দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২৩ ডিসেম্বর : মাটির ছিটেবেড়ার দেওয়াল এক কুঠুরি মাটির ঘরে অতিকষ্টে বসবাস পরিবারের চার সদস্যের । তার উপর এক দশকের অধিক সময় ধরে মানসিক রোগ ধরা পড়েছে পরিবারের কর্তার । ফলে সেভাবে কাজকর্ম করতে পারেন না তিনি । এদিকে পরিবারের একমাত্র রোজগেরে হওয়ায় কার্যত অথৈই জলে পড়ে গেছে গোটা পরিবারটি । অর্ধাহার, অনাহারে দিন কাটছিল তাদের । পরিবারটির এই প্রকার দুর্দশার কথা শুনে তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার মুরাতিপুর বাজারের বাসিন্দা শেখ আমির নামে এক সমাজকর্মী যুবক । দু’একজন পরিচিতের কাছ থেকে চাঁদা তুলে ওই অসহায় পরিবারের হাতে আজ শনিবার তিনি তুলে দিয়ে এলেন মুদিখানা বাজার,শীতের সোয়েটার ও চাদর, মশারি প্রভৃতি সামগ্রী । পাশাপাশি তিন পড়ুয়ার জন্য কিনে দিয়েছেন স্কুল ব্যাগ,খাতা ও কলম ।
জানা গেছে,মুরাতিপুর গ্রামের বাসিন্দা মুসা সেখ নামে ওই ব্যক্তির বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী রেশমিনা বেগম ও তিন ছেলেমেয়ে । দম্পতির তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে আফরিন খাতুন অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী, ছোট মেয়ে আফরোজা খাতুন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াশোনা করে এবং ছেলে সামিম শেখ পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র । মুসা সেখ রাজমিস্ত্রীর জোগাড়ের কাজ করে কোনো রকমে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে কোনো রকমে পরিবারের দু’বেলার খোরাক জোটান । রেশমিনা বেগম বলেন,’২০১১ সালে আমার স্বামীর মানসিক রোগ ধরা পড়ে । তারপর থেকে নিয়মিত কাজে যেতে পারেন না । রেশনের চাল ও লোকজনের কাছে চেয়ে কোন রকমে সংসার চালাই । অভাবের কারনে ছেলেমেয়ের টিউশন দিতে পারিনি ।’
জানা গেছে,মুসা সেখের প্রতিবেশী শেখ আমির । সম্প্রতি আমিরের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন জানান রেশমিনা বেগম । এরপর শেখ আমির স্থানীয় বাসিন্দা হিরু মাস্টার,শেখ জমিরসহ কয়েকজনের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এবং নিজে কিছু দিয়ে ওই পরিবারের জন্য সাহায্য সামগ্রী কিনে এদিন তাদের হাতে তুলে দিয়ে আসেন । শেখ আমির বলেন, ‘আমারও আর্থিক সঙ্গতি ভালো নয় । তাই পরিবারের পড়ুয়াদের পড়াশোনার খরচ জোটানো বা সংসার খরচ বাবদ নিয়মিত সাহায্য করা আমার পক্ষে সম্ভবপর হবে না । তবে আমার মেয়ে কলেজ পড়ুয়া আলিশা শবনম ঠিক করেছে মুসা সেখের ছেলেমেয়েকে সে নিখরচায় টিউশন পড়াবে ।’
অন্যদিকে মুসা সেখের স্ত্রী রেশমিনা বেগম আবাস যোজনার ঘর ও সরকারি সাহায্যের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ।।