“গীতাতে বেদ, উপনিষদ ও হিন্দুদর্শনের সার সত্যগুলি সংগৃহীত হইয়াছে এবং কি উপায়ে সেই সত্যগুলি উপলব্ধি করা যায় তাহার কৌশলও বিবৃত করা হইয়াছে। সুতরাং গীতোক্ত উপদেশগুলি কেবলমাত্র বুদ্ধির সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যাইতে পারে না। গীতোক্ত সত্যগুলি কেবলমাত্র ক্রিয়াবান সাধকই আপন অন্তরাত্মায় অনুভব করিতে সমর্থ।
আশ্চর্যের কথা এই যে, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সত্যগুলি নির্ণয় করিবার জন্য কি কঠোর অধ্যবসায়, কি কঠিন পরীক্ষা ও ভূয়োদর্শনের প্রয়োজন, কত আয়াস স্বীকার করিয়া বৈজ্ঞানিকগণ বিজ্ঞানাগারে বৎসরের পর বৎসর ধরিয়া ধৈর্যের সহিত বৈজ্ঞানিক সত্যগুলি পরীক্ষা করিয়া সিদ্ধান্তে উপনীত হন; আর এই অন্তর্জগতের জটিল বিষয়গুলি জানিবার পক্ষে কি বুদ্ধি ও অনুমানই যথেষ্ট বলিয়া বিবেচিত
হইতে পারে? গীতোক্ত সত্যগুলি অন্তর্জগতের বিষয় এবং এই সত্যের উপলব্ধি সাধনসাপেক্ষ। এই সাধনার অভাবে গীতার প্রচলিত ভাষ্যগুলি পরস্পর বিরোধী। গীতার ভাষ্যকারদিগের ব্যাখ্যা অপরোক্ষজ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত না হইয়া তাঁহাদের স্ব স্ব বুদ্ধির উপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এইরূপ অনৈক্যের সৃষ্টি হইয়াছে ।
গীতার প্রচলিত ব্যাখ্যাগুলি ভ্রমাত্মক আরও একটি কারণ, গীতা পাঠের পূর্বে যে সমুদয় বিজ্ঞানশাস্ত্র পাঠ করা প্রয়োজন সেই সমস্ত প্রাথমিক বিজ্ঞান শাস্ত্রগুলির অধ্যয়নের অভাব । সোপানের পর সোপান অতিক্রম করিয়া জ্ঞানলাভ করিতে হয় ।”
শ্রী শ্রী স্বামী শ্রীযুক্তেশ্বর গিরি প্রণীত “গীতার তত্ত্ব” থেকে সংগৃহীত ।