এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঢাকা,২৪ অক্টোবর : শেখ হাসিনাকে অনৈতিকভাবে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর বাংলাদেশে এখন হিযবুত তেহেরিক,জামাত ইসলামি, আনসারুল বাংলা, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি(বি এন পি) প্রভৃতি ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলির হাতে । ওই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির আদর্শ আফগানিস্তানের তালিবানরা,যে কুখ্যাত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি গোটা বিশ্বে ত্রাসের সৃষ্টি করে রেখেছিল । আজ তারা আফগানিস্তানের শাসক । দেশজুড়ে মধ্যযুগীয় ইসলামি শাসন জারি করেছে তালিবান । বাংলাদেশি ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলিও তালিবানের মত ইসলামি শাসন চালু করতে বিশেষভাবে আগ্রহী । সেই লক্ষ্যে তারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের খুন,দোকান-ঘরবাড়িতে হামলা ও লুটপাট, জমিজায়গা জবরদখল থেকে হিন্দু মেয়েদের লাভ জিহাদে ফাঁসিয়ে ধর্মান্তরিত করার বৃহত্তর আকারের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে । কিন্তু সন্ত্রাসীদের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তর্জাতিক হিন্দু ধর্মীয় সংগঠন “ইসকন”৷ তাই ইসকনকে যেনতেন প্রকারে দেশে নিষিদ্ধ করতে চাইছে বাংলাদেশি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলি ।
ইসকনের বিরুদ্ধে “সংঘটিত হিংসা, হত্যা ও হত্যার হুমকি ও দেশবিরোধী কার্যকালাপ”-এর জিগির তুলে বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি চরমপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলি । রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে একটি মিছিল বের করা হয় । পরে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সাম্প্রদায়িক ও উত্তেজক ভাষণ দেয় চরমপন্থী ছাত্রনেতারা ।
সবচেয়ে হাস্যকর বিষয় হল যে ইসলামি চরমপন্থী মতাদর্শে বিশ্বাসী জঙ্গিরাই “ইসকন তুই জঙ্গি, স্বৈরাচারের সঙ্গী”, “একটা একটা ইসকন ধর, ধরে ধরে জেলে ভর”, “আমার সোনার বাংলায় ইসকনের ঠাঁই নাই”, “ইসকন আর স্বৈরাচার মিলেমিশে একাকার” ইত্যাদি উত্তেজক স্লোগান তোলে ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চরমপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা সন্ত্রাসী মাহতাপ ইসলামের কথায়,’জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় খতিব মহিবুল্লাহকে পঞ্চগড়ে ইসকন সদস্যরা অপহরণ করে নির্যাতন চালিয়েছে। এই ঘটনায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।১৭ বছর ধরে স্বৈরাচারের ছত্রছায়ায় ভারতীয় প্রভাবের মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিচালনার যে অপচেষ্টা চলছে, আমরা আগস্ট বিপ্লবের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছি ভারতের কোনো প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বাংলাদেশ চলবে না।’
সেই আরও বলেছে, ভারত এখনো ইসকনকে ব্যবহার করে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাসহ একাধিক ঘটনায় ইসকন সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই স্বৈরাচারকে যেমন বিদায় দিয়েছি, ইসকনকেও এই দেশ থেকে বিদায় জানাব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর এক ইসলামি চরমপন্থী ছাত্র সংগঠনের নেতা সাদমান আব্দুল্লাহের বক্তব্য হল, ইসকন তার শুরু থেকেই একটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে কাজ করছে। তারা ভারতীয় প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুসলিম সমাজে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গাজীপুরে ১৩ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ এবং খতিব অপহরণের ঘটনাসহ নানা অপরাধে তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।বাংলাদেশে আমরা জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে রক্ত দিয়েছি। সেই রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদী বা ইসলামবিরোধী সংগঠন তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। আমরা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি অতি দ্রুত ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।’
উল্লেখ্য,চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে খুন করে জামাত শিবির ও বিএনপির জঙ্গিরা । জঙ্গিরা তাকে হিন্দু মনে করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় । যার দায় ইসকনের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের উপরে চাপিয়ে তাকে বিনা অপরাধে কারাগারে পাঠিয়েছে মহম্মদ ইউনূসের সরকার ।
প্রসঙ্গত,সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ইসকন বাংলাদেশকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর প্রচার চালাচ্ছে ইসলামি চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি । জঙ্গিরা মিথ্যা তথ্য, ভুয়া পরিচয় ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের মাধ্যমে হিন্দু সম্প্রদায়, বিশেষত ইসকনের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে ।
ইসকন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইসকন (International Society for Krishna Consciousness) একটি আন্তর্জাতিক, অরাজনৈতিক, অহিংস, ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন। এর প্রতিষ্ঠাতা-আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ।সংস্থাটির মূল লক্ষ্য হলো ভগবদ্গীতার আদর্শ প্রচার, নৈতিকতা, সমাজসেবা, শান্তি, সহমর্মিতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রসার।
সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়,’কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ইসকন ভক্তদের বিরুদ্ধে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। যেকোনো হিন্দু ব্যক্তি যদি কোনো আইনবিরোধী ঘটনার সাথে যুক্ত হয়, তাকে ‘ইসকন সদস্য’ হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। এমনকি বিভ্রান্তি ছড়িয়ে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলা হচ্ছে, যা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি ও শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের এক পরিকল্পিত নীলনকশা।’
ইসকন বাংলাদেশ আরও জানায় যে, সংগঠনটি সর্বদা দেশের সরকার, আইন, সংবিধান ও প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানায়— এসব গুজব, অপপ্রচার ও হুমকির বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে, যাতে দেশের সার্বিক শান্তি, শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ণ থাকে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়,ইসকন বাংলাদেশের সকল ভক্ত ও অনুসারী ভগবদ্গীতার শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মচর্চা ও মানবসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত রাখবে। সংস্থাটি দেশের সর্বস্তরের মানুষকে আহ্বান জানায়,সত্য যাচাই করুন, গুজবে কান দেবেন না, শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখুন। ইসকন বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে এক শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে পারবে।।

