লক্ষ্মীশ্রী চৌধুরী,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),১৯ অক্টোবর : রাত পোহালেই দেবীকালীর আরাধনায় মেতে উঠবে গোটা বাংলা ৷ দুর্গোৎসবের পর এটাই হিন্দু বাঙালিদের সবচেয়ে বড় পূজানুষ্ঠান । রাজ্যের অনান্য জায়গার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাও দেবী কালীর আবাহনের জন্য প্রস্তুত । যেসমস্ত কালীপূজা ঘিরে জেলাবাসীর আগ্রহ তুঙ্গে থাকে তার মধ্যে অন্যতম হল পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বরের জয়রামপুর ও সিংহালী পূর্ব দাসপাড়ার দুই “বড়মা” র পূজো । মূলত দেবীর বিশালাকৃতি শ্রদ্ধালুদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু এই দুই শ্যামাপূজোর । প্রতিবারের মতই এবারেও দুই পূজোয় দেবীর আকৃতি গড়া হয়েছে ২৪ ফুট উচ্চতার । দেবী দন্ডায়মান বিশালাকৃতি দেবাদিদেব মহাদেবের উপর । সোমবার শত শত ভরি সোনারূপার গহনা দিয়ে সজ্জিত করে দেবীর আরাধনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দুই পূজা উদ্যোক্তারা ৷ বসেছে মেলা । দুই গ্রামে ফিরে এসেছে শারদোৎসবের আমেজ । শুধু মন্তেশ্বরের জয়রামপুর ও সিংহালী পূর্ব দাসপাড়ার বাসিন্দারাই নয়,এই দুই পূজো ঘিরে মেতে ওঠে আশপাশের গ্রামগুলিও । এছাড়া দূরদূরান্তের গ্রামগুলি থেকে অগনিত শ্রদ্ধালু দেবীদর্শনের জন্য ভিড় জমান দুই গ্রামে ।
মন্তেশ্বরের সিংহালী পূর্ব দাসপাড়ার কালীপূজো বয়সে নবীন হলেও জয়রামপুর নিউ আনন্দ সংঘের “বড়মা” র পূজো এবারে ১৫২ বছরে পড়ছে । এবারে নব নির্মিত মন্দিরে মায়ের আরাধনা হবে । পুজোর অন্যতম দুই উদ্যোক্তা দীনেশ কুণ্ডু ও বানুধর কুণ্ডু বলেন,’পুরোনো মন্দির ভেঙে দেবীর নতুন মন্দির তৈরি করা হচ্ছে। নতুন মন্দিরেই দেবীর পুজো হবে । মন্দিরের ভিতরেই প্রতিমা তৈরী করা হয়, যাতে পুজো ও নিরঞ্জনে কোনও অসুবিধা না হয়। সেই কারণে লোহার চাকার উপর দেবী প্রতিমা গড়া হয়েছে৷’ প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার সুদৃশ্য নির্মীয়মান মন্দিরে এবারে বড়মা” র পূজো করবেন জয়রামপুর গ্রামবাসী । এখানে দেবীকালীর আকৃতি গড়া হয়েছে ২৪ ফুট উচ্চতার । দেবী দন্ডায়মান আছেন ২১ ফুটের মহাদেব উপর । অনান্য বারের মতই এবারেও দেবীকে সজ্জিত করা হবে প্রায় ২০০ ভরিরও বেশী সোনা ও রূপোর গহনায় । উদ্যোক্তারা জানান,তাদের পূজোয় ভিন সম্প্রদায়ের মধ্যেও আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় । তাই এবারে তাদের পূজোর থিম করা হয়েছে “সম্প্রীতি” । জয়রামপুর নিউ আনন্দ সংঘের এই “সম্প্রীতি”র পূজোয় থাকছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । পুজোর দিন বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে । টানা ছয়দিন ধরে চলবে বড়মার পূজো ঘিরে উৎসব ।
জয়রামপুর নিউ আনন্দ সংঘের কালীমন্দিরের প্রায় পাঁচশো মিটার দূরে সিংহালী পূর্ব দাসপাড়ার বড়মার আকৃতি গড়া হয়েছে ২৪ ফুটের অধিক । দেবী ২৫ ফুটের অধিক আকৃতির মহাদেবের উপর দন্ডায়মান। তবে এক দশকের এই পূজোয় দেবীর কোনো স্থায়ী মন্দির নেই । ভবিষ্যতে মন্দির তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পূজো কমিটির সভাপতি পার্থ দাস ও সম্পাদক প্রসেন দাসরা । জয়রামপুরের মতই এখানেও ২০০ ভরির অধিক দেবীকে সোনা ও রূপোর গহনায় সাজিয়ে তোলা হচ্ছে । মায়ের পূজো এখানে টানা ৬-৭ দিন ধরে বস্ত্রবিতরণ, যাত্রা, অর্কেস্ট্রার মত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ।।

