এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৫ জুলাই : সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান শুরু করেছে । আসাম,দিল্লি, হরিয়ানা, গুজরাট প্রভৃতি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে অনুপ্রবেশকারীদের দ্বারা সরকারি জমি জবরদখল উচ্ছেদ অভিযান চলছে ব্যাপকভাবে । সেই সাথে অনুপ্রবেশকারীদের বাংলাদেশে “পুশ ব্যাক” করা হচ্ছে ৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের দাবি যে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণের নামে বাংলাভাষীদের বেছে বেছে নির্যাতন করছে ওই সমস্ত রাজ্যগুলির বিজেপি সরকার । তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি থেকে শুরু করে তার দলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব হচ্ছেন প্রতিদিন । এদিকে এই ইস্যুতে বাংলার শাসকদলের সঙ্গে সুরে সুর মেলাতে দেখা গেল এরাজ্যের পুলিশকে । পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও দাবি করেছে যে তারা নাকি ‘সূত্রে খবর পাচ্ছে’ যে ‘ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে অনেকে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন এবং হেনস্থার শিকার হচ্ছেন’ । সেই সমস্ত কথিত নির্যাতিতদের সাহায্যের জন্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ রীতিমতো হেল্পলাইনও প্রকাশ করেছে । যদিও রাজ্য পুলিশের এহেন কর্মকাণ্ডকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক্স হ্যান্ডেলে আজ শুক্রবার ৬:৩৯ নাগাদ লেখা হয়েছে,’বাংলা থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়লে যোগাযোগ করুন রাজ্য পুলিশের হেল্পলাইনে । বাংলা থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে অনেকে নানা সমস্যার মুখে পড়ছেন এবং হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে আমরা খবর পাচ্ছি। কিন্তু যাঁরা ভুক্তভোগী, তাঁদের বা তাঁদের পরিবারের লোকজন এই সমস্যার কথা কাকে জানাবেন, কীভাবে জানাবেন, সেই বিষয়ে ওঁদের কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই। বাংলা থেকে ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া নাগরিকরা যদি কোনও ধরনের সমস্যায় পড়েন, তাঁদের বা তাঁদের পরিবারের কাছে আমাদের আবেদন, সঙ্গে সঙ্গে আপনার স্থানীয় থানায় জানান। জেলার কন্ট্রোল রুমেও জানাতে পারেন। এ ছাড়া, পরিবারগুলির সুবিধার্থে আমরা চালু করছি একটি হেল্পলাইন। যার নম্বর হল 9147727666 । এই নম্বরে শুধু হোয়াটস্যাপ করা যাবে। মেসেজ করে প্রয়োজনীয় তথ্য এখানে দিতে পারেন, নিজের নাম-ঠিকানাসহ। প্রতিটি তথ্য যাচাই করে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
রাজ্য পুলিশের ওই পোস্ট ট্যাগ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’এই পোষ্টটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত । ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূত্রে বসবাসকারী বাঙালিদের বিভ্রান্ত করতে এই পোস্ট করা হয়েছে, যাতে তাঁরা বিচলিত হয়ে পড়েন। পুরো ভূ-ভারতে ভারতীয় বাঙালিরা ও হিন্দু শরণার্থীরা কোন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন না। তবে পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী হিন্দু বাঙালি প্রায়শই পুলিশের দ্বারা হেনস্থার শিকার হয়ে থাকেন। আমি তাঁদের উদ্দেশ্যে এবং ভিন রাজ্য থেকে আগত ভারতীয় হিন্দুরা, তাঁরা যে ভাষায় কথা বলুন না কেন, পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো জেলায় কর্মসূত্রে বসবাস করছেন, তাঁদেরও যদি পুলিশ (মমতা পুলিশ) হেনস্থা করে থাকে, তাহলে আপনারা নির্দ্বিধায় আমার ইমেলে তথ্য সহ জানাতে পারেন। আমি সম্পূর্ণ সাহায্য করবো। আমার ইমেল আইডি – [email protected]
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের কোন সচেতন নাগরিক যদি, পশ্চিমবঙ্গের যে কোনো জেলায় বসবাসকারী রোহিঙ্গা মুসলিম ও অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী মুসলমানদের খোঁজ পান তাহলেও আমার এই ইমেল আইডি তে তথ্য সহকারে জানানোর অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি উক্ত তথ্য সঠিক জায়গায় পৌঁছে দেবো ।’।
উল্লেখ্য,শুধু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিই নয়, ভোটার তালিকাকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা মুক্ত করতে আসরে নেমে পড়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন । কমিশন ভোটার চিহ্নিত করে তালিকা সংশোধনের কাজ শুরু করেছে । আপাতত এই সংশোধনের কাজ চলছে বিহারে ।
ভারতের নির্বাচন কমিশন গত ২৪শে জুন ভোটার তালিকার “বিশেষ নিবিড় সংশোধন”-এর আদেশে বলেছিল,’নির্বাচন কমিশন এখন ভোটার তালিকার অখণ্ডতা রক্ষার জন্য তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের জন্য সমগ্র দেশে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (SIR)শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে… দেশের বাকি অংশে SIR-এর সময়সূচী যথাসময়ে জারি করা হবে।’ মনে করা হচ্ছে যে আগস্ট বা সেপ্টেম্বরে পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের কাজ হবে । রাজ্য বিজেপির অভিযোগ, রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি মুসলিমরা তৃণমূল ও বামপন্থীদের “কোর ভোটব্যাংক”৷ সেই ভোটব্যাংক হারানোর ভয়েই মমতা ব্যানার্জি ও সিপিএমের সুজন চক্রবর্তীরা ভিন রাজ্যে কথিত বাঙলাভাষীদের উপর নির্যাতনকে আসন্ন বিধানসভার ভোটের ইস্যু করতে চাইছে ।।

