এইদিন ওয়েবডেস্ক,কালনা(পূর্ব বর্ধমান),২৫ সেপ্টেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার শ্যামগঞ্জপাড়ার সেনগুপ্ত পরিবারের কুলদেবী বহু প্রাচীন । কয়েক শতাব্দী ধরে পূজিতা হচ্ছেন সেনগুপ্ত পরিবারের দেবী দূর্গা । তবে পূজোর পত্তন হয়েছিল বাংলাদেশের ফরিদপুরের পশ্চিম পিঞ্জিরী গ্রামে । কিন্তু দেশভাগের পর প্রাণ বাঁচাতে গোটা পরিবার চলে আসে এপার বাংলায় । সঙ্গে করে তাঁরা নিয়ে আসেন কুলদেবীকেও । আজও নিষ্ঠা সহকারে কুলদেবীর পুজো করে আসছে সেনগুপ্ত পরিবার । প্রথম দিকে আর্থিক অনটনের কারনে অনাড়ম্বরভাবে পূজো শুরু হয় । বর্তমানে অবশ্য জৌলুস বেড়েছে সেনগুপ্ত বাড়ির দুর্গাপুজোয় ।
পরিবারের সদস্য বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, তাঁদের পৈতৃক ভিটে বাংলাদেশের ফরিদপুরের পশ্চিম পিঞ্জীরী গ্রামে । সম্পন্ন পরিবার ছিল তাঁদের । আনুমানিক ৫৮৫ বঙ্গাব্দে পূর্বপুরুষ রত্নাকর সেনগুপ্ত ও প্রিয়ঙ্কর সেনগুপ্ত নামে দুই ভাই প্রথম পৈতৃক ভিটেতে দুর্গাপূজার পত্তন করেছিলেন । পারিবারিক হলেও গোটা গ্রাম মেতে উঠতো এই পুজো ঘিরে । কিন্তু দেশভাগের পর চিত্র বদলে যায় । আতঙ্কে হিন্দুরা তখন বাংলাদেশ ছেড়ে পালিয়ে আসছে । প্রাণ বাঁচাতে তাঁরাও পালিয়ে আসেন এপার বাংলায় । পূর্ব পুরুষ জীতেন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের হাত ধরে গোটা পরিবার আশ্রয় নেয় কালনায় ।
তিনি বলেন,’পশ্চিমবঙ্গে আসার পর প্রথম দিকে প্রতি বছর আশ্বিন মাসে বাংলাদেশের ফরিদপুরের পশ্চিম পিঞ্জিরী গ্রামে নিজেদের ভিটেতে গিয়ে কুলদেবীর বার্ষরিক পূজো করা হত । কিন্তু যাতায়তের অসুবিধার জন্য ১৯৫২ সালে পাকাপাকি ভাবে দেবীকে কালনায় নিয়ে আসা হয় ।’ তিনি জানান,দেশ বদলের কারনে প্রথম দিকে পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা বিশেষ ভালো ছিল না । তাবু খাটিয়ে ও মাটির ঘরে পুজো করা হত দেবীকে । কিন্তু এখন কুলদেবীর মন্দির হয়েছে । প্রতিবছর ধুমধাম করেই পূজো হয় ।
সেনগুপ্ত পরিবারের কুলদেবীর এক চালের । দূর্গাপূজোর চারটে দিন রুপোর মুকুট ও গহনা দিয়ে সাজানো হয় দেবীকে । পূজোয় রয়েছে বিশেষ কিছু বিশেষত্ব । শাক্ত মতেই পূজো হয় দেবীর । ছাগ ও চালকুমড়ো দুইই বলি হয় । এছাড়া পুজোর দিনগুলিতে দেবীর বাম হাতে ১০৮ টি করে দুর্বা ঘাস বেঁধে রাখা নিয়ম । অন্ন হিসাবে দেবীকে চিঁড়ে, নারকেল ও পরমান্ন হিসাবে গুড়,খই দেওয়া হয় । এছাড়া প্রতিদিন লুচি,মিষ্টি,গুড় ও চিনির নাড়ু নিবেদন করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে । বিজয়া দশমীর দিন দেবীকে পান্তা ভাত ও কচুশাক নিবেদন করা হয় । বিশ্বজিৎবাবু বলেন,’একসময় বলিদান প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু পরিবারে একটা অঘটন ঘটে গেলে গুরুদেবের পরামর্শে ফের চালু হয় ছাগবলির প্রথা ।’ পারিবারিক হলেও সেনগুপ্ত পরিবারের দূর্গাপূজোয় মেতে ওঠে কালনার শ্যামগঞ্জপাড়ার বাসিন্দারা ।।