জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,০৮ মার্চ : দোল মানেই আনন্দের উৎসব, মনকে রাঙিয়ে দিয়ে মিলনের উৎসব। মুহুর্তের জন্য ভুলে যাওয়া হয় সব দুঃখগাথা, জাতপাত ও বয়স। পূর্ব বর্ধমান জেলার মাধবডিহি থানার সুন্দরপুর গ্রামের ‘সৃজনী’ গোষ্ঠীর সৌজন্যে গত ৭ ই মার্চ দোলের দিন এক অসাধারণ মিলন উৎসবের সাক্ষী থাকল সুন্দরপুর ও তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের অসংখ্য সাধারণ মানুষ। উৎসব এবার চতুর্থ বছরে পদার্পণ করল।
সাতসকালে আবির নিয়ে বড় সুন্দরপুর গ্রামের শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতী মনের আনন্দে মেতে ওঠে দোলের উৎসবে। একে অপরকে রাঙিয়ে দেয় আবিরে। অধিকাংশ মেয়েদের পরনে ছিল হলুদ শাড়ি এবং ছেলেদের ছিল হলুদ পাঞ্জাবী ও সাদা চুড়িদার। ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতনের দৃশ্য ফুটে ওঠে গ্রামের ক্যানভাসে।
প্রথা মেনে প্রথমে গ্রামের দুর্গামন্দিরে মূর্তির পাদদেশে আবির লেপন করা হয়। তারপর সবাই মিলে শোভাযাত্রার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরপরিচিত বসন্ত উৎসবের গানের তালে নৃত্য করতে করতে গ্রামের প্রতিটি দেবমন্দিরে যায়। যাওয়ার পথে বাঙালির প্রথানুযায়ী ছোটদের মাথায় আবির দেওয়া হয় এবং গুরুজনদের পায়ে আবির দিয়ে তাদের আশীর্বাদ চেয়ে নেওয়া হয়। বহু মানুষের সমাগমে বসন্ত উৎসব পরিণত হয় মিলন উৎসবে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য।
তবে এখানেই বসন্ত উৎসব শেষ হয়নি। এরপর সবাই হাজির হয় পোদ্দার পুকুর ফুটবল মাঠে। সেখানে আর একদফা আবির খেলা শুরু হয়। সঙ্গে ছিল ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। রঙিন পোশাকে রবীন্দ্রনাথের গানের তালে গ্রামবাসীদের নৃত্যের দৃশ্য ছিল সত্যিই অসাধারণ। বহু মানুষের সমাগম ঘটলেও কোথাও নুন্যতম বিশৃঙ্খলা ছিলনা। শেষে সৃজনী গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে গ্রামের দুর্গামন্দিরে উপস্থিত হয়ে প্রত্যেককে মিষ্টিমুখ করানো হয়।
এই উৎসবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে গ্রামের মেয়ে অম্বিকা,বকুল, সুমনা, টিয়া, প্রিয়া, অর্চিতা, অনামিকা প্রমুখদের চোখে-মুখে ছিল খুশির আমেজ। রূপসা, রৃতিকা, বর্ণা, সুস্মিতা, রাহুল, রীতমদের মত বাচ্চাদের তুলনায় প্রবীণ বিজয়কৃষ্ণ মালিক, লক্ষীনারায়ণ বাগ প্রমুখদের উচ্ছ্বাস কোনো অংশে কম ছিলনা। প্রবীণ-নবীনের যুগলবন্দী ছিল বিরল ঘটনা।
বকুলের বক্তব্য,এত আনন্দ অন্য কোনো উৎসবে পাওয়া যায়না। একই সুর অম্বিকার কণ্ঠে। তার বক্তব্য – শুধু নিজেদের গ্রামের নয়, অন্য গ্রামের বাসিন্দারাও যখন এই উৎসবে যোগ দেয় তখন তার তাৎপর্য তো অন্যরকম হতে বাধ্য। কিছুক্ষণের জন্য সবকিছু ভুলে সত্যিকারের আনন্দ পাওয়া যায় ।
গ্রামের বাসিন্দা এবং অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা উজ্জ্বল মালিক বললেন,শহরের আধুনিকতা থেকে দূরে থাকা গ্রামের বাসিন্দা আমরা। কৃত্রিমতা বর্জন করে উৎসবের মধ্যে মিলনের সুর তুলে ধরার জন্য গত চার বছর ধরে আমরা এই বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে চলেছি। নিজেদের গ্রামের সঙ্গে সঙ্গে অন্য গ্রামের বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে বসন্ত উৎসব সত্যিকারের মিলন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এটাই তো কবিগুরুর লক্ষ্য ছিল।।