প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৪ ডিসেম্বর : প্রাচীন গ্রাম বাংলায় ডাকাতদের কালীপুজো নিয়ে বহু কাহিনী আছে । বঙ্কিমচন্দ্রের কালাদিঘির ডাকাতদল হোক বা দক্ষিণ কলকাতার মনোহর ডাকাতদের কালীপুজো, তাদের নিয়ে কিংবদন্তী হয়ে আছে একাধিক কাহিনি। নরবলি, ছাগবলি দিয়ে সেই রক্ত করালবদনী কালীর খাঁড়ায় ছুঁইয়ে, তা দিয়ে কপালে রক্ততিলক কেটে রক্তবস্ত্র পরে হা রে রে রে চিৎকারে চার পাশ কাঁপিয়ে ডাকাতি করতে বেরোত ডাকাতদল । তবে ওই সমস্ত ধার্মিক ডাকাতদলের অনেক কালীমন্দিরের দেবীরা আজও পূজিতা হলেও সেই ভয়ঙ্কর ডাকাতদলের অস্তিত্ব আজ আর নেই । তাই বলে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক ছিঁচকে চোরেদের মধ্যে ধর্মীয় বিশ্বাস যে একেবারেই নেই তা নয় । পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি দোকানে চুরি করতে ঢোকা অজ্ঞাত চোরেদের ধর্মীয় বিশ্বাস দেখে বিস্মিত খোদ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী যাদব সাহাও । তার দোকান থেকে মূল্যবান দ্রব্য সামগ্রী চোরেরা চুরি করে নিলেও দোকানে বসে তিনি যে শ্রীমদভগবদগীতা বইটি পাঠ করেন সেটি চোরেরা হস্তগত করেনি। উল্টে ওই শ্রীমদভগবদগীতার কপির পৃষ্ঠার ফাঁকে ৫০ টাকার একটি নোট গুঁজে দিয়ে বাকি সামগ্রী বগলদাবা করে চম্পট দিয়েছে চোরের দল । অর্থাৎ, পাপ খন্ডাতে চুরির কামাই প্রথমে ভগবানের উদ্দেশ্যে অর্পন করে গেছে “ধার্মিক চোরেরা”।
বুধবার গভীর রাতে কালনার পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকার একাধিক দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে । তার মধ্যে রয়েছে যাদব সাহার ফলের দোকানও । আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে যাদব সাহা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,’আমার দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা যাবতীয় খুচরো পয়সা এবং নগদ টাকা চোরেরা নিয়ে গেছে । তবে ক্যাশবাক্সের উপরে রাখা যে শ্রীমদভগবদগীতাটি আমি রোজ পাঠ করি সেটি চোরেরা সেখানেই রেখে দিয়ে গেছে । বরং চোরেরা ওই ভগবত গীতার পৃষ্ঠার মধ্যে দোকান থেকে হাতিয়ে নেওয়া ৫০ টাকার একটি ময়লা নোট গুঁজে দিয়ে রেখে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, চুরির পাপ খন্ডাতেই চোরেরা তাদের উপার্জনের একাংশ ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদন করে গেছে ।
তবে একই রাতে পাশাপাশি একাধিক দোকানে চুরির ঘটনায় ঘটায় একদিকে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেমন আতঙ্ক ছড়িয়েছে, পাশাপাশি তারা পুলিশের উপর চরম ক্ষুব্ধ । কারন বুধবার রাতে শুধু কালনা নয়, পূর্বস্থলীতেও বেশ কয়েকটি জায়গায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। এনিয়ে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ি করছেন সাধারণ মানুষ । তাদের দাবি, রাতে পুলিশের নজরদারির অভাবের কারনে এই ধরনের চুরির ঘটনা বারবার ঘটে চলেছে । ঘটনা প্রসঙ্গে কালনা মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO) রাখেশ চৌধুরী বলেন,’বুধবার রাতে পূর্বস্থলী ও কালনায় বেশ কয়েকটি জায়গায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ চুরির ঘটনার তদন্ত শুরু করছে । খুব শিগগিরই অভিযুক্তরা ধরা পড়বে।’।

