দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৮ জুন : শৌচকর্ম সারতে গিয়ে অন্তর্বাসের পকেট থেকে পলিথিনে মোড়া টাকার বান্ডিল পায়খানার চেম্বারের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল । সেই টাকা উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন এক ভাই । কিন্তু তিনি বিষাক্ত গ্যাসে জ্ঞান হারিয়ে চেম্বারের নোংরার মধ্যে তলিয়ে যান । তাঁকে বাঁচাতে নেমেছিলেন আর এক ভাই । তিনিও একইভাবে তলিয়ে যান । পরে তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ । কেরালায় নির্মান শ্রমিকের কাজে গিয়ে এমনই মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার এরুয়ার গ্রামের বাসিন্দা আলকাস শেখ(৩২) ও আসরাফুল শেখ(২৯) ওরফে বচ্চন নামে ওই দুই ভাইয়ের । সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ মৃতদেহ দুটি উদ্ধারের পর মৃতদের পরিবারের কাছে খবর দেওয়া হয় । খবর পেতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবার পরিজন ও প্রতিবেশীরা ।
জানা গেছে,এরুয়ার গ্রামের বাসিন্দা মৃত আবদুল সাত্তারের চার ছেলের মধ্যে বড় রূপচাঁদ শেখ বাড়িতে থাকেন । বাকি তিন ছেলে সঞ্জীব শেখ, আলকাস ও আসরাফুল দীর্ঘদিন ধরে কেরলে রাজমিস্ত্রির কাজ করছেন । চার ভাইই বিবাহিত । আলকাস ও আসরাফুলের দুটি করে নাবালক সন্তান রয়েছে ৷ হতদরিদ্র পরিবার ।
জানা গেছে,কেরলের মালাপূরম জেলার ত্রিশূল এলাকায় অন্যান্য পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে ঘর ভাড়া করে থাকছিলেন সঞ্জীব, আলকাস ও আসরাফুল । সোমবার কাজ সেরে ঘরে ফেরার পর আলকাস ও আসরাফুল রান্নার কাজে চলে যান । অন্যদিকে সঞ্জীব যান শৌচকর্ম সারতে । তাঁর অন্তর্বাসের পকেটে ছিল পলিথিনে মোড়ানো ১৪৮০০ টাকা । সেই টাকা কোনো ভাবে পকেট থেকে পায়খানার প্যানে পড়ে যায় । তার উপরে জল ঢালা হলে টাকার বান্ডিলটি ঢুকে যায় চেম্বারের মধ্যে ।
সঞ্জীব ফোনে জানান,তিনি এসে ঘটনার কথা তাঁর দুই ভাইকে বলেন । তারপর তিন ভাই মিলে শাবল দিয়ে পায়খানার চেম্বারের ঢাকনা খুলে ফেলেন । তখন চেম্বারের ময়লার উপরেই ভাসছিল পলিথিনে মোড়া টাকার বান্ডিলটি । এই দেখে আলকাস একটি মইয়ের সাহায্যে নিচে নেমে টাকার বান্ডিলটি উদ্ধার করতে যায় । কিন্তু সে বান্ডিলটি হাতে নিয়ে মই দিয়ে ওঠার সময় হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে নিচে পড়ে যায় । তাকে উদ্ধার করতে নামে আসরাফুল । কিন্তু সেও জ্ঞান হারিয়ে পায়খানার চেম্বারের নোংরার মধ্যে তলিয়ে যায় । সঞ্জীব বলেন, ‘এরপর আমি নামার চেষ্টা করতে বাকি সঙ্গীরা আমায় আটকে দেয় ।’
জানা গেছে,ইতিমধ্যে তখন খবর চলে যায় সংশ্লিষ্ট থানায় । শেষে দমকলবাহিনীর সহায়তায় পুলিশ দুই ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায় । কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন । কেরালায় ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ দুটি গ্রামে আনার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী । পাশাপাশি দুই হতদরিদ্র পরিবারকে সর্বতোভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন ।।