এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ জুন : নদীয়ার কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে প্রত্যাশা মতই জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস । তৃণমূলের আলিফা আহমেদ পেয়েছেন ১,০২,৭৫৯ ভোট। প্রদত্ত ভোটের ৫৫.১৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থান পাওয়া বিজেপির আশিস ঘোষ পেলেন ৫২,৭১০ ভোট। প্রদত্ত ভোটের ২৮.২৯ শতাংশ। কালীগঞ্জের ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’মুসলিমরা একজোট হয়ে ভোট দিচ্ছে । ধর্মীয়ভাবে ভোট দেওয়ার প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের থেকে মুসলিমদের মধ্যে বেশি ।’ তিনি এও জানান, কালীগঞ্জে ৭৩ শতাংশ হিন্দু বিজেপিকে ভোট দিয়েছে । কিন্তু তৃণমূলকে হারাতে গেলে যে গতিতে হিন্দুদের একত্রিত হওয়া দরকার সে জায়গায় এখনো যায়নি।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ৫৪ শতাংশ হিন্দু ভোট একত্রিত হয়েছিল৷ আর আজকের উপনির্বাচনে, ওরা এক লাখ ভোটে জিততো, ইলেকশন কমিশন অনেকগুলো পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ওরা পঞ্চাশের নিচে আটকে গেছে । ওর বাবা (তৃণমূল প্রার্থী) জিতেছিল ৪৭-এ । আর ও জিতেছে ৪৯-এ ।’ তিনি বলেন,’মুসলিমরা একজোট হয়ে ভোট দিচ্ছে । হিন্দুদের একত্রিত হওয়া শুরু হয়েছে, ধীরে ধীরে উন্নতি করছে, কিন্তু তৃণমূলকে হারাতে গেলে যে গতিতে একত্রিত হওয়া দরকার সে জায়গায় এখনো যায়নি ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’দলের থেকেও মুসলিম প্রার্থীদের ভোট দেওয়ার প্রবণতা মুসলিমদের মধ্যে বেশি । সাগর দিঘিতে তৃণমূল হেরে গিয়েছিল শুধু হিন্দু প্রার্থী দিয়েছিল বলে । মমতা ব্যানার্জি তার আত্মীয় দেবাশীষ ব্যানার্জিকে দাঁড় করিয়েছিল বলে বায়রন বিশ্বাসকে ভোট দিয়েছিল । একই কারণে বহরমপুরের ভোটারদের একটা বড় অংশের প্রিয়জন অধীর চৌধুরীকে তারা ভোট দেয়নি । যিনি বাংলা বলতে পারেন না, যার ক্রিয়া ক্ষেত্রে পরিচিতির বাইরে কোন পরিচিতি ছিল না, সেই ইউসুফ পাঠানকে ভোট দিয়েছে মুসলিমরা, যেহেতু তিনি একজন মুসলমান । এই কালীগঞ্জে তৃণমূল যদি হিন্দু প্রার্থী করত তাহলে হয়তো বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী কাবিল উদ্দিন শেখ জিতে যেত ।’
তিনি বলেন,’এই যে সম্পূর্ণভাবে ধর্মীয়ভাবে ভোট দেওয়া পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের থেকেও মুসলিমদের মধ্যে বেশি হচ্ছে । ২০১৯ সালে একটু শুরু হয়েছিল । ২০২১ সালে আরও বেড়েছে । তারপরে প্রত্যেকটা ভোটে এর প্রতিফলন ঘটেছে । আর এই একই প্রতিফলন আজকে কালীগঞ্জে দেখা গেলো । বিজেপি তো ৪২ শতাংশের মধ্যে ঘোরাঘুরি করেছে । বাকি ৫৮ শতাংশ জায়গায় বিজেপির প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। আমরা ঘোরাফেরা যা করেছি ৪২ শতাংশের মধ্যে করেছি ।’
কালীগঞ্জের ভোটের ফলাফলে ২০২৬ এর বিধানসভার নির্বাচনে সম্ভাবনা দেখছেন বিরোধী দলনেতা । শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’তবে কালিগঞ্জ থেকে যে সঙ্কেতটা উঠে এসেছে তা খুব ভালো সংকেত । এটা যদি ২০২৬ সালের বিধানসভার ভোটে বিশেষ করে ২২০ টা আসনে হিন্দুরা চাইলে এই ধরনের জোট বেঁধে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের জিতিয়ে দিতে পারেন । সেখানে মুসলিমরা ফ্যাক্টর হবে না । ৩০ শতাংশের মধ্যে মুসলিম ভোট আছে ১০২ টা আসনে তার মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে বিজেপি জিতেছে। ৩০ শতাংশের ওপরে মুসলিম আছে এমন আসনে ২০২১ সালে বিজেপিও জিতেছে, সংখ্যাটা কম হলেও । কিন্তু ৭৪ টা আসেনে কিছুই করা যাবে না ।’ বাকি ২২০ টা আসনে আজকের কালীগঞ্জের মতো যদি হিন্দুরা ভোট দিতে বের হন তাহলে চিত্র বদলে যেতে পারে বলে মনে করছেন তিনি ।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, কালীগঞ্জে হিন্দুরা যে কম ভোট দিতে যাবে সেটা আমরা আগেই জানতাম । এর তিনটা কারণ আছে। এক নম্বর হচ্ছে উপনির্বাচন তাই উৎসাহ নেই । আমাদের ৮-১০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক আমাদের বলেছিলেন আমরা যাব না সাধারণ নির্বাচনে যাব । এতে তো সরকার পরিবর্তন হবে না । আর আমরা গেলেও হয়তো মার্জিন বাড়বে কিন্তু আপনারা জিততে পারবেন না । যাদের আগে থেকে চিকিৎসা বা বেড়ানোর জন্য আগে থেকেই বুক ছিল, যেমন পালপাড়া বলে একটা জায়গা আছে, তারা সবাই চলে গেছে । দ্বিতীয়তঃ, বৃষ্টির জন্য আমাদের প্রচুর ভোটার ভোট দিতে যাননি । আমাদের সব বুথে সক্রিয় কর্মীও নেই । স্বাভাবিকভাবে ভোটারদের বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার যে কাজ দলীয় কর্মীরা করে আমাদের পক্ষ থেকে সেই কাজ অনেক জায়গায় হয়নি।’
তিনি বলেন,’কালিগঞ্জে মোট হিন্দু ভোটার এক লাখ দশ হাজার । হিন্দু ভোট পড়েছে ৬৬ শতাংশ । মোট ৭২ হাজার ৬০০ জন হিন্দু ভোট দিয়েছে । বিজেপি ভোট পেয়েছে ব্যালট নিয়ে ৫২৭১০ টি । শতাংশেত বিচারে এটি হলো ৭২.৬০ । প্রায় ৭৩ শতাংশ ধরে নেওয়া যায় । যে ১০৯ টা হিন্দু বহুল বুথের মধ্যে পলাশী দুই এলাকার ১২ নম্বর বুথে মোট ভোটার ৫৯২ । ভোট পড়েছে ৩৯১ । আমরা পেয়েছি ১৩২ । এই একটা বুথে তৃণমূল লিড পেয়েছে । বাকি ১০৮ টা বুথে বিজেপি লিড পেয়েছে ।
ফরিদপুরের ৬৮০ টা ভোটার। ভোট পড়েছে ৪৮১ টা । বিজেপি পেয়েছে ৩১৪ টা । ফরিদপুরের ৩০৮ নম্বর বুথে মোট ভোটার ১০৫২ । ভোট পড়েছে ৭৫৫ । তারমধ্যে বিজেপি ৪৮৪ । বড় চাঁদ নগরের ৩৯ নম্বর বুথে মোট ভোটার ১২৬৪ । ভোট পড়েছে ৯৪৮ । তার মধ্যে আমরা পেয়েছি ৬৮১। তার মানে কালীগঞ্জে ৭৩ শতাংশ হিন্দু ভোট একত্রিত হয়েছে । বাইরে থাকা পরিযায়ী শ্রমিক, ভোটের দিন বুথে বেশি কর্মী বের করা, প্রভৃতি করে যদি আমরা ভোট দানের হারকে যদি আমরা ৮৫% নিয়ে যেতে পারতাম তাহলে আমাদের ভোট আরো অনেকটা বাড়তো ।’
তিনি বলেন,’পাশাপাশি মুসলিম অধ্যুষিত বুথগুলিতে বিজেপি শূন্য অথবা একটা দুটো ভোট পেয়েছে এমন অসংখ্য নজির রয়েছে । আসলে মুসলমানদের মাথার মধ্যে একটা কথা গেঁথে আছে সেটা হলো বিজেপি হিন্দুদের পার্টি । মোদিজির রেশন, কোভিডের ইনজেকশন, আবাস, জল, শৌচালয় এগুলো সবই নেব এগুলো আমার অধিকার আমিও নাগরিক । কিন্তু যখন ভোট আসবে তখন মোদিজীর ব্যানার,পোস্টার, বিজেপির পতাকা মিটিং মিছিল আমাদের এলাকায় চলবে না ।’ তিনি বলেন,’তাই কালীগঞ্জের হিন্দুদেরকে আমরা এই বলে ধন্যবাদ জানাবো যে সম্ভাব্য ফলাফল জেনেও তারা আমাদের ৭৩ শতাংশ ভোট দিয়েছেন । ৭৩ শতাংশ হিন্দু গজা প্যারাকে বর্জন করেছে ।’।