এইদিন ওয়েবডেস্ক,হেরাত,১৫ এপ্রিল : তালিবান আসার পর থেকেই আফগান মহিলাদের উপর একের পর ফতোয়া জারি করে যাচ্ছে । প্রথমে মহিলাদের আপাদমস্তক ঢাকা বোরখা বাধ্যতামূলক করা হয় । ষষ্ঠশ্রেণীর উর্ধে মেয়েদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় স্কুলের দরজা । তারপর একে একে মেয়েদের একলা ভ্রমণ,পার্কে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে দেয় ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটি । এবারে আফগানিস্তানের হেরাতে রেস্তোরাঁয় মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে তালিবান । এদিকে এহেন তালিবানি ফতোয়ায় অশনি সঙ্কেত দেখছে রেস্তোরাঁগুলোর মালিকরা । রেস্তোরাঁয় মহিলাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় হেরাতের ৫০ শতাংশের উপর রেস্তোরাঁর ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা । পাশাপাশি হেরাটির মহিলারা তালিবানের এই সিদ্ধান্তকে “অপমানজনক” বলে অভিহিত করে বলেছেন যে অপমানজনক কর্মকাণ্ড যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্ধ করা উচিত তালিবানের ।
হেরাত শহরের বাসিন্দাদের শিমা নামে এক মহিলাকে তার স্বামীর সাথে রেস্টুরেন্টে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়েছিল । হেরাতের এই বাসিন্দা বলেছেন যে তিনি এবং তার স্বামী এবং সন্তানরা হেরাত শহরের একটি রেস্তোরাঁয় রোজা ভাঙার পরিকল্পনা করেছিলেন, কিন্তু যখন তিনি রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করেছিলেন, তখন তাকে বলা হয়েছিল যে কেবলমাত্র পুরুষদের প্রবেশের অধিকার রয়েছে, মহিলারা প্রবেশ করতে পারবেন না । তার স্বামী রেস্টুরেন্টের মালিককে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তিনি সফল হননি । মহিলা বলেন, ‘আগের বছরগুলিতে আমরা বেশিরভাগ রাতেই রোজা ভাঙতে রেস্টুরেন্টে যেতাম । বাড়িতে রান্নাবান্না হত না । এবারেও আমরা একই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম । কিন্তু রেস্টুরেন্টে এসে শুনছি, তালিবানরা বলে গেছে যে মহিলাদের যেন ঢুকতে দেওয়া না হয় ।’
ওই মহিলা আরও বলেছেন,রেস্তোরাঁর মালিক তার স্বামীকে বলেছিলেন যে তিনি যদি মহিলাদের প্রবেশের অনুমতি দেন তাহলে তার রেস্তোরাঁ তালিবান দ্বারা অবরুদ্ধ করা হবে এবং তাকে জরিমানা দিতে হবে । শিমা বলেন,’একথা শুনে আমি খুব হতাশ হয়েছিলাম এবং এটা আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিল । যখন আমি শুনলাম যে রেস্তোরাঁয় মহিলাদের প্রবেশের অধিকার নেই, তখন আমি ভেবেছিলাম যে মহিলাদের অপমান করা হচ্ছে এবং মহিলাদেরকে মানুষ হিসাবেই গন্য করছে না তালিবানরা ।’
হেরাতের বাসিন্দা সাফিয়া সেদ্দিকী নামে আরও এক গৃহবধূ বলেন, মহিলারা একজন পুরুষের সাথে রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করতে পারবেন না, তাদের ব্যক্তিগতভাবে বা দলগতভাবে রেস্তোরাঁয় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । একদল মহিলার সাথে আমি রোজা ভাঙতে শহরের একটি রেস্তোরাঁয় গিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ।’ সিদ্দিকীর কথায়,তালিবানের নারীদের বিষয়ে আদেশ অপমানজনক এবং এই দলটি নারীদেরকে মানুষ হিসেবেই বিবেচনা করে না ।
এদিকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হেরাতের তালিবানের প্রধান আজিজ আল-রহমান আল-মাহাজের এই অডিও টেপে বলেছেন,এমন রেস্তোরাঁও রয়েছে যেখানে সবুজ জায়গা রয়েছে । যে রেস্তোরাঁগুলোতে সবুজ জায়গা আছে সেগুলো পার্কের আকার ধারণ করেছে । সেখানে যে কোনো পুরুষ তার পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে চলে যায়, ফলে নারী-পুরুষের মিলন লাগামহীন হয়ে যায় । এখানেও কিছু অসংযত আচরণ লক্ষ্য করা যায় । তাই এসব বন্ধ করতে রেস্তোরাঁয় মহিলাদের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ।
হেরাত শহরের একটি রেস্তোরাঁর মালিক ফাহিম বলেছেন, আগে তালইবানের নির্দেশে তারা মোটা পর্দা লাগিয়ে রেস্তোরাঁয় আসা পারিবারগুলিকে আলাদা করেছিল, কিন্তু এখন নির্দেশ এসেছে যে কোনও মহিলা রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করবেন না । তিনি বলেন,’ আমাদের গ্রাহকদের বেশিরভাগই পরিবার । এখন নারীদের নিষিদ্ধ করা হলে আমাদের এই ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে ।’অন্যান্য রেস্তোরাঁর মালিকরাও একই দাবি রয়েছেন এবং তারা তালিবানের কাছে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ।।