এইদিন ওয়েবডেস্ক,বারাণসী,১৩ ডিসেম্বর : ‘কাশী বিশ্বনাথ করিডোর’ দেশকে উৎসর্গ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । সোমবার শত শত সাধু ও বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে ‘কাশী বিশ্বনাথ করিডোর’-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন । তার আগে তিনি কোতয়াল কাল ভৈরবের পূজো দেন । তারপর ললিত ঘাটে গঙ্গা স্নানের পর ছোট পিতলের কলসিতে গঙ্গাজল নিয়ে তিনি পায়ে হেঁটে বিশ্বনাথ ধামের উদ্দেশ্যে রওনা হন । বাবা বিশ্বনাথের গর্ভগৃহে পৌঁছানোর পর যথাযথ রীতি মেনে তিনি পূর্জার্চনা করেন । বিশ্বনাথ ধামের ওপর তৈরি একটি ফিল্মও দেখেন । তারপর তিনি ধাম নির্মাণকারী শ্রমিকদের মধ্যে যান । শ্রমিকদের উপর নিজের হাতে ফুল বর্ষণ করেন । শ্রমিকদের সঙ্গে একটি সেলফিও তোলেন প্রধানমন্ত্রী ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘কাশী বিশ্বনাথ করিডোর’ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ২০১৯ সালের ৮ মার্চ । উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে পুরো কমপ্লেক্সটিকে একটি বিশেষ এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছিল । তবে প্রকল্প শুরুর আগে ঘন বসতির মাঝখানে অবস্থিত কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের আশেপাশের এলাকা খালি করতে গিয়ে কার্যত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকারকে । প্রকল্পের জন্য ৩২০ টি বাড়ি অধিগ্রহণ করে প্রয়োজনীয় এলাকা প্রস্তুত করা খুব একটা সহজ কাজ ছিল না । ক্ষুব্ধ বাড়ির মালিকদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মহননের হুমকি দিয়ে অনশনেও বসেছিলেন । এরপর মূলত প্রধানমন্ত্রী মোদীর হস্তক্ষেপেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় । প্রতিবাদ ধীরে ধীরে কমতে থাকে । পরিকল্পনাটি সম্প্রসারিত হওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার সম্ভাবনা দেখে তাঁদের পৈতৃক ভবনগুলি দিতে রাজি হয়ে যান । পরিশেষে সবার সম্মতি ও সমর্থন পাওয়ার পর এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ।
বর্তমানে বিশ্বনাথ ধাম দেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক এবং সুসজ্জিত মন্দির হয়ে উঠেছে ।মূল মন্দিরের খিলানগুলির প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে কাশীর স্থাপত্য এবং আধ্যাত্মিক চেতনার অভিব্যক্তি তুলে ধরা হয়েছে । এই কমপ্লেক্সে পূণ্যার্থীদের সমস্ত রকম সুবিধার দিকেও নজর রাখা হয়েছে । কাশী বিশ্বনাথ ধামের আশপাশে ২৭ টি মন্দির ছিল । সেগুলির সংস্কার করা হয়েছে । ধামের বারাণসী গ্যালারিটি ৩৭৫ বর্গ মিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত । যেখানে একটি বহুমুখী হলও রয়েছে। পৌরাণিক ধর্মীয় কাহিনীগুলো ভবনের ভেতরের দেয়ালে চিত্রকর্মের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে । ১১৪৩ বর্গ মিটারে জুড়ে নির্মিত নগর জাদুঘরে প্রাচীন কাশীর দর্শন পাওয়া যাবে । মন্দির চত্বরের পূর্ব গেটের ঠিক বাইরে বাঁদিকে রয়েছে মুমুক্ষু ভবন । জীবনের শেষ সময় কাশীবাস করতে ইচ্ছুক এমন ৩৬ জনের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়েছে তিন তলার ঘরগুলিতে । এছাড়া ১০৬১ বর্গমিটার জুড়ে রয়েছে ট্যুরিস্ট ফ্যাসিলিটেশন সেন্টার । । এর একটি অংশে রয়েছে মণিকর্ণিকা ঘাট । পৌরাণিক এই ঘাটের আশপাশে এলোমেলোভাবে কাঠ সাজিয়ে প্রাচীন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে । এই ঘাটে আসা পূণ্যার্থীদের ব্যাবহারের জন্য একটি হল নির্মান করা হয়েছে । স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এই হলটি বাণিজ্যিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে বলে মনে করা হচ্ছে ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বপ্নের প্রকল্প কাশী বিশ্বনাথ ধামকে শুধুমাত্র মন্দিরের দৃষ্টিকোণ থেকেই নয়,যাত্রী সুবিধার দিকটিও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । পুরো কমপ্লেক্স জুড়ে ট্যুরিস্টদের আনন্দ-কাননের অনুভূতি দেবে । শুধু লতা ও রুদ্রাক্ষ গাছই থাকবে না বরঞ্চ অশোক, নিম ও কদম্বের ছায়াও মিলবে চত্বরে । আগে পাঁচ হাজার বর্গফুটে তৈরি মন্দির কমপ্লেক্স এখন পাঁচ লাখ বর্গফুট জুড়ে বিস্তৃত ।সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আগে গঙ্গার ঘাট থেকে স্নান করে সরু রাস্তা দিয়ে মন্দিরে আসতে হত । এখন গঙ্গা ঘাটের সঙ্গে বিশ্বনাথ মন্দির সরাসরি যুক্ত হয়েছে । এছাড়া পাইপলাইনের মাধ্যমে বাবা বিশ্বনাথের সাথে গঙ্গার সরাসরি সংযোগ করা হয়েছে । ‘কাশী বিশ্বনাথ করিডোর’ প্রকল্পে ব্যায় হয়েছে ৯০০ কোটি টাকা ।।