এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১৮ জুলাই : ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধি-সহ তিন আইন বাতিল করে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, ভারতীয় সাক্ষ্য অধিনিয়ম এনেছে কেন্দ্র সরকার । পয়লা জুলাই থেকে সেই আইন কার্যকরও হয়েছে দেশ জুড়ে । এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নজিরবিহীন ভাবে একটা কমিটি গঠন করেছে সেই তিন আইন খতিয়ে দেখার জন্য । সেই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অসীম কুমার রায়কে । কমিটির মধ্যে ৬ জন সদস্যও রাখা হয়েছে । তারা হলেন,আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল সঞ্জয় বসু, রাজ্য পুলিশের ডিজি, আইজি এবং কলকাতার পুলিশ কমিশনার । এখন কেন্দ্রীয় আইনে খতিয়ে দেখার এক্তিয়ার রাজ্য সরকারের কতটা আছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারের এই বিজ্ঞপ্তিকে ‘শুধু বেআইনিই নয়, ফেডারেল কাঠামোরও লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ’ বলে অবিহিত করেছেন ।
শুভেন্দু রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তির কপি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করে লিখেছেন,’পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গত ১৬ জুলাই,একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন – ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) এবং ভারতীয় রাজ্য-নির্দিষ্ট সংশোধনের পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। স্বাক্ষ্য অধিনয়ম (BSA),যা পয়লা জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে ৷ ওই কমিটি রাজ্য স্তরে এর নাম পরিবর্তন করা দরকার কিনা তাও পরীক্ষা করবে৷ এটি অগ্রহণযোগ্য এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই বিজ্ঞপ্তিটি কেবল বেআইনিই নয়,এটি ফেডারেল কাঠামোরও লঙ্ঘন কারণ এটি ভারতের সংসদ এবং ভারতের রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে।’
তিনি আরও লিখেছেন,’নতুন আইনের প্রতিটি দিক নিয়ে প্রায় চার বছর ধরে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করা হয়েছিল। স্বাধীন ভারতে খুব কম আইন নিয়ে এত দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। সংসদের উচ্চ ও নিম্ন কক্ষ উভয়ই এই বিলগুলি এবং ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি পাশ করেছেন ; শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু ২০২৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর তিনটি ফৌজদারি কোড বিলে সম্মতি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গত ২৪ শে ফেব্রুয়ারী বিজ্ঞপ্তি জারি করে পয়লা জুলাই থেকে তিনটি আইনের বিধান কার্যকর হওয়ার কথা ঘোষণা করে ।’
শুভেন্দু অধিকারী সবশেষে লিখেছেন,’সংসদে একবার পাস করা আইনটি পর্যালোচনা করার কোনো অধিকার ও ক্ষমতা রাজ্য সরকারের নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভারতের সংবিধান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নিয়মগুলিকে চ্যালেঞ্জ করছেন। একটি প্রাদেশিক সরকারের প্রধান হিসাবে তিনি কেবল তার সীমা অতিক্রম করছেন। আমি সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষের কাছে এই অশুভ প্রয়াসকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
গত ১৬ জুলাই রাজ্য সরকারের ল’সেল দ্বারা জারি করে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে রিপোর্ট তলব করেছেন । তিন ফৌজদারি আইন খতিয়ে দেখতে কেন কমিটি গঠন করা হল, কী ভূমিকা ওই কমিটির সে সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে । রাজ্যপালের বক্তব্য অনুযায়ী,’রাজ্যের মধ্যে আলাদা রাজ্য বা বানানা রিপাবলিক হয়ে উঠতে পারে না ।’।