসহ আস্ত হিন্দু গ্রামকে নিজের সম্পত্তি বলে দাবি করছে ওয়াকফ বোর্ড । চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুর তিরুচিরাপল্লী (Thiruchendurai) জেলায় কাবেরী নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত তিরুচেন্দুরাই (Thiruchendurai) গ্রামে । তামিলনাড়ু ওয়াকফ বোর্ড (Tamil Nadu Waqf Board) সমগ্র গ্রামটিকে তার সম্পত্তি বলে দাবি করায় মাথায় হাত পড়ে গেছে স্থানীয় গ্রামবাসীদের । ওয়াকফ বোর্ডের দাবি করা সম্পত্তির তালিকায় রয়েছে গ্রামের মানেন্দিয়াভল্লী সামেথা চন্দ্রশেখর স্বামী মন্দির (Manendiyavalli Sametha Chandrasekhara Swamy temple) এবং মন্দিরের একটি ‘পাদল পেত্র স্থলাম’( ‘paadal petra sthalam) । বিভিন্ন নথি এবং প্রমাণ থেকে জানা যায় যে এই মন্দিরটি প্রায় ১,৫০০ বছরের প্রাচী । তিরুচেনথুরাই গ্রামের ভিতরে এবং বাইরে উভয় জায়গায় মন্দিরের ৩৬৯ একর জমি রয়েছে । মন্দিরের জমিও ওয়াকফ বোর্ড দাবি করছে বলে মিডিয়া রিপোর্ট থেকে জানা গেছে ।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সর্ব প্রথম বিষয়টি জানতে পারেন ত্রিচির কাছে মল্লিকারুপুর গ্রামের বাসিন্দা রাজাগোপাল (Rajagopal) নামে জনৈক এক কৃষক । আন্দানাল্লুর ইউনিয়নের নিকটবর্তী থিরুচেনথুরাই গ্রামে তার কৃষি জমি রয়েছে । জরুরি প্রয়োজনে তিনি একই গ্রামের বাসিন্দা রাজরাজেশ্বরীকে (Rajarajeshwari)১ একর ২ সেন্ট জমি সাড়ে ৩ লক্ষ টাকায় বিক্রির করেন । এরপর চলতি মাসের ৫ তারিখে ত্রিচির (Trichy) জয়েন্ট থ্রি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়েছিলেন জমির মিউটেশনের জন্য । কিন্তু রেজিস্ট্রার মুরালি তাঁকে জানান, তিরুচেন্দুরাই গ্রামে যে কোনো জমির দলিল করতে আগে তাঁকে তামিলনাড়ু ওয়াকফ বোর্ড অফিস থেকে তাকে একটি ‘অনাপত্তি সনদ’ (No Objection Certificate) আনতে হবে । কারন ওয়াকফ বোর্ড দলিল সহ দপ্তরে একটি চিঠি পাঠিয়েছে জানিয়েছে যে পুরো গ্রামটি তাদের । চিঠিতে বলা হয়েছে, যে সমস্ত গ্রামবাসী জমির জন্য দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসবে আগে তাদের কাছ থেকে অনাপত্তির সনদ নিতে হবে । এমনকি রাজাগোপালকে ওয়াকফ বোর্ডের ২৫০ পৃষ্ঠার অনুলিপিও দেখিয়েছেন রেজিস্ট্রার । এদিকে রাজাগোপাল গ্রামে ফিরে ঘটনার কথা জানালে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় ।
রাজগোপাল জানিয়েছেন,যে জমিটি তিনি বিক্রি করছেন, সেটি তিনি ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে কিনেছিলেন । আর সেই জমির রেজিস্ট্রেশন এই অফিসেই হয়েছিল । তাঁর জমির সমস্ত দলিল ও কাগজপত্রও রয়েছে । অনান্য গ্রামবাসীরা জানিয়েছে তাঁরা বংশানুক্রমিকভাবে গ্রামে বসবাস করছেন । তাহলে কিভাবে তাঁদের সম্পত্তি তামিলনাড়ু ওয়াকফ বোর্ডের নামে রেজিস্ট্রি হয়ে গেল, তানিয়ে তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন । এমনকি দেড় হাজার বছরের প্রাচীন মন্দির ও মন্দিরের সমস্ত সম্পত্তি ওয়াকফ বোর্ডের নামে রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীরা হতবাক হয়ে গেছেন । গ্রামবাসীরা জেলাশাসকের দ্বারস্থ হলে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ।
জানা গেছে, শুধু তিরুচেন্দুরাই গ্রামই নয়, কাদিয়াকুরিচির গ্রাম, চেন্নাই এবং চেন্নাই সংলগ্ন অঞ্চলগুলিতেও একই সমস্যা রয়েছে । যেখানেও বিপুল পরিমান জায়গার দাবি করছে ওয়াকফ বোর্ড । ফলে তামিলনাড়ুর বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে ।।