জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,দক্ষিণ ২৪ পরগণা,২৩ এপ্রিল : গত কয়েক বছর ধরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা দেখে এই বছর মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হতে চলেছে সেই ইঙ্গিতটা সুস্পষ্ট ছিল। গত কয়েকদিন ধরে সকালটা শুরু হচ্ছে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের হাত ধরে। বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে তাপমাত্রাও বেড়ে চলেছে। বৃদ্ধির হার দেখে মনে হচ্ছে প্রকৃতির রাজ্যেও টি-২০ ক্রিকেট খেলা চলছে। বাঁকুড়া শহর বিশ্বের ষষ্ঠ উষ্ণতম শহর হিসাবে চিহ্নিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সমাজ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে বীরভূমের নলহাটির তাপমাত্রা আরও বেশি। ওদিকে পশ্চিম বর্ধমানের পানাগড়ের তাপমাত্রা অর্ধ শতকের দোরগোড়ায় অপেক্ষা করছে। হাততালি! যদিও এগুলো গর্বের নয়।
একদল মানুষের সীমাহীন লোভ আজ আমাদের সাধের পৃথিবীর পরিস্থিতি এই জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশের সর্বত্র বৃক্ষচ্ছেদন চলছে। উন্নয়ন বা রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য বৃক্ষচ্ছেদনের অনুমতি দেওয়া হলেও বৃক্ষরোপণের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছেনা। মনে হচ্ছে এখানেও অর্থের কাছে আত্মসমর্পণ! কেউ বুঝতে চাইছেনা অর্থ সাময়িক সুখ দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদি নয়।
ক্রমবর্ধমান উষ্ণতার জন্য মানুষের জীবন তো দুর্বিষহ হচ্ছেই, পাশাপাশি অস্তিত্ব বিলুপ্ত হচ্ছে পশুপাখিদের। ইতিমধ্যেই একাধিক প্রজাতির পাখির অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছেনা। ওদিকে মেরুপ্রদেশের বরফ গলতে শুরু করেছে। নষ্ট হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্য। এটা চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই আজকের এই আধুনিক সভ্যতা জলের তলায় তলিয়ে যেতে খুব বেশি সময় নেবে না। ঠান্ডা ঘরে বসে বৃক্ষরোপণের পরামর্শ দেওয়া হলেও বৃক্ষরোপণ করতে তাদের তৎপরতা দেখা যাচ্ছেনা।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ২২ শে এপ্রিল বিশ্ব ‘ধরিত্রী দিবস’-এ বিদ্যালয় শিক্ষার সিলেবাসে বৃক্ষরোপণ বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিলেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাটানগর নঙ্গী বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শম্পা মহান্তি। তার প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে নির্দিষ্ট কোনো ‘ডে অবজাভেশন’-এ আবদ্ধ না থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নিয়ে গড়ে উঠুক একটি টিম। এদের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা নিজ নিজ বিদ্যালয় চত্ত্বরে, পার্শ্ববর্তী এলাকার ফাঁকা জায়গায় এবং নিজেদের বাড়িতে একটি করে বৃক্ষরোপণ করবে। এখানেই কাজ শেষ হবেনা, সপ্তাহে অন্তত ১ দিন করে সেই গাছগুলি তারা পরিচর্যা করবে। নিছক ছবি তোলার জন্য নয় সমস্ত প্রক্রিয়াটি অবশ্যই বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় শুরু করতে হবে। চারাগাছের জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির কাছে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। উৎসাহ দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি বৃক্ষ যে বিদ্যালয় রোপণ করবে তাকে ব্লক, জেলা ও রাজ্যভিত্তিক পুরস্কৃত করা যেতে পারে।
শিক্ষিকা আরও প্রস্তাব দিয়েছেন, প্রজেক্টের পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি থেকে বৃক্ষরোপণের উপর নম্বর দেওয়া হোক। বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও একটি নির্দিষ্ট দিনে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেরা বৃক্ষরোপণকারী শ্রেণির জন্য উপহার রাখা যেতে পারে। তাহলে ছাত্রছাত্রীদের হাত ধরে পৃথিবী আবার তাপমুক্ত হতে পারে। পাশাপাশি তার বক্তব্য,শুধুমাত্র কিছু পোস্ট, লেখালেখি বা গাছপালার ছবি দিয়ে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হবেনা। চরম বিপদ দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। মাথায় রাখতে হবে প্রকৃতিরও সহ্যের একটা সীমা আছে।
কথা হচ্ছিল হলদিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘জন গণ মন’-র কর্ণধার অরিন্দম দাসের সঙ্গে। তিনি বললেন – খুবই ভাল প্রস্তাব। এটি সমগ্র রাজ্যজুড়ে কার্যকর করা হলে এবং প্রতিটি শ্রেণি যদি ১০ টি করে বৃক্ষরোপণ করে অন্তত ৩-৪ লক্ষাধিক বৃক্ষ রোপণ করা যেতে পারে। তার আশা এইসব ছাত্রছাত্রীদের হাত ধরেই পৃথিবী আবার সবুজ হবে।
প্রসঙ্গত তার সংস্থা এবছর বর্ষাকালে সমগ্র রাজ্যজুড়ে দশ লক্ষ বৃক্ষরোপণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে তাদের পাশে থাকার জন্য ইতিমধ্যে তারা বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে আবেদন করেছে।।