এইদিন ওয়েবডেস্ক,মুর্শিদাবাদ,০৫ অক্টোবর : গত মঙ্গলবার রাতে খুন হন মুর্শিদাবাদ জেলার সুতি থানার হাপানিয়া গ্রামের তৃণমূল নেতা প্রবীর দাস । অবশেষে ঘটনার তিনদিনের মাথায় এই খুনের ঘটনার কিনারা করল সুতি থানার । তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে যে মৃতের স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের জেরেই খুন হতে হয়েছে ওই তৃণমূল নেতাকে । বুধবার মৃতের স্ত্রী রাখি দাসকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ । কিন্তু তার বক্তব্যে একাধিক অসঙ্গতি থাকায় রাতের দিকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বলে জানা গেছে । পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে জাহাঙ্গীর আলম নামে নামে এক দুষ্কৃতীকেও । ধৃতদের আজ বৃহস্পতিবার জঙ্গিপুর আদালতে তুলে ১০ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানায় । বিচারক ধৃতদের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন । এর আগে মঙ্গলবার রাতে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ । সুতির তৃণমূল নেতার হত্যাকাণ্ডে এনিয়ে মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হল ।
জানা গেছে,হাপানিয়া গ্রামের বাসিন্দা তৃণমূল নেতা প্রবীর দাসের পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা রয়েছে । অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী রাখি দাস পঞ্চায়েতের বিগত বোর্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যা ছিলেন । প্রবীর দাস ও রাখিদেবীর তিন নাবালক সন্তান রয়েছে ।
ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাতে তিনি নিজের পোলট্রি ফার্মেই ছিলেন প্রবীরবাবু । সেই সময় তিন দুষ্কৃতী একটি মোটরসাইকেল চড়ে এসে ফার্মে ঢুকে প্রবীরবাবুকে লক্ষ্য করে পরপর তিন রাউন্ড গুলি চালায় । দুটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও একটি গুলি এসে সরাসরি প্রবীরবাবুর বুকে এসে লাগে । ঘটনাস্থলে তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়লে দুষ্কৃতকারীরা পালিয়ে যায় । এরপর খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে মহিশাইল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন ।
জানা গেছে,এই ঘটনায় মৃতের বাবা সুতি থানায় অজ্ঞাত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর রজু করেন । অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে ৩ জনকে গ্রেফতার করে । ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে যে মৃতের স্ত্রী রাখি দাস স্থানীয় বাসিন্দা সুমন দাস নামে এক যুবকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন । কিন্তু তাদের এই অবৈধ প্রণয়ের কথা জানতে পেরে যান প্রবীর দাস । এনিয়ে বাড়িতে প্রায়ই অশান্তি হত । সেই কারনে প্রেমের পথের কাঁটা স্বামীকে সরাতে প্রেমিককে সঙ্গে নিয়ে খুনের পরিকল্পনা করেন রাখি দাস ।
জানা গেছে,তদন্তে পুলিশ জানতে পারে যে প্রবীর বাবুকে খুনের জন্য মাস খানেক আগে সামশেরগঞ্জ থানার রতনপুরের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম নামে এক দুষ্কৃতীর কাছ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি আগ্নেয়াস্ত্র কিনেছিল সুমন দাস । এদিকে আজিনুর শেখ নামে এক দুষ্কৃতীও পুরনো শত্রুতার জেরে প্রবীরবাবুকে খুনের ছক কষছিল । সুদীপ দাস নামে এক বন্ধুর মাধ্যমে আজিনুরের সাথে পরিচয় হয় সুমনের । এরপর দু’জনে মিলিতভাবে প্রবীর দাসকে খুনের পরিকল্পনা করে ।
পুলিশ জানতে পারে, সুমন ৩০ হাজার টাকায় প্রবীরবাবুকে খুনের জন্য আজিনুরকে সুপারি দেয় । অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করে সে আজিনুরকে ১০ হাজার টাকা মিটিয়েও দেয় এবং বাকি টাকা খুনের পর দেওয়ার চুক্তি হয় । ঘটনার দিন সুমনকে ফোন করে স্বামীর অবস্থান জানিয়ে দেয় রাখি দাস । আর এই ফোনের কিছুক্ষণের মধ্যেই সুমন ও আজিনুর শেখসহ ৩ জন একটা মোটরসাইকেলে চড়ে প্রবীর দাসের পোল্ট্রি ফার্মে গিয়ে তাকে গুলি করে খুন করে।
পুলিশ জানিয়েছে,খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র ও মোটরসাইকেলের পাশাপাশি যে স্মার্টফোনে সুপারি কিলারকে অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছিল তা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে সুমনকে ওই আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহকারী জাহাঙ্গীর আলম নামে এক দুষ্কৃতীকেও । পুলিশ ৫ ধৃতকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ।।