প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১১ নভেম্বর : তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতিকে খুনের চক্রান্ত করছেন তৃণমূলেরই বিধায়ক ! এমনটা জেনে এই রাজ্যের তৃণমূলের নেতা ও কর্মীদের অবাক লাগাটাই স্বাভাবিক । তবে অবাক হননি পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম বিধানসভার তৃণমূলে নেতা ও কর্মীরা।কারণ এমনই অভিযোগ এনে শুক্রবার
দলের আউশগ্রাম বিধানসভার বিধায়ক অভেদানন্দ থান্ডারের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেছেন আউশগ্রাম-২ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সহ সভাপতি উজ্জ্বল পাল । আর এমন অভিযোগ দায়ের হতেই তোলপাড় পড়ে গিয়েছে জেলার রাজনৈতিক মহলে । বিধায়কের অবশ্য দাবি তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকজন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে আউশগ্রাম-২ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি উজ্জ্বল পাল শুক্রবার আউশগ্রাম থানায় বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। তার অভিযোগ,’একটি ভাইরাল ভিডিওতে বিধায়ককে যা বলতে শোনা যাচ্ছে সেটা জীবনহানির ঘটনার মতন একটা প্রত্যক্ষ্য হুমকি। অভেদানন্দ থান্দার পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে প্রাণে মেরে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন। এটি এমন একটি প্ররোচনামূলক বিবৃতি যাতে প্ররোচিত হয়ে রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের জীবনহানি ঘটতে পারে ।’ যদিও এই অভিযোগের প্রসঙ্গে বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার বলেন,’সামান্য ঠাট্টা ইয়ার্কিকে যেভাবে অন্য মাত্রা দেওয়া হচ্ছে তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমার বিরুদ্ধে কয়েকজন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছে। দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাও হয়েছে।’
আউশগ্রামের তৃণমূল নেতাদের কথায় জানা গিয়েছে,দলীয় কর্মসূচি অনুযায়ী গত রবিবার পূর্ব বর্ধমানের আউসগ্রামে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকা হয়েছিল।গুসকরা শহরের একটি লজে ওই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি বসেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক সহ দলের এক ঝাঁক নেতানেত্রী। তৃণমূল নেতৃত্বের সামনে টেবিলে নামানো ছিল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বুম। সাংবাদিকদের মধ্যে কেউ একজন আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের পাঞ্জাবির কলারে ল্যাপেল (কলার মাইক) লাগিয়ে দিয়ে ছিলেন।
অনুষ্ঠানে একেবার গা ঘেসে পাশাপাশি বসে ছিলেন বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার এবং আউসগ্রাম ২ নম্বর ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা আব্দুল লালন । সাংবাদিক বৈঠকের সময় তাঁরা দু’জনে তাঁদের বিপক্ষ গোষ্ঠী নিয়ে একান্তে কথাবার্তা বলছিলেন।এমনকি আমন্ত্রিত থাকা সত্ত্বেও সম্মেলনে দলের জেলা সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এবং বোলপুরের সাংসদ অসিত মালে না আসা নিয়েও তাঁরা কথা বলছিলেন। ওই সময়েই বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দার তৃণমূল নেতা আব্দুল লালন কে বলেন, ’রবি না এলে আমার বয়েই গেল। রবি এখানে ভোট করে দিয়ে যাবে নাকি?এরপর বিধায়ক দলের সাংসদ অসিত মাল সম্পর্কে
লালনকে বলেন,’তোমার বাড়িতে ওকে নেমন্তন্ন করে তরকারিতে লঙ্কার গুঁড়ো দিয়ে মেরে দেব।’ তৃণমূলের দুই জনপ্রতিনিধির এই গোটা কথোপকথন রেকর্ড হয়ে যায় ।পরে সোই কথোপকথনের অডিও ভিডিও ঝড়ের গতীতে ভাইরাল হয়ে যায় ।যাকে হাতিয়া করতে বিন্দু মাত্র দেরি করেন নি অভেদানন্দর বিরোধী গোষ্ঠী।
এদিন আউশগ্রাম-২ নম্বর ব্লক তৃণমূলের সহ সভাপতি উজ্জ্বল পাল আউশগ্রাম থানায় যে এফআইআর দায়ের করেছেন তাতে এলাকার বিধায়কের নাম থাকলেও সাংসদ অসিত মালের প্রসঙ্গ নেই। উজ্জ্বলবাবুর আশঙ্কা, তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে মেরে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে।আউশগ্রাম থানার পুলিশ এই অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে।এই অভিযোগ প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন,’উজ্জ্বল পাল আমার একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসাবে থানায় অভিযোগ করেছেন। তিনি হয়তো ভেবেছেন আমার কিছু ক্ষতি হতে পারে।” পাশাপাশি দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন,” আমি এটা চাইনি। দলের উর্ধ্বতন নেতৃত্ব যা ঠিক করে দেবে আমরা সেটাই মেনে নেব।’
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতো ছাড়েনি বিরোধীরা।
বিজেপির আউসগ্রাম বিধানসভার কনভেনার চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’তৃণমূলে গোষ্ঠী কোন্দল যে কি অবস্থায় গেছে তা মানুষজন সবই দেখছে।ওদের করা অভিযোগই প্রমাণ করে দিচ্ছে,
তৃণমূলের জেলা সভাপতিও তৃণমূলের বিধায়কের কাছে নিরাপদ নন। ওরা কাকে মারবে আর কাকে রাখবে সেটাই এখন বোঝা দায় ।’।