প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৫ জুলাই : হুমকি দিয়ে এক ব্যবসায়ীকে বাড়ি ছাড়া করা ও ব্যবসায়ীর বাড়ির লোকজনকে এক ঘরে করে রাখার অভিযোগ উঠলো তৃণমূল বিধায়কের বিরুদ্ধে।অভিযুক্ত বর্ধমান দক্ষিনের ওই বিধায়কের নাম খোকন দাস । ঘটনার বিহিত চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন বর্ধমানের পুলিশ লাইন এলাকা নিবাসও ব্যবসায়ী বিধান কুণ্ডু।তবে এখনও সুরাহা না মেলায় ব্যবসায়ী ও তাঁর পরিবার চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন । এই ঘটনা জানাজানি হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে বর্ধমানের রাজনৈতিক মহলে। যদিও বিধায়ক খোকন দাস শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে দাবি করেন,’বিধান কুণ্ডু একজন চিটিংবাজ।অন্য ব্যবসায়ীদের টাকা মেরে দিয়ে ওই ব্যক্তি এখন তাঁর বদনাম করতে ওই মিথ্যা অভিযোগ করছেন বলে বিদায়ক জানিয়েছেন।
ব্যবসায়ী বিধান কুণ্ডু জানিয়েছেন,তিন লোহার ছাঁট কেনা বেচা করেন। কাটোয়ার দুই ব্যবসায়ী মিঠুন শেখ ও তুফান শেখের কাছ থেকে তিনি লোহার ছাঁট কিনতেন। কিন্তু লোহার ছাঁটের মান খারাপ হওয়ায়, তিনি ওই দু’জনের সঙ্গে ব্যবসা আর না করার সিদ্ধান্ত নেন।আর তাতেই গোসা হয় ওই দুই ব্যবসায়ীর । তারা তাঁর সঙ্গে গণ্ডগোল অশান্তি শুরু করে বলে বিধানবাবুর দাবি করেন । বিধানবাবু এও জানান, তাঁর কাছে মিঠুন শেখের পাওনা ৫ লক্ষ ৩৪ হাজার টাকা। সেই টাকা তিনি দিতে চাইলে মিঠুণ ওই টাকা না নিয়ে চলে যায়। এরপর কাটোয়ার দুই ব্যবসায়ী মিঠুন ও তুফান কাটোয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান লখিন্দর মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করে।তার পর তাঁকে বর্ধমান পুরসভার ২২ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর তথা প্রমোটার নাড়ুগোপাল
ভকতের অফিসে ডেকে পাঠানো হয় ।বিধানবাবুর অভিযোগ,তাঁর বাবার সামনেই ওই অফিসে বর্ধমান দক্ষিণের তৃণমূল বিধায়ক তাঁকে হুমকি দেন। ওই দিন বিধায়ক হুঁশিয়ায়ি দিয়ে তাঁকে বলেন, ওদের ২২ লক্ষ টাকাই দিতে হবে। ও লখিন্দরের বন্ধু। জোর পূর্ব চারটে চেকে তাঁর সই করিয়ে নেওয়া হয় । ব্যাঙ্কের মাধ্যমে তিনি ওই চেক কার্যকরি না করার ব্যবস্থা করে আদালতের দ্বারস্থ হন । সেটা মেনে নিতে না পেরে অপর পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে পাল্টা চেক বাউন্সের মামলা করে বলে ব্যবসায়ী বিধান কুণ্ডু অভিযোগ করেছেন ৷
ব্যবসায়ী বিধান কুণ্ডু অভিযোগে আরো বলেন,
বিধায়কের হুমকি সত্ত্বেও তিনি মাথা নোয়ান নি বলে ,তাঁর পরিবারকে কার্যত একঘরে করে দেওয়া হয়েছে। তার আবাসনের বাসিন্দাদের বিধায়কের অনুগামীরা হুমকি দিয়েছে, তাঁদের সঙ্গে কথা না বলার জন্য ।এমনকি তাঁর ছেলের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে।পুলিশ লাইন বাজারে সমস্ত সবজি ও মুদি দোকানে মালিকদের বলে দেওয়া হয়েছে তাঁদের কোন জিনিস বিক্রি না করার জন্যে । ব্যবসায়ী এদিন বিধান কুণ্ডু এদিন জানান,তাঁর উপর হওয়া অবিচারের কথা তিনি প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে জানিয়েছেন । এর পরেও প্রশাসন যদি কোন সুরাসার ব্যবস্থা না করে তবে তাঁকে আত্মহত্যা করতে হবে ।
এদিন বিধায়ক খোকন দাস সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন । তিনি বলেন,’আমি কাউকে হুমকি দিইনি ।জনপ্রতিনিধি হিসাবে মধ্যস্থতা করার জন্যে বলেছিলাম ।’ পাল্টা অভিযোগে তিনি দাবি করেন, ‘বিধান কুণ্ডু একজন চিটিংবাজ । চেক বাউন্সের মামলা হওয়ার পরে ওই ব্যক্তি আদালতে অভিযোগ করেছে। আইনের পথে তার মোকাবিলা হবে ।’
অন্যদিকে কাটোয়া পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান লখিন্দর মণ্ডল জানিয়েছেন,’কাটোয়ার ওই ব্যবসায়ী তাঁর পড়শি। ব্যবসায়িক আর্থিক-সমস্যার কথা ওই পড়শি তাঁকে জানিয়েছিল। তিনি তাঁর পড়শিকে থানায় অভিযোগ জানানোর পাশপাশি বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ককেও ঘটনার কথা জানাতে বলেছিলেন। বাকি তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে লখিন্দর মণ্ডল জানিয়েছেন । এদিকে অনেক চেষ্টা করেও কাটোয়ার ব্যবসায়ীর সঙ্গে এদিন যোগাযোগ করা যায়নি। জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এইসব ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান নি। পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন পরিস্কার জানিয়ে দেন, তাঁদের কাছে এ সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি ।।