দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),০৭ ফেব্রুয়ারী : রাতের অন্ধকারে দোকানের গেটে, গৃহস্থবাড়ির দরজায় অকারন ভাঙচুর চালাচ্ছিল একদল মদ্যপ যুবক । থাকতে না পেরে প্রতিবাদ করেছিলেন পুরসভার এক অস্থায়ী কর্মী । আর সেই অপরাধে তাঁর উপর হামলা চালালো উন্মত্ত যুবকের ওই দলটি । রবিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া শহরে বেলতলা পাড়ায় । প্রহৃত যুবক পার্থপ্রতিম ঘোষ(৩৩)কে গুরুতর জখম অবস্থায় প্রথমে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় । কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়া রাতেই তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় । সোমবার ভোরে তাঁকে বর্ধমানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেছে পরিবারের লোকজন । বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই প্রতিবাদী যুবক । এদিকে নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে কাটোয়া থানার পুলিশ ।
জানা গেছে,কাটোয়ার নন্দদুলাল বসু রোড এলাকার বাসিন্দা পার্থপ্রতিম ঘোষ কাটোয়া পুরসভার অস্থায়ী কর্মী । রবিবার রাতে তিনি ও তাঁর দুই বন্ধু অপরূপ চট্টোপাধ্যায় ও সঞ্জয় সিংয়ের সঙ্গে পাড়ার সরস্বতী পুজো মণ্ডপের সামনে দাড়ি গল্পগুজব করছিলেন । অপরূপবাবু জানিয়েছেন, রাত্রি তখন সোয়া বারোটা হবে । হঠাৎ সেখানে ১০-১২ জন যুবকের একটি দলের আবির্ভাব হয় । তারা প্রত্যেকেই মদ্যপ ছিল । হাতে ছিল লাঠিসোঁটা । নিজেদের মধ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল । আর হাতের লাঠি ও রাস্তা থেকে ইঁট পাথর কুড়িয়ে আশপাশের দোকান ঘরের গেট ও গৃহস্থের বাড়ির গেটের তালাতে আঘাত করে ভাঙচুর চালাচ্ছিল । প্রতিবাদ করলে দলটি তাঁদের দিকে তেড়ে আসে ।
জানা গেছে,মদ্যপ যুবকের ওই দলটি পার্থপ্রতিম ঘোষ ও তাঁর দুই বন্ধুকে আটকে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করতে শুরু করে । তারই মাঝে অপরূপ চট্টোপাধ্যায় ও সঞ্জয় সিং কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে নিরাপদ জায়গায় লুকিয়ে পড়েন । তখন পার্থপ্রতিমবাবুকে একা পেয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে মদ্যপ যুবকের দলটি । সেই সময় এক যুবক প্যান্ডেলে সাজানো একটি ফুলের টব তুলে পার্থপ্রতিমবাবুর মাথায় সজোরে আঘাত করে । রক্তাক্ত অবস্থায় তিনি ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন । তিনি মারা গেছেন মনে করে পালিয়ে যায় ওই দলটি । এদিকে কিছুটা পাশেই আড়ালে থেকে সব কিছু লক্ষ্য করছিলেন আক্রান্ত যুবকের দুই বন্ধু । কিন্তু ভয়ে তাঁরা কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলেন না । হামলাকারী দলটি পালাতেই তাঁরা বেড়িয়ে এসে লোকজন ডাকাডাকি করে পার্থপ্রতিমবাবুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান ।
জানা গেছে,ঘটনার কিছু পরেই আক্রান্ত যুবকের বন্ধু অপরূপ চট্টোপাধ্যায় ১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর দায়ের করেন । অভিযোগ পেতেই রাতে ৮ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ । পুলিশ জানিয়েছে ধৃতদের নাম, ছোট্ট চন্দ্র, বাবু রায়, হুলু পণ্ডিত, সোমনাথ থাণ্ডার, মানিক পণ্ডিত,পাপু মাজি, কৌশিক ভট্টাচার্য ও মদন পাল । কৌশিক ভট্টাচার্য বাদে ধৃতদের প্রত্যেকের বাড়ি কাটোয়া শহর এলাকায় । কৌশিকের মন্তেশ্বর থানা এলাকার বাসিন্দা । সে অভিযুক্ত বাবু রায়ের ভাগনা । সোমবার ধৃতদের কাটোয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে সকলকে ১৯ ফ্রেবুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক ।।