শতছিন্ন পোশাক । মাথার খোলা চুলে জটা পড়ে গেছে । নিজের মনে বিড়বিড় করে কিছু বলতে বলতে রাস্তা দিয়ে পা ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে হেটে যাচ্ছে এক পাগলি মহিলা । সেই ভিডিও বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে । মহিলা সম্পর্কে যা বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তা চমকে ওঠার মত । এক ধর্মান্তরিত মহিলার করুন পরিনতির কাহিনী ।
বলা হয়েছে,ওই মহিলার নাম জ্যোতি রানী । এক সময় তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত, শিক্ষিতা ও সংস্কৃতিমনা। দশম শ্রেণীতে পড়ার সময়ে খালিদ হাসান নামের এক যুবকের সাথে তার পরিচয় হয়। শুরু হয় বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম। জ্যোতির পরিবার আপত্তি জানালেও, কৈশোরের আবেগ ও অজ্ঞতার বশে সে পরিবারের কথা উপেক্ষা করে খালিদের প্রেমে অন্ধ হয়ে পড়ে। সময়ের ব্যবধানে খালিদ তার প্রেমিকাকে বোঝায়, “তুমি যদি আমাকে সত্যি ভালোবাসো, তাহলে আমার ধর্ম গ্রহণ করো।”
অবশেষে কলেজে পড়াকালীন সময়েই জ্যোতি ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করে খালিদ হাসানকে। নতুন নাম হয় তার “মোছাঃ খালেদা বেগম”। পরিবার, ধর্ম, সংস্কৃতি—সব কিছু ত্যাগ করে ভালোবাসার নামে এক নতুন জীবনে প্রবেশ করে সে। কিন্তু সেই ভালোবাসার গল্প বেশিদিন টেকেনি ।
বিয়ের খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়তেই দুই পরিবারের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয় । সামাজিক কলঙ্ক ও পারিবারিক প্রতিশোধের ভয়ে তারা শহরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে সংসার বাধে । খালিদ রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করে, আর জ্যোতি—অর্থাৎ খালেদা—পরিণত হয় এক গৃহবন্দি স্ত্রীর জীবনে। তারা দুজনেই স্বনামধন্য পরিবারের সদস্য ৷ কিছুদিন ধরে চলে দোষারোপ পালটা দোষারোপের পালা । কিন্তু প্রেমিক যুগল দু’জনেই প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আইনত তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি । খালিদের বাবা তাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দেয়৷ তবুও রাজমিস্ত্রীর কাজ করে ভালোই কাটছিল তাদের জীবন৷
এদিকে হঠাৎ একদিন দুর্ঘটনায় আহত হয় খালিদ। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার । সন্ধ্যার দিকে খবর আসে খালিদ হাসান মেডিকেলে ভর্তি।কোনা কিছু না ভেবে দ্রুত খালিদা বেগম হাসপাতালে চলে আসে।এসে খালিদের হাত ধরে বলে, “তুমার কিচ্ছু হবে না, আমি আছি।খালিদ হাসান বলে,আমি জানি আমার কি হতে চলেছে । তবে শোনো খালিদা,আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ি নয় । আমি মারা গেলে কাউকে দোষারুপ করবেনা।কারন নয় তলার ছাদ থেকে মাথ্যা ঘুরাইয়ে এমনি পরে গেছি আমি ।কারো বিন্দুমাত্র দোষ নেই।” হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় তার শেষ কথা ছিল,”তুমি আর কিছু ধরে রাখতে না পারলেও আমার ধর্মটাকে ধরে রেখো।” মৃত্যুর আগে খালিদার কাছে এই প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেয় খালিদ৷ খালিদা বেগম চিৎকার করে কেঁদে উঠে স্বামীর লাশ বুকে টেনে নেয়৷ কর্তব্যরত চিকিৎসকরা এগিয়ে এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
যাই হোক,এদিকে বৈধব্যের জীবন আরও কঠিন হয়ে যায় মোছাঃ খালেদা বেগমের জন্য । প্রেমিকের শেষ ইচ্ছাপূরণ করতে খালিদা কঠোরভাবে ইসলামের রীতিনীতি অনুসরণ করতে শুরু করে । এরপর খালিদার জীবন হয়ে যায় ভাবলেশহীন । তার বাপের বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করে৷ কিন্তু তারা খালিদাকে ফের জুঁথিরানী বানাতে পারেনি৷ অপর দিক থেকে খালিদের মৃত্যুর অপবাদ এসে পড়ে খালিদার ওপর । তারপর আস্তে আস্তে সে বদ্ধ উন্মাদ হয়ে যায় । আজ রাস্তায় রাস্তায় ওই মহিলাকে উদভ্রান্তের মত মত ঘুরতে দেখা যায় । লোকে তাকে “খেলনা পাগলী” বলে । এক সময়কার হাসিখুশি, কবিতা লেখা, গান গাওয়া মেয়েটি এখন রাস্তার পাশে বসে অস্পষ্টভাবে শুধু “খ… খ…” বলে বিড়বিড় করে। তার চোখে আর কোনো আলো নেই—রয়েছে শুধু হাহাকার আর এক অজানা শূন্যতা।
অনেকে মৃত্যুশজ্জায় খালিদ হাসানের এই শপথ করিয়ে নেওয়াকে লাভ জিহাদ আখ্যা দিয়েছেন৷ তাদের কথায়,তার আসল উদ্দেশ্যের চূড়ান্ত প্রকাশ—ভালোবাসা ছিল না, বরং জ্যোতিকে নিজের ধর্মে টেনে আনা ছিল মূল লক্ষ্য।
জ্যোতি রানী থেকে খালেদা পাগলীতে উত্তরণের এই কাহিনীর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের একটা ফেসবুকের নিউজ পেজে প্রশ্ন তোলা হয়েছে : ‘এই করুণ পরিণতি কি নিছক একটি দুর্ঘটনা? নাকি এটি এমন এক কর্মফল, যা নিজের ধর্ম, পরিবার ও সংস্কৃতি ত্যাগের ফল? যারা প্রেমের নামে ধর্মান্তর ঘটায়, তারা আদৌ কি ভালোবাসে? যদি খালিদ সত্যিই জ্যোতিকে ভালোবাসত, তাহলে কেন ধর্মান্তরই ছিল তার ভালোবাসার শর্ত? কেন জ্যোতির নাম, পরিচয় ও বিশ্বাস পরিবর্তনের প্রয়োজন হলো?’ ওই পেজে লেখা হয়েছে,’এই প্রশ্নগুলোর উত্তরই সমাজের গভীর সংকটকে প্রকাশ করে—ভালোবাসার মুখোশের আড়ালে চলছে এক সাংগঠনিক ধর্মীয় জিহাদ, যার লক্ষ্য সনাতনী নারীদের পরিচয়, বিশ্বাস ও সমাজ কাঠামোকে দুর্বল করা।’ তবে বাংলাদেশের কোন জেলার ঘটনা সেটা জানানো হয়নি ।।

