প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০১ মার্চ : মাথার উপর ছাদ বলে কিছু নেই।বাসস্থান বলতে শুধু রয়েছে শিশু গাছের নিচে ত্রিপলের আচ্ছাদন দেওয়া একটি ঝুপড়ি।সেই ঝুপড়িতে থেকেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের গলসির ছাত্রী মহুয়া চৌধুরী।এই ছাত্রী ও তাঁর পরিবারের এমন দুর্দশার কথা স্থানীয় ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানেনা এমনটা নয়।কিন্তু কেউ পাশে না দাঁড়ানোয় হতাশ ছাত্রী ও তাঁর পরিবার।এমন দুর্দশা থেকে কবে মুক্তি মিলবে তাও জানেনা ছাত্রীটি । তবুও উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার সংকল্প নিয়ে ওই ঝুপড়ি ঘরে বসেই দিন রাত এক করে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে।
অসহায় ছাত্রীর বাড়ি গলসি ১ নম্বর ব্লকের লোয়া রামগোপালপুর পঞ্চায়েতের আটপাড়া গ্রামে । ছাত্রীর বাবা মান্নান চৌধুরী পেশায় দিন মজুর । মা রেখা বেগম সাধারণ গৃহবধূ । এই দম্পতির দুই মেয়ের মধ্যে মহুয়া ছোট। লোকের কাছে সাহায্য চেয়ে দম্পতি তাঁদের বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছাত্রী ও তাঁর পরিবার আগে মাটির দেওয়াল ও খড়ের চালার বাড়িতে বসবাস করতো। চার বছর আগে আমফান ঝড়ে ভেঁঙে যায় সেই মাটির বাড়িটি।তখন থেকেই ওই বাড়ি লাগোয়া একটি শিশু গাছের নিচে ঝুপড়ি ঘরে বাবা মায়ের সাথেই বসবাস করছে ছাত্রী মহুয়া চৌধুরী। শীত,গ্রীষ্ম ও বর্ষায় বিপদ মাথায় নিয়ে ঝুপড়িতেই দিন কাটিয়ে যাচ্ছে ছাত্রী ও তাঁর পরিবার । লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সংকল্প নিয়ে ঝুপড়িতেই লম্ফোর আলোয় পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্রী।
বাবা মান্নান চৌধুরী বলেন,আমার রোজগার বলতে দিনমজুরের কাজ। সেটাও সপ্তাহে দু’দিন মিললে তো পাঁচদিন মেলে না।অনেকদিন হয়ে গেল একশো দিনের কাজও হয় নি । একশো দিনের কাজটা হলে হাতে কিছু টাকা পয়সা আসতো। মান্নান চৌধুরী জানান ,বছর চারেক আগে আমফান ঝড়ে তাঁদের কাঁচ বাড়িটি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায় । সেই থেকে বাড়ি লাগোয়া একটি শিশু গাছের নিচে ত্রিপলের ছাউনি দেওয়া ঝুপড়িতেই তিনি তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ঝুপড়িতে খুবই দুঃখ ও যন্ত্রনার মধ্যেই তাঁদের দিন কাটছে।এমন দুর্দশার কথা লোয়া রামগোপালপুুর পঞ্চায়েত ও গলসি ১ নম্বর বিডিও অফিসে গিয়ে বারে বারে জানিয়েছেন । কিন্তু সুরাহার কোন ব্যবস্থা আজ অবধি হয় নি । রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পে পঁচিশ হাজার টাকা মেয়ে পেলেও সরকারী একটা ঘর আজ অবধি মেলেনি।
সরকারী আবাস যোজনার একটা ঘর পেলে অনেক উপকার হত“ । ছাত্রীর মা রেখা বেগম বলেন, ঝুপড়ির মধ্যে রানার কাজ কাজ করতে গেলে বিপদ ঘটতে পারে । তাই ঝপড়ি ঘরের উত্তর কোনে খোলা আকাশের নিচে বসেই উনানে কাঠ জ্বালিয়ে তিনি তিন বেলা রান্নার কাজ করেন তিনি। বর্ষার দিনে রান্নাবান্না লাটে ওঠে।আক্ষেপে প্রকাশ করে রেখা বেগম বলেন,আমাদের অবস্থা এখন একপ্রকার গোয়ালগরের গোরু ছাগলের মত হয়ে গেছে।
এলাকার বাসিন্দা আলাউদ্দিন সেখ বলেন,এমন দুর্দশার মধ্যে দিন কাটানো পরিবার গ্রামে আরও আছে। কিন্তু এলাকার জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন
সব জেনেও যেন কিছুই জানেনা। এমন ভান করে রয়েছে। সরকার, প্রশাসন,পঞ্চায়েত বলে কিছু আদৌ আছে নাকি সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। গলসির বিধায়ক নেপাল ঘরুইও কোন দিন এই গ্রামে এসে বাসিন্দাদের দুর্দশার বিষয়ে খোঁজ খবর নেন নি। তবে বিধানসভা ভোটের আগে প্রচারে এসে উনি অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। উপর ওয়ালাই এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মহুয়াা চৌধুরী ও তাঁর পরিবাবের ভরসা । এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তাঁর পরিবারের এমন দুর্দশার মধ্যে দিন কাটানোর বিষয়টি নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন জেলা বিজেপির সহসভাপতি সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়।তিন বলেন,এর পরেও কি করে তৃণমূলের নেতারা দাবি করে রাজ্যে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কেন্দ্রের সরকার রাজ্যকে যে কাঁড়িকাঁড়ি টাকা পাঠিয়েছিল তার ছিটে ফোটাও কি অসহায় ছাত্রীর পরিবার পেয়েছিল? এই প্রশ্নও তুলেছেন বিজেপি নেতা ।
এই বিষয়ে জেলা পরিষদের সহ-সভাধীপতি দেবু টুডু বলেন,“বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি। ব্লক প্রশাসনকে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেব“।আর গলসি ১ নম্বর ব্লকের বিডিও দেবলীনা দাস জানান,“সভাধীপতি ম্যাডাম আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বুধবার মহুয়া চৌধুরীকে বিডিও অফিসে ডেকেনিয়ে কথা বলবো।কি ওদের সমস্যা তা জানবো ।।