এইদিন ওয়েবডেস্ক,মেদিনীপুর,১১ জুলাই : মেদিনীপুর জেলার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষায় ১২ নম্বর প্রশ্নে বিপ্লবীদের সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে তোলপাড় চলছে রাজ্যে । দেশের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা মহান দেশপ্রেমিকদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ তকমা দেওয়ায় নিন্দার ঝড় উঠেছে । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রশ্নকর্তাকে “মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অবৈধ সন্তান বা সূরাবর্দির অনুগামী” বলে অবিহিত করেছেন ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছেন,’এর কোশ্চেন সেটারের নাম চাই আমাদের। পশ্চিমবঙ্গ কোশ্চেন সেটারের নাম জানতে চায় । তার নামটা শুনতে চাই আমরা । না শুনলেও বের করে নেব । ওটাতো বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, ওটা আমার জায়গা । আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে পতাকা তুলেছিলাম এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলাম৷ ওটা বেশিক্ষণ লাগবে না । আমি কালকে বের করে দেবো । ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর অবৈধ সন্তান কিনা বা সূরাবর্দির অনুগামী কিনা সেটাও প্রমাণ হয়ে যাবে ।’ তিনি বলেন,’ওদের মাইন্ডসেট এইরকম । এই কারণে ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে মালা দিতে রেড রোডে কোন মন্ত্রী যায়না, কোন সরকারি আমলা যায় না। এই কারণে ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীকে বিধানসভায় পুষ্পার্ঘ্য দিতে স্পিকারও আসে না ডেপুটি কাউকে পাঠায় না । এদের মাইন্ডসেট টাই এই জায়গায় আছে।’
প্রসঙ্গত,বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ষষ্ঠ সেমিস্টারের প্রশ্নপত্র ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস অনার্সের মডার্ণ ন্যাশনালিজম ইন ইন্ডিয়া বিষয়ে পরীক্ষা ছিল। সেই প্রশ্নপত্রের ১২ নম্বর প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয় : “মেদিনীপুরের তিনজন জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের নাম করো যারা সন্ত্রাসবাদীদের দ্বারা নিহত হন ?” উল্লেখ্য, ১৯৩১ সালের ৭ এপ্রিল মেদিনীপুর কলিজিয়েট স্কুল প্রাঙ্গণে বিপ্লবী জ্যোতি জীবন ঘোষ ও বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্ত তৎকালীন জেলাশাসক জেমস পেডিকে হত্যা করেন। এরপর ১৯৩২ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন জেলাশাসক রবার্ট ডগলাসকে জেলা বোর্ডের অফিসেই হত্যা করেন বিপ্লবী প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্য ও বিপ্লবী প্রভাংশু শেখর পাল। এই জেলা বোর্ডের অফিস-ই বর্তমানে জেলা পরিষদ বলে পরিচিত। ১৯৩৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর মেদিনীপুর পুলিস লাইনের ফুটবল মাঠে জেলাশাসক বার্নাড ইজে বার্জকে হত্যা করেন বিপ্লবী ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, বিপ্লবী রামকৃষ্ণ রায়, বিপ্লবী অনাথ বন্ধু পাঁজা, বিপ্লবী মৃগেন দত্ত ও বিপ্লবী নির্মল জীবন ঘোষ।
তবে এই প্রথম নয়,এর আগে ২০২৩ সালেও ঠিক একই প্রশ্ন ছিল প্রশ্নপত্রে । যদিও বিষয়টি নিয়ে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নির্মল মাহাতো মুখ খোলেননি । তবে শিক্ষামন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে ইমেইল মারফত অভিযোগ জানিয়েছে বিজেপি। শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সন্ত্রাসী এটা ইংরেজি থেকে কি বাংলা হয় ? স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রদ্যুৎ ভট্টাচার্যকে, অনাথ বন্ধু পাঁজাকে বলছে সন্ত্রাসী । এটা কোন ইংরেজি থেকে করেছে ? তাহলে ইংরাজিটা এক্সট্রিমিস্ট, ওটা ফ্রিডম ফাইটার নয় ? ফ্রিডম ফাইটারের বাংলা হচ্ছে তো স্বাধীনতা সংগ্রামী বা বা ন্যাশনাল ভলেন্টিয়ার জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক বা অনুশীলণ সমিতি৷ তাহলে নিশ্চয়ই আপনার ইংরেজিতে এক্সট্রিমিস্ট আছে । এক্সট্রিমিস্ট বা ফ্রাঙ্কেনস্টান আছে ।’
কিন্তু বিষয়টা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখে কুলুপ কেন ? উত্তরে শুভেন্দু বলেন,’উনি কসবা নিয়েও মুখে কুলুপ এঁটেছেন । ওনার বাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে রেপ হয়েছে । ওনার ভাইরা করেছে, ভাইপোরা করেছে বলে ।’।

