মূর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে হিন্দুদের পলায়ন কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়,বরঞ্চ একটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অঙ্গ বলে মনে করছেন অনেকে । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট জানিয়েছেন যে বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা ও ভারতের দুই ইসলামি জঙ্গী সংগঠনের ষড়যন্ত্রের ফলশ্রুতি মুর্শিদাবাদের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা । তার এই অনুমান যে নিছক অমূলক নয় তা সম্প্রতি বাংলাদেশের “ইসলামিক আর্মি”র ফেসবুক পেজে “ইমাম মাহাদির সৈনিক” নামে একজন জঙ্গির পোস্টে স্পষ্ট । ধুলিয়ানে এক হিন্দু নারীর নিজের ভাঙচুর ও লুটপাট হওয়া দোকানের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ার ছবি পোস্ট করে ওই সন্ত্রাসী লিখেছে,’আলহামদুলিল্লাহ হিন্দু মালাউনদের কান্নাতে যেন এক অপরূপ শান্তি।
আল্লাহতালা আমাদের পশ্চিমবঙ্গের জিহাদি ভাইদের ইমানিশক্তি আরো বাড়িয়ে দিক। পশ্চিমবঙ্গের একটা মালু যেন শান্তিতে না থাকতে পারে। কাফেরদের এইভাবেই শায়েস্তা করতে হয় যেটা আমাদের পশ্চিমবঙ্গের ইমানদার ভাইরা করে দেখাচ্ছেন। খুব দ্রুতই পুরা ভারতবর্ষে কালেমার পতাকা উড়বে ইনশাল্লাহ, যার শুরু হবে এই বাঙালী হিন্দু মালুদের উপর জিহাদ করেই। কোনো মোদী বিজেপিকে ছাড় দেওয়া যাবে না। আমার সকল মুসলিম উম্মাহ ভাইরা গাজায়তুল হিন্দের জন্য প্রস্তুত হন। খুব দ্রুত ভারত মুসলিমদের দখলে হবে। নারায়ে তাকবীর ।’

মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে সাম্প্রদায়িক হিংসায় কেরালা ভিত্তিক উগ্র ইসলামি সংগঠন এসডিপিআই এর উসকানি কাজ করছিল বলেও পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে বলে খবর । এদিকে মুখ্যমন্ত্রী ও পুলিশমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শান্তির বাণী ছড়াচ্ছেন এবং তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছে তার দুই জোট সঙ্গী সিপিএম ও কংগ্রেস । পাশাপাশি একাংশ থেকে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তোলা হচ্ছে । আর তারাই দাবি তুলছে যারা বিগত লোকসভা ভোটে বিজেপি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ার জন্য ফটকা ফাটিয়েছিল ।
কিন্তু বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে আদপেই কি যথেষ্ট ক্ষমতা আছে ? রাষ্ট্রপতি শাসনের প্রক্রিয়া কী? এই প্রশ্নের উত্তরে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক পন্ডিত নেতান্যাহু মিশ্র টিপিএন(@Brand_Netan)-এর বিশ্লেষণ নিচে তুলে ধরা হল :
বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন লাগু করতে গেলে লোকসভা এবং তারপর রাজ্যসভাতেও প্রস্তাব পাস করাতে হবে । এর মানে হল নীতীশ এবং নাইডুকে আবার রাজি করাতে হবে, যেখানে মাত্র কয়েকদিন আগে তাদের ওয়াফফ আইনের জন্য রাজি করা হয়েছিল। নীতীশ এবং নাইডু বিজেপির দাস নন, তাদের নিজস্ব দল এবং রাজনীতি আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে ভালো ব্যক্তিগত সম্পর্ক রয়েছে নীতীশ কুমার এবং চিরাগ পাসওয়ানেরও, যার অর্থ আপনাকে কেবল আলোচনা করলেই হবে না। প্রথমে আপনাকে তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক নষ্ট করতে হবে এবং তারপর তাদের ভোট দিতে রাজি করাতে হবে। মনে রাখবেন, যদি আপনি বারবার নীতীশ নাইডুর কাছে যান, তাহলে আগামীকাল আপনার অনেক কিছু ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।আদর্শভাবে, এই ৫ বছরে মাত্র ২-৩ বার মিত্রদের প্রয়োজন হওয়া উচিত, তাই এই প্রস্তাবটি পাস করা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে ।
তা ছাড়া, রাজ্যসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বন্ধু নবীন পট্টনায়েকের সমর্থনও প্রয়োজন। যখন আপনি বলেন যে রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করে মমতার সরকারকে ফেলে দেওয়া উচিত,এটা ছেলেখেলা নয় । রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে একবার স্বাক্ষর করালেই বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে বলে যারা মনে করেন তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করেন ।
অর্থাৎ বিগত লোকসভা ভোটে মোদীজিকে দেওয়া আপনাদের ‘উচিত শিক্ষা’ অন্য কোথাও যায়নি, বরং দ্বিগুণ গতিতে কেবল আপনার গলার ফাঁস হয়ে দেখা দিয়েছে । যারা আশঙ্কা করেছিলেন যে মোদীজির দ্বারা গণতন্ত্রের গলা টিপে মারা যাবে, তাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিষ্ঠুরতার দিকে নজর দেওয়া উচিত ।
যারা মোদিকে কম ধর্মান্ধ হিন্দু হিসেবে দেখেন, তাদের উচিত বাংলায় নির্যাতিত হিন্দুদের চোখের দিকে সরাসরি তাকানো এবং বলা “আমরা আপনাকে একটা শিক্ষা দিয়েছি”। বিজেপি ২৪০টি আসন পাক, নাকি ৪০০টি, অবসর গ্রহণের পর, মোদীজি দিল্লি বা গান্ধীনগরে একটি দুর্দান্ত বাংলো এবং একটি দুর্দান্ত পেনশন পাবেন । ক্ষমতায় যেই থাকুক না কেন, জিহাদিরা কখনও মোদীজির দরজায় যাবে না।
আবারও বলছি, আপনি মোদীকে কোন শিক্ষা দেননি বরং আপনি নিজেই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষা হয়ে উঠেছেন । গণতন্ত্র রক্ষার নামে, আপনারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে একটি রাজ্য তুলে দিয়েছেন, যা তিনি নিজের স্বার্থে কাজে লাগাচ্ছেন।
তিনি লিখেছেন,পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করলে ভালো হয়৷ কারন আগামী বছর নির্বাচন। আর নির্বাচনের ঠিক আগে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্র বিপদে পড়েছে বলবে কেউ কেউ,যদিও একথা বলা তাদের পুরনো অভ্যাস । এখন আমি এটা শুনতে অভ্যস্ত। শুধু একটাই প্রশ্ন, নীতীশ কুমার কি প্রস্তুত থাকবেন? যদি তা না হয়, তাহলে এনডিএ ঐক্য জনসমক্ষে উপহাসের পাত্রে পরিণত হবে। আচ্ছা, নৈতিকভাবে কংগ্রেসের সমর্থন করা উচিত,কারন মমতার সাথে তাদের নামমাত্র জোট আছে।
তিনি লিখেছেন, কিন্তু নীতিবোধ এবং কংগ্রেস মানে…শান্তি এবং পাকিস্তান। ১৯৯৮ সালে রাবড়ি দেবীর জঙ্গলরাজকে যেমন বাঁচিয়েছিল, ঠিক তেমনই মমতাকে বাঁচাবে কংগ্রেস। সামগ্রিকভাবে এর সমাধান হল জঙ্গলরাজ চলতে দেওয়া। নির্বাচন কমিশনকে ২০০৫ সালের বিহার নির্বাচনের মতো কাজ করতে হবে। যেখানেই বুথে আক্রমণ হচ্ছে, সেখানে নির্বাচন বাতিল করুন, লালু, ঠাকরে এবং কেজরিওয়ালের মতো মমতাও পড়ে যাবেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির শাসন আর সহজ নয়।
এদিকে মমতার জোট সঙ্গী সিপিএম ও কংগ্রেস ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র আড়ালে ঘৃণ্য খেলা শুরু করেছে । মমতার মুসলিম ভোটব্যাংক সুরক্ষিত রেখে হিন্দু ভোটব্যাংকে ভাগ বসাতে ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছে মহম্মদ সেলিম-মীনাক্ষী মুখার্জিরা । তাই বিজেপির “হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই” শ্লোগানে বাংলার কথিত ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি হিন্দুরা কতটা উদ্বুদ্ধ হয় সেটাই দেখার বিষয় । উত্তর জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও এক বছর৷ ততদিনে হয়ত ফিকে হয়ে যাবে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরের সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা।।
The same so-called secular Hindus who were speculating when BJP failed to get a majority are now demanding President’s rule in Bengal: says this political analyst

