এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ এপ্রিল : হাওড়ার শিবপুরে এবং হুগলির রিষড়ার দাঙ্গার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ি করলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । মঙ্গলবার বিধানসভার বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রামনবমীর শোভাযাত্রাকে ঘিরে সাম্প্রতিক হিংসার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ উগরে দেন শুভেন্দু । পাশাপাশি এই পরিস্থিতির মাঝে রাজ্যপালের নীরবতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন ।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী সিএএর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার শুরু করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় পদযাত্রা করে পশ্চিমবঙ্গের বারুদের স্তুপে আগুন দিয়েছিলেন । তারপর গোটা পশ্চিমবঙ্গে মালদা জেলার সামসি,মুর্শিদাবাদ জেলার রেজিনগর ও বেলডাঙ্গা স্টেশন এবং হাজার দূয়ারির মত হেরিটেজ ট্রেনকে জিয়াগঞ্জে দাঁড় করিয়ে পোড়ানো হয়েছিল ।
নূপুর শর্মার ইস্যুতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইন্ধনে নাকাশিপাড়া,বেথুয়াডহরিতে ট্রেন আটকে ছিল । রেলমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে পর্যাপ্ত আরপিএফ নামার পরে রাত্রি ১ টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় । ট্রেনে পাথর ছোড়া হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গের এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য দায়ি মুখ্যমন্ত্রী, দাঙ্গাবাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি রেড রোডে ততথাকথিত ড্রামা ধর্না থেকে রামনবমীর মিছিল আক্রমণ করার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন । একইভাবে আগামীকাল যাতে পশ্চিমবঙ্গে অশান্তি তৈরি হয় তার আহ্বান জানিয়েছেন । অতএব এই দাঙ্গাবাজ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সর্বস্তরের সচেতন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দরকার আছে ।’ তিনি বলেন,’সংখ্যালঘুর জন সমর্থন চলে গেছে, তাই আবার হিন্দু মুসলমান করে সমর্থন ফিরিয়ে আনার জন্য এই সব করছেন ।
শিবপুরে এবং রিষড়া থানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’সবচেয়ে বড় বিষয় হল এই রকম পরিস্থিতিতে কোনো রাজ্যেই পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর কথা শোনে না । পুলিশ প্রথমেই ডান্ডা নিয়ে, টিয়ার গ্যাসের সেল ফাটিয়ে জনতাকে হঠিয়ে দেয় । আফগানিস্তান, পাকিস্তানেও একই ভুমিকায় দেখা যায় পুলিশকে । কিন্তু শিবপুরে পুলিশের ভূমিকা কেমন ছিল সকলেই দেখেছেন। প্রথম দিন মিছিল ছিল । কিন্তু দ্বিতীয় দিন তো মিছিল ছিল না । তার পরেও কেন শিবপুরে কেন ঘটনা ঘটল ?
রিষড়ায় ২ তারিখে মিছিল ছিল, ৩ তারিখে কেন ঘটনা ঘটল ? সকলেই দেখেছে শিবপুর ও রিষড়ায় নির্বাক দর্শকের ভূমিকায় ছিল ।’ পাশাপাশি তিনি শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক সামিম আহমেদ,জাভেদ হাসান খান,সাকির আলি, আকবর আলিকে ‘সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোক’ এবং ‘তৃণমূলের স্থানীয় নেতা’ বলে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু ।
সেই সঙ্গে রাজ্যের দাঙ্গা পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্যপালের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’গোপালকৃষ্ণ গান্ধী ও জগদীপ ধনকড়ের ভূমিকা আমি আজকের দিনে স্মরণ করতে চাই । বর্তমান রাজ্যপালের কাছ থেকে এখনো পর্যন্ত গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বা জগদীপ ধনকড়ের ভূমিকা এযাবৎ আমি দেখতে পাইনি । আমি চাই রাজ্যপাল তার সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে, এই সরকারের কাছ থেকে রিপোর্ট না চেয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দিল্লিকে জানান । অবিলম্বে শিবপুর ও রিষড়া থানাকে ৩৫৫ এর আওতায় উপদ্রুত ঘোষণা করা হোক । ওই দুই থানার নিয়ন্ত্রণ সিআরপিএফ বা সিআরএসএফের হাতে তুলে দেওয়া হোক । এই সুপারিশ কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রীর কাছে করুন রাজ্যপাল । তখনই বুঝবো শুধু প্রেস বাইটই নয়,গোপালকৃষ্ণ গান্ধী বা জগদীপ ধনকড়ের মত বর্তমান রাজ্যপাল কিছু করে দেখাতে চাইছেন ।’
সুমিত সাউয়ের বন্দুকহাতে কাজিপাড়ার মিছিলে থাকার অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের দাবিকে খারিজ করে দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি অভিষেককে “মিথ্যাবাদী ভাইপো” বলেও কটাক্ষ করেন । এনিয়ে মিছিলের আয়োজকদের কাছে অভিষেকের ক্ষমা চাওয়ার দাবিও জানান শুভেন্দু । পাশাপাশি তিনি এদিন ফের বলেন,’শিবপুরের ঘটনা ঘটিয়েছেন ওয়ার্ড সভাপতি সামিম আহমেদ প্যাডি৷ রিষড়ার ঘটনা প্রথম দিন ঘটিয়েছেন সাকির আলি এবং উপ পৌরপ্রধান জাভেদ হাসান খান ৷ কালকে রিষড়ায় ঘটিয়েছেন ওখানকার কাউন্সিলর নাসেমা বিবি, তার ছেলে এবং স্বামী আকবর আলি । ওটা রিষড়া এবং শ্রীরামপুরের শেষ মাথা । আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি ।’।