জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,হুগলি,১৯ সেপ্টেম্বর :
বাঙালি মানেই জন্মগত কবি। পড়াশোনার ফাঁকে বাড়ির অভিভাবকদের লুকিয়ে দু’এক লাইন কবিতা বা ছড়া যখন তখন লিখে ফেলতে পারে । ‘সিরিয়াসলি’ লেখা শুরু হয় একটু পরে। তখন তার মধ্যে আর শিশুসুলভ চপলতা থাকেনা। মনের মধ্যে ইচ্ছে থাকে নিজের লেখা সৃষ্টি ছাপার অক্ষরে প্রকাশ পাক। ইন্টারনেট ও সমাজ মাধ্যমের সহজলভ্যতার জন্য সেই ইচ্ছা অনেকটাই পূরণ হয়। কিন্তু কেউ কেউ এখানেই থেমে থাকতে চায়না। যেমন থেমে থাকতে চায়নি হাওড়ার রাসমণি ব্যানার্জ্জী, পেশায় হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। বারো বছর বয়স থেকে কবিতা লিখতে শুরু করলেও নিজের সুপ্ত ইচ্ছে পূরণের জন্য গড়ে তোলেন ‘মনের কথা কলমে লেখা’ পত্রিকা গোষ্ঠী। পাশে পান একগুচ্ছ সাহিত্য প্রেমী মানুষকে এবং অবশেষে সবার সহযোগিতায় নিজের আশৈশব লালিত পত্রিকা প্রকাশের ইচ্ছে দিনের আলোর মুখ দেখে।
সংশ্লিষ্ট পত্রিকা গোষ্ঠীর উদ্যোগে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর হুগলীর হরিপালে ‘পরিমল একাডেমী’-তে অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের হাত ধরে ও দর্শক কবিদের করতালির মধ্যে দিয়ে প্রায় আশি জন কবির সৃষ্টি সমৃদ্ধ ‘উৎসর্গ পত্রিকা’-র মোড়ক আনুষ্ঠানিক ভাবে উন্মোচিত হয় । অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কবি সাংবাদিক সেখ সিরাজ এবং প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন বিশিষ্ট কবি, সংগীত ও বাচিক শিল্পী মন্দিরা মুখার্জি। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ অজিত কোলে, লেখিকা অমিয়া বন্দোপাধ্যায় , কবি তারাপদ ধল,কবি-শিক্ষক সৌরভ গুপ্ত, কবি গল্পকার স্বাধীন দাস সহ প্রায় চল্লিশ জন কবি যাদের লেখা স্হান পেয়েছে পত্রিকায় ।
এর আগে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি সেখ সিরাজ। তাকে সহযোগিতা করেন অন্যান্য উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী তথা লেখিকা সুলেখা চৌধুরী। বাচিক শিল্পী জ্যোৎস্না হালদারের মনোগ্রাহী আবৃত্তি পাঠ শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। এছাড়া হিমাংশু আদক, সুভাষ কর্মকার, সুস্মিতা দাস প্রমুখের স্বরচিত কবিতা পাঠ ও শিশু শিল্পী সমৃদ্ধ দাসের আবৃত্তি পাঠ আকর্ষণীয় ছিল। অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাহিত্য সংক্রান্ত আলোচনা অন্যমাত্রা এনে দেয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পরিমল চক্রবর্তী। বাহ্যিক আড়ম্বর নয়, অনুষ্ঠানের মূল সুর ছিল আন্তরিকতা। একদিকে নিজের ডাক্তারি পেশা এবং অন্যদিকে সংসার সামলে যেভাবে রাসমণি দেবী এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন তার জন্য প্রত্যেকেই তার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তার ডাকে সাড়া দিয়ে যেভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কবিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন তার জন্য প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে পত্রিকার সম্পাদিকা রাসমণি দেবী বলেন – জীবনে প্রথমবারের জন্য এতবড় একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। একটু তো মানসিক চাপ ছিল। কিন্তু যেভাবে প্রত্যেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাতে আমি কৃতজ্ঞ। অনেকেই পেছন থেকেও আমাকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন – আশাকরি আগামী দিনেও সবার সহযোগিতা পাবো ।’।