এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাবুল,০৪ এপ্রিল : গান গাওয়ার অপরাধে প্রখ্যাত আফগান শিল্পিকে গ্রেফতার করে অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে তালিবান জঙ্গিরা । হতভাগ্য ওই শিল্পির নাম মুসা শাহিন । আফগানিস্তানের পাঞ্জশির প্রদেশের বাসিন্দা মুসা শাহিন দেশের সুপরিচিত গায়কদের মধ্যে একজন । তালেবান শাসনের আগে তিনি কিছু টেলিভিশন চ্যানেলে সঙ্গীত অনুষ্ঠান ও স্থানীয় অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করতেন । বেশ কিছুদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন ওই শিল্পি । এদিকে কারাগারে অমানবিক অত্যাচার ও ঠিকমত খাবার না পাওয়ায় তার শারিরীক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হচ্ছে । পরিবার জানিয়েছে,মুসা শাহিনের মাথা ও মুখ ফুলে গেছে। ফলে তার স্বাস্থ্য নিয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে পরিবার । এদিকে কেন ওই শিল্পিকে গ্রেফতার করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে তা নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট কারন জানায়নি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তালিবান । শিল্পির পরিবার তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করলেও তালিবানরা এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া দেয়নি ।
শাহিনের বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী, একটি চার বছরের মেয়ে এবং সতীশ ও সৌরশ নামে দুই নাবালক ছেলে । ২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানে আসার পর পরিবার নিয়ে দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেন ৩০ বর্ষীয় মুসা শাহিন । কিন্তু তিনি ইসলাম কালায় আফগান সীমান্ত পেরিয়ে ইরানে যাওয়ার সময় তালিবানের হাতে ধরা পড়ে যান । তাকে তালিবানরা গ্রেপ্তার করে । প্রায় এক মাস তিনি কারাগারে কাটান এবং তারপর মুক্তি পান । এরপর তালেবানরা গত বছর তার পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলে দেয় । ফলে তিনি আর দেশত্যাগ করতে পারেননি ।
মুসা শাহিনের ভাই আব্দুল ওয়াহাব অসীম বলেন, ‘দ্বিতীয়বারের জন্য আমার দাদাকে বিনা অপরাধের গ্রেফতার করা হয়েছে । যেদিন দাদাকে গ্রেফতার করা হয় ওইদিন ৯ টা নাগাদ কাবুল শহরের কোটাল খায়েরখানে এলাকায় আমাদের বাসভবন ঘিরে ফেলে ১৬ জন তালিবান যোদ্ধা । মা, স্ত্রী ও তিন সন্তানের সামনে দাদাকে তারা মারধর ও অপমান করেতে করতে তুলে নিয়ে যায় । এমনভাবে দাদাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যেন তিনি একজন সন্ত্রাসবাদী । কিন্তু দাদাকে কেন গ্রেফতার করা হল তা আজও আমাদের কাছে অজানা । এদিকে দাদাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর আমাদের মায়ের স্নায়বিক সমস্যা দেখা দিয়েছে । ছোট ছোট ভাইপো ভাইঝিরা প্রতি মুহুর্তে বাবার খোঁজ করছে ।’
জানা গেছে,বাড়ি থেকে গ্রেফতার করার পর মুসা শাহিনকে প্রথমে পাঞ্জশির প্রদেশের কারাগারে রাখা হয় । পরে তাকে কাবুলের কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল । বর্তমানে গোয়েন্দা সদর দফতরে বন্দী রয়েছে ওই সঙ্গীত শিল্পি । আব্দুল ওয়াহাব অসীম বলেন,’শাহীনকে গ্রেপ্তারের কয়েকদিন পর, তালিবানরা আমাদের পাঞ্জশির প্রদেশে যেতে বলেছিল । আমা সেখানে গিয়েছিলাম । দাদা আগে অনেক থেকেই ‘কিডনি’র রোগে ভুগছিলেন এবং কারাগারে মশলাদার খাবার খেয়ে মাথা ও মুখ এখন ফুলে গেছে । তখনই দাদাকে খুব অসুস্থ লাগছিল । জানিনা দাদা আর বেঁচে আছে কিনা ।’
উল্লেখ্য, তালিবান ক্ষমতায় ফিরে আসার পর দেশে গান গাওয়া নিষিদ্ধ করে দিয়েছে । বর্তমানে দেশের কোথাও আর গান শোনা যায় না । ইতিমধ্যে বিপুল সংখ্যক গায়ক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন । এখনো যারা আফগানিস্তানের রয়েছেন তারা চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যে কাটাচ্ছেন । তালিবান আসার পর বিগত দুই বছরে শিল্পী ও গায়কদের প্রতি তাদের আচরণ সবসময়ই অপমানজনক। ২০২১ সালে আফগানিস্তান দখলের পরেই তালিবান সদস্যরা পাকতিয়া প্রদেশে একজন স্থানীয় শিল্পীকে মারধর ও অপমান করে । তার বাদ্যযন্ত্র পুড়িয়ে দেয় । দেশে এখনও বেশ কয়েকজন শিল্পী তাদের বাদ্যযন্ত্র বিক্রি করে জনমজুরির দিকে ঝুঁকেছেন । শিল্পীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পাশাপাশি, তালিবান শহরের গাড়ি চালক, মিডিয়া এবং হোটেল মালিকদের গান বাজানো এবং শোনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ।।