🌼 “জগতের অধিকাংশ লোকের জীবনের উদ্দেশ্য — রাজনীতিক বা সামাজিক উন্নতির চেষ্টা, এক কথায় সংসার। তাহাদের নিকট ঈশ্বর ও ধর্মের প্রয়োজন সংসারের একটু সুখ বিধানের জন্য— তাহাদের নিকট ঈশ্বরের প্রয়োজন শুধু এইটুকু । তোমরা কি শোন নাই, গত দুইশত বৎসর যাবৎ কতকগুলি অজ্ঞ অথচ পণ্ডিতমন্য ব্যক্তির মখে ভারতীয় ধর্মের বিরুদ্ধে একমাত্র এই অভিযোগ শোনা যাইতেছে যে, এই ধর্ম দ্বারা সাংসারিক সুখ স্বাচ্ছন্দ্য লাভের সুবিধা হয় না,’কাঞ্চন’লাভ হয় না, উহা সমগ্র জাতিকে দস্যুতে পরিণত করে না, বলবানকে গরীবের ঘাড়ে পড়িয়া তাহার রক্তপান করিতে সাহায্য করে না ! সত্যই, আমাদের ধর্ম— এরূপ করে না । ইহাতে অন্যান্য জাতির সর্বস্ব লুণ্ঠন ও সর্বনাশ করিবার জন্য পদভরে ভূকম্পধারী সৈন্যপ্রেরণের ব্যবস্থা নাই। অতএব তাঁহারা বলেন এ ধর্মে আছে কি ? উহা চলতি কালে শস্য যোগাইয়া কাজ আদায় করিতে
জানে না, অথবা উহা দ্বারা পেশীর শক্তি বর্ধিত হয় না। তবে এ ধর্মে আছে কি? তাহারা স্বপ্নেও ভাবে না যে, ঐ যুক্তির দ্বারাই আমাদের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।
আমাদের ধর্মে সাংসারিক সুখ হয় না, সুতরাং আমাদের ধর্ম শ্রেষ্ঠ। আমাদের ধর্মই একমাত্র সত্যধর্ম, আমাদের ধর্ম এই দুই-তিন দিনের ক্ষুদ্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎকেই জীবনের চরম লক্ষ্য বলে না । এই স্বল্প বিস্তৃত ক্ষুদ্র পৃথিবীতেই আমাদের ধর্মের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ নহে । আমাদের ধর্ম এই জগতের সীমার বাহিরে- দূরে অতি দূরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ; সেই রাজ্য অতীন্দ্রীয় -সেখানে দেশ নেই,কাল নেই ; সংসারের কোলাহল হইতে দূরে, অতি দূরে -সেখানে আর সংসারের সুখ-দঃখ স্পর্শ করিতে পারে না, সমগ্র জগৎই সেই মহিমময় ভুমা আত্মা-রূপ মহাসমূদ্রে বিন্দু তুল্য হইয়া যায় ।”