শ্যামসুন্দর ঘোষ,বর্ধমান,২৪ জুন : পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সৈকত শহর দীঘায় নির্মিত জগন্নাথ মন্দির কতবার জগন্নাথ কালচারাল সেন্টারের উদ্বোধন হওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্ক শুরু হয়েছে । প্রথমে ‘দীঘা জগন্নাথ ধাম’ নিয়ে বিতর্ক হয় । পরে উড়িষ্যার পুরীর জগন্নাথ ধাম থেকে নিম কার্ড চুরি করার অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় চলে । মন্দির উদ্বোধনের পর দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদ নিয়ে এখন বিতর্ক চলছে । বিজেপির অভিযোগ যে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের মহাপ্রসাদের নামে যে গজা এবং প্যারার প্যাকেট রেশনের দোকান থেকে বিতরণ করা হচ্ছে সেগুলি মুসলিম মালিকানাধীন মিষ্টির দোকান থেকে তৈরি । সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ জেলার এক মিষ্টির দোকানের মালিকের একটি ভিডিও বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করার পর দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের ওই প্রসাদের নতুন নামকরণ করা হয়েছে ‘হালালা প্রসাদ’ ।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ দীঘার ‘প্রভু জগন্নাথের প্রসাদের’ নামে ‘থুতু মেশানো “হালাল প্রসাদ বিতরণ বন্ধের দাবি তুলেছে ।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কোলকাতা ক্ষেত্রের সম্পাদক অমিয় সরকার সোমবার(২৩/০৬/২০২৫) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই দাবি তুলেছেন । ওই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে,’দিঘার জগন্নাথ মন্দির থেকে “হালাল প্রসাদ” বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রায় লক্ষ্য লক্ষ্য হিন্দু পরিবারকে বিতরণ করা হচ্ছে প্রসাদের নামে থুতু মেশানো হালাল গজা ও পেড়া, যা তথাকথিত ‘প্রভু জগন্নাথের প্রসাদ’ হিসেবে বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে এই প্রসাদ প্রস্তুত ও সরবরাহের জন্য রাজ্য সরকার “মুসলিম মালিকানাধীন কিছু প্রতিষ্ঠান” কে নিয়োগ করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই দোকানগুলির মধ্যে রয়েছে:
টিপটপ মিষ্টান্ন ভান্ডার, ঠিকানা ইসলামপুর, রাণীনগর মালিক -“রাজু শেখ” । ভাই ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডার, ঠিকানা ইসলামপুর, রাণীনগর মালিক”সাবিরুল্লা ইসলাম”,সোনালী মিষ্টান্ন ভান্ডার, ঠিকানা পাহারপুর, রাণীনগর মালিক -“রজব আলী” । সবগুলিই মুর্শিদাবাদ জেলাতে অবস্থিত, যেখানে হিন্দুরা সংকটের মধ্যে রয়েছে।’
আরও লেখা হয়েছে,ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উদ্বেগ :
* পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ধর্মীয় আচার অনুসারে, প্রসাদ প্রস্তুতিতে কেবলমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অংশগ্রহণ অনুমোদিত।
* পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে আজও অ-হিন্দুদের প্রবেশ ও প্রসাদ প্রস্তুতি নিষিদ্ধ।
* তৃণমূল সরকারের এই থুতু মেশানো “হালাল প্রসাদ” বিতরণের এই সিদ্ধান্ত হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতির উপর সরাসরি আঘাত, এবং তা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ইঙ্গিত বহন করে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং দৃঢ়ভাবে দাবি করছে: অবিলম্বে বিতরণকৃত এই থুতু মেশানো “হালাল প্রসাদের” বিতরণ বন্ধ করা হোক। শুধুমাত্র হিন্দু মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যতে এই কাজে নিযুক্ত করা হোক। যারা ধর্মীয় পবিত্রতাকে রাজনৈতিক স্বার্থে বিকৃত করছে, সেইসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তানাহলে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করতে বাধ্য হবে, এবং আইনি লড়াইও শুরু করবে।’
‘হিন্দু সমাজের প্রতি আহ্বান’ জানানো হয়েছে,বিশ্ব হিন্দু পরিষদ সকল হিন্দু ভাই-বোনদের জাগ্রত হতে আহ্বান জানাচ্ছে। এই থুতু মেশানো “হালাল প্রসাদ” হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতির ওপর আঘাত এটি আমাদের বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের উপর ইসলামীকরণ করা হচ্ছে। হিন্দুরা প্রভু জগন্নাথের নামে এই থুতু মেশানো “হালাল প্রসাদ” কখনোই গ্রহণ করবে না ।
এর আগে শুভেন্দু অধিকারী , ‘মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরের “টিপটপ মিষ্টান্ন ভাণ্ডার” দোকানের মালিক শামসুজ্জামান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে “মহাপ্রভু জগন্নাথদেবের প্রসাদের” বরাত পাওয়ার পর, তা সরবরাহ করার বিষয়ে বক্তব্য রাখছেন’ শীর্ষক একটি ভিডিও পোস্ট করে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন । প্রশ্নোত্তর পর্বের ওই ভিডিও-এর কথোপকথনটি নিচে তুলে ধরা হলো :
দোকানদার : “আমার ভালো নাম শামসুজ্জামান, তবে সবাই আমাকে রাজু বলে ডাকে । আমার দোকানের নাম টিপটপ মিষ্টান্ন ভান্ডার ।
প্রশ্নকর্তা : আপনি কি হালাল মিষ্টি করেন ?
দোকানদার : অবশ্যই, হালাল খাবার আমাদের তৈরি হয় ।
প্রশ্নকর্তা : সরকার কি কোন অর্ডার দিয়েছে ?
এ প্রশ্নের উত্তরে দোকানদারকে বলতে শোনা যায়, ‘প্রসাদের সঙ্গে আমাদের এখান থেকে কিছু মিষ্টির প্যাকেট পাঠানো হয়েছে । সাধারণ মিষ্টি করে নয় । যেভাবে দিতে বলেছে আমরা সেভাবে পাঠাচ্ছি । তিনি জানান যে প্রতি প্যাকেটের মূল্য ১৫ টাকার কাছাকাছি।
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার গত ১৮ জুন এক্স হ্যান্ডেলে দীঘার মন্দিরের জন্য প্রসাদ সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়া চারটি দোকানের নাম উল্লেখ করা একটি তালিকা পোস্ট করেছিলেন ।
তালিকায় লেখা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের দিঘা জগন্নাথ ধামের জন্য প্রসাদ প্রস্তুত করার জন্য মুসলিম মিষ্টির দোকানগুলিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’ সেই তালিকার একেবারে উপরে লেখা আছে,উপরোক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে, রানীনগর-১ ডেভেলপমেন্ট ব্লকের আওতাধীন মিষ্টির দোকানের বিবরণ প্রেরণকারী নিম্নস্বাক্ষরকারী।’ তাতে সিরিয়াল নম্বর, ব্লকের নাম/ঠিকানা,মিষ্টির দোকানের নাম, যোগাযোগকারী,যোগাযোগ নম্বর এবং প্রতিদিন ডেলিভারি ক্ষমতা প্রভৃতি ছক দেওয়া হয়েছে । ছকের এক নম্বরে নাম রয়েছে দোকানের নাম ‘টিপটপ মিষ্টান্ন ভান্ডার’,ঠিকানা ইসলামপুর জিপি এবং দোকান মালিক রাজু সেখ । তালিকার দু’নম্বরে রয়েছে দোকানের নাম ভাই-ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডার,ঠিকানা ইসলামপুর জিপি এবং দোকান মালিকের নাম সাবিরুল্লা ইসলাম । তৃতীয় দোকানের নাম সোনালী মিষ্টান্ন ভান্ডার, ঠিকানা পাহাড়পুর জিপি এবং মালিকের নাম রজব আলী । চতুর্থ দোকানের নাম মিস্তিমুখ মিষ্টান্ন ভান্ডার, ঠিকানা ইসলামপুর জিপি এবং দোকান মালিক রামপ্রসাদ ।
সুকান্ত মজুমদার লিখেছিলেন,পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসনের কাছে জানতে চাইছি, এই বিজ্ঞপ্তিটি কি সত্য ? রানীনগর – ১ নং ব্লকে ‘দীঘা জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’ এর প্রসাদ (মিষ্টান্ন) রেশন ডিলারদের কাছে সরবরাহের জন্য যে বিজ্ঞপ্তি সামনে এসেছে তা নিয়ে এখন স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তির সত্যতা অবিলম্বে প্রশাসনকে সর্বসমক্ষে আনতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় বেশ কিছু মিষ্টির দোকানের মালিকদের নাম ও নম্বর দেওয়া হয়েছে, যেখানে সেই তালিকায় দেওয়া চারটি মিষ্টির দোকানের মধ্যে তিনটিরই মালিক মুসলিম!তাহলে কি মাননীয়ার ‘তোষণের’ ওবিসি তালিকার মতো এখানেও ঘুরপথে মুসলিমদের সংরক্ষণ নিশ্চিত করে দিতে এখন থেকে সরকারি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে? হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বিতরনের জন্য প্রসাদ তৈরির বরাতও মুসলিম ব্যবসায়ীদের দেওয়া হচ্ছে?’ যদিও মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এখনো পর্যন্ত সুকান্ত মজুমদারের এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেয়নি ।।

