এইদিন ওয়েবডেস্ক,দুর্গাপুর(পশ্চিম বর্ধমান),১৮ জুলাই : ভোটার তালিকা থেকে রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের নাম বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে পথে নেমেছে এরাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস । খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জি কলকাতা ইতিমধ্যে একটা পদযাত্রাও করে ফেলেছেন । আজ শুক্রবার পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরের নেহরু স্টেডিয়ামে দলের পরিবর্তন সংকল্প সভায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশ এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিকভাবে অভিযান অব্যাহত থাকবে । পাশাপাশি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালিদের উপর নির্যাতন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এদিন মমতা ব্যানার্জির দাবিকে ধুয়ে দিয়ে বলেছেন, ‘তোষামোদের জন্য বাংলা সংস্কৃতির জন্যও বিপদ ডেকে আনছে তৃণমূল’ ।
প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘বিজেপি এমন একটা রাষ্ট্রীয় দল যার বীজ বাংলায় রোপন করা হয়েছিল। বিজেপির আদর্শ ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী নিজের রক্ত দিয়ে সিঞ্চন করে গেছেন । ডঃ মুখার্জী এক দেশ এক সংবিধানের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ওটাই বিজেপির সংকল্প হয়েছিল৷ আর আমরা সেটা পূরণ করেও দেখিয়েছি । বিজেপি বাংলা ভাষাকে প্রেরণা, পরম্পরা এবং পরিচয়ের মাধ্যম হিসেবে মানে৷ বিজেপির কাছে বাংলা অস্মিতা সর্বোপরি । দেশের যেখানে বিজেপি আছে সেখানে বাংলার সম্মান আছে। পশ্চিমবঙ্গের লোকেদের সম্মান দেওয়া হয় । কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস নিজের স্বার্থের জন্য পশ্চিমবঙ্গের পরিচয়কে নিলামে তুলে দিয়েছে ।’
প্রধানমন্ত্রীর বলেন, ‘এর জন্য এখানে অনুপ্রবেশকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে । অনুপ্রবেশকারীদেরকে ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করে দিচ্ছে । এজন্য পুরো একটা বাস্তুতন্ত্রকে এখানে খাড়া করা হয়েছে । পশ্চিমবঙ্গের এই ভূমিকা দেশের সুরক্ষার জন্য বিপদ স্বরূপ । এটা বাংলা সংস্কৃতির জন্যও বিপদ স্বরূপ । কিন্তু তোষামোদের জন্য তৃণমূল সমস্ত সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে । আজ যখন তৃণমূলের এই ষড়যন্ত্রের সকলের সামনে উন্মোচন হয়ে গেছে তখন প্রবেশকারীদের জন্য একটা নতুন আন্দোলন শুরু করেছে৷ এরা দেশের সাংবিধানিক সংস্থাকেও চ্যালেঞ্জ করছে । তৃণমূল এখন অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থনে সরাসরি প্রকাশ্যে চলে এসেছে।’
এরপর তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন,’কিন্তু আমি এই দুর্গাপুরের মাটি থেকে স্পষ্টভাবে বলতে চাই যে যারা ভারতের নাগরিক নয়, যারা অনুপ্রবেশ করে এসেছে, তাদের বিরুদ্ধে ভারতের সাংবিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে । বাংলার অস্মিতার বিরুদ্ধে যেকোন প্রকার ষড়যন্ত্রকে বিজেপি সফল হতে দেবে না ৷ এটা আপনাদের কাছে মোদীর গ্যারান্টি ।’
পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে এরাজ্যের শাসকদলকে তিনি তুলোধোনা করেছেন । প্রধানমন্ত্রীর মোদী বলেন, ‘মা-মাটি-মানুষের কথা বলা তৃণমূল সরকারের আমলে মায়েদের উপর যে অন্যায় হচ্ছে তা একদিকে যেমন কষ্ট হয় অন্যদিকে প্রচন্ড ক্রোধের সৃষ্টি হয়৷ এটা সেই ভূমিতে হচ্ছে যেখানে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী দেশকে সংস্কার দিয়েছিলেন । তিনি ভারতের প্রথম পশ্চিমী মেডিসিনের চিকিৎসক ছিলেন । আজ ওনার জন্মদিনও । কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতাল গুলিও মেয়েদের জন্য সুরক্ষিত হয় । আপনারা দেখেছেন যে ডাক্তার বেটির সঙ্গে যখন অত্যাচার হল কিভাবে টিএমসি সরকার অপরাধীদের বাঁচানোর জন্য একজোট হয়েছিল । এই ঘটনার জের মিটতে না মিটতেই আর একটা কলেজেতে এক মেয়ের উপর ভয়ংকর অত্যাচার হল । সেখানেও অভিযুক্তদের সঙ্গে তৃণমূলের সংযোগ পাওয়া গেছে । তৃণমূলের বড় বড় নেতা-মন্ত্রীরা অভিযুক্তদের পরিবর্তে নির্যাতিতাকেই দোষী সাব্যস্ত করে দিল৷ এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে । যেগুলো তৃণমূলের নির্মমতার সাক্ষী । আমাদের একজোট হয়ে এই নির্মমতা থেকে বাংলাকে মুক্ত করতে হবে ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ ভারতের সাংস্কৃতি ঐতিহ্যের অন্যতম কেন্দ্র ছিল । আজ প্রসিদ্ধ বাংলা কবি বিষ্ণু দের জন্মদিন ৷ বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য তার বিরাট অবদান ছিল । তৃণমূল আর বামপন্থীরা দীর্ঘ বছর ধরে দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে মিলিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গের সরকার চালিয়েছে । এই সময়কালে তাদের বাংলা ভাষার চিন্তা মনে আসেনি । বিজেপি সরকার এসে বাংলা ভাষাকে শাস্ত্রীয় ভাষার মর্যাদা দিয়েছে । এটা করে আমরা বিষ্ণু দের মত অনেক সাহিত্যকারদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছি ।’।

