প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১০ জুলাই : মিড-ডে মিলের খাবারের মান নিয়ে মাঝে মধ্যেই অশান্ত হয়ে ওঠে এই বঙ্গের কোন না কোন স্কুল। তারই মধ্যে যেন ব্যতিক্রম পূর্ব বর্ধমানের রায়নার মাদানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়।এই স্কুলের পড়ুয়াদের পুষ্টি লাভের জন্যে মিড-ডে মিলের খাবারের সাথে দেওয়া হয় স্কুল ঘরের ছাদে চাষ করা ’ড্রাগন ফল“। পুষ্টি গুনে ভরপুর “ড্রাগন ফল’ মিড-ডে মিলের পাতে পড়ায় বেজায় খুশি এই বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সন্তুষ্ট অভিভাবকরাও।তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রসংসাও করেছেন।একই কারণে জেলা স্কুল শিক্ষা দফতরও তারিফ করছে স্কুল কর্তৃপক্ষের ।
রায়না-১ ব্লকের শ্যামসুন্দর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত প্রত্যন্ত গ্রাম মাদানগর। এই গ্রামেই রয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।যেটি দেশে স্বাধীনতা লাভের অনেক আগে,১৯২৩ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে । বিদ্যালয়ের ১৮৯ জন পড়ুয়াকে পাঠ দানের জন্যে এই বিদ্যালয়ে রয়েছেন ৫ জন শিক্ষক। বিদ্যালয়ের ছয়টি শ্রেণীকক্ষ, অফিস ঘর সবই পাকা।শ্রেণীকক্ষ ও অফিস ঘরের মাথার উপর রয়েছে ঢালাই ছাদা।শুধু বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিল রান্নার ঘরেটির চালা অ্যাসবেস্টসের।বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের বেশিরভাগ অবিভাবকই কৃষিজীবী। তাঁরা মূলত ধান, আলু ও সবজির চাষ’ই করে থাকেন।
তবে এমন এক কৃষি প্রধান গ্রামের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জমিতে নয় ,বরং তাঁদের পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয় গৃহের ছাদে ’ড্রাগন ফলের’ চাষ করছেন।প্রায় দুই-আড়াই বছর হল সেখানে চলছে ’ড্রাগন ফলের’ চাষ।২০২৩ সাল থেকে ড্রাগন গাছে মূল্যবান ফলও ভালো ফলছে।পাশাপাশি বিদ্যালয় ভবনের লাগোয়া ফাঁকা জায়গার মাটিতে মিড-ডে মিলের জন্যে কিছু সবজির চাষও হচ্ছে।সেই সবজি দিয়ে তৈরি মিড- ডে মিলের খাবারের সাথে পুষ্টি দায়ক ড্রাগন ফল খেতে পেয়ে পড়ুয়ারাও আহ্লাদিত।আর স্কুলের এমন চাষাবাদ এলাকার কৃষকদেরকও যেন আবাক লাগিয়ে দেয়েছে।
শিক্ষকদের বিদ্যালয় ভবনের ছাদে ’ড্রাগন ফলের’ চাষ শুরু করার ভাবনাটাও যথেষ্ট অনবদ্য। এই প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কল্যাণময় দাঁ বলেন, “ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ অন্যান্য ফলের থেকে অনেক বেশি। এই ফলে প্রচুর ’ভিটামিন সি’ আছে।এছাড়াও আছে প্রচুর ম্যাগনেশিয়াম,ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড, বিটা- ক্যারোটিন ও লাইকোপেনের মতো অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। আরও আছে ফাইবার ও আয়রন, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।ক্যালরি কম থাকায় এই ফল খেলে ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনাও থাকে না“।পুষ্টির জন্যে মিড-ডে মিলে এমন ’ড্রাগন ফল’ বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের খাওয়ানোর ভাবনা জাগে।এছাড়াও ড্রাগন ফলের চাষকরে বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পাওয়া গেলে সেটায় স্কুলও আর্থিক ভাবে লাভবান হবে।এইসব বিষয় গুলিয় মাথায় রেখেই বিদ্যালয় ভবনের ছাদে ড্রাগন ফল চাষের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেইমত বিশেষ ব্যস্থায় শতাধীক ড্রাগন ফলের গাছ বিদ্যালের ছাদে লাগানো হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক পীযূষ দাঁ এর কথা অনুযায়ী, ড্রাগন ফলের চাষ করার জন্যে তাঁরা কোথাও কোন প্রশিক্ষণ নেন নি।তাঁরা ইউটিউব এ (YOUTUBE ) ড্রাগন ফলের চাষ পদ্ধতি দেখে ও জেনে বিদ্যালয়ের ছাদে চাষ শুরু করেন। বিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং সকল শিক্ষকরা মিলে এখন চাষের গোটা বিষয়টি তদারকি করছেন । ড্রাগন ফলও ভালো ফলছে।আপাতত বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের পাতে খাদ্যগুনে সম্বৃদ্ধ ড্রাগন ফল দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ছাদে চাষ করা ড্রাগন ফল বিক্রি করে আয়ের বিষয়টি নিয়ে এখনও কোন চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নি । বিষয়টি ভাবনা চিন্তার মধ্যে রয়েছে বলে শিক্ষক পীযূষ দাঁ জানিয়েছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা সংসদের জেলার চেয়ারম্যান মধুসৃদন ভট্টাচার্য্য বলেন,’সত্যি এটা একটা অভিনব উদ্যোগ । ড্রাগন ফল পুষ্টি গুনে সম্বৃদ্ধ বলেই শুনেছি। রায়নার মাদানগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়াদের এমন কর্মকাণ্ডের তারিফ করতেই হয় ।জেলার অন্য প্রাথমিক স্কুল গুলির কাছেও এটা একটা নিদর্শন বলে চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য্য মন্তব্য করেন ।’।