দিব্যেন্দু রায়,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২১ এপ্রিল : একদিকে তীব্র গরম,তার উপর রমজান মাস চলায় বন্ধ রয়েছে রক্তদান শিবির । ফলে রক্ত সংকটে ভুগছে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের হেমরাজ ব্লাড সেন্টার । আর এই পরিস্থিতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক শ্রেণীর দালাল চক্র । তারা ইউনিট প্রতি রক্তের দাম ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করছে বলে অভিযোগ । রোগীকে বাঁচাতে বাধ্য হয়ে অত টাকা দিয়েই রক্ত কিনতে হচ্ছে রোগীর আত্মীয়দের । কিন্তু রক্ত কেনার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে চরম সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে দরিদ্র পরিবারগুলিকে । কাটোয়া মহকুমা ভলান্টিয়ার্স ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনর সদস্য জয়দেব দত্ত বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে কাটোয়া হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের জোগান নেই । আর সেই সুযোগে এক শ্রেণীর মানুষ চড়া দামে রক্ত বিক্রি করছে বলে জানতে পারছি । বিষয়টি নজর দেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি ।’
কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে রোজ গড়ে প্রায় ২৫ বোতল রক্ত লাগে । হাসপাতালের ব্লাড সেন্টার থেকেই সেই রক্তের যোগান দেওয়া হয় । কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরেই ব্লাড সেন্টারে রক্তের আকাল চলছে । বৃহস্পতিবার দেখা গেল এবি নেগেটিভ গ্রুপের এক ইউনিট রক্ত মজুত রয়েছে । অন্যান্য গ্রুপের রক্তের ভাঁড়ার শূন্য ।
কাটোয়ার সিঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা খুকুমনি ঘোষ বলেন, ‘আমার শাশুড়ি মমতা ঘোষের পেটে টিউমার অপারেশন হয়েছে । দু’ বোতল রক্তের প্রয়োজন হয় । কিন্তু হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত নেই । রক্তের প্রয়োজন শুনে হাসপাতাল চত্বরে একটি চায়ের দোকানের মালিক রক্ত ব্যবস্থা করে দেবে বলে জানায় । কিন্তু তার জন্য সে বোতল পিছু রক্ত ৫ হাজার টাকা করে দাবি করে । কিন্তু অত টাকা কোথায় পাবো আমরা ? খেটে খাওয়া সংসার আমাদের । তাই শাশুড়িকে রক্ত না দিয়েই ছুটি করে বাড়ি নিয়ে আসি ।’
স্থানীয় সুত্রে খবর,দালাল চক্র রক্তদাতাকে রোগীর আত্মীয় সাজিয়ে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে রক্ত দিচ্ছে । তবে রক্ত দেওয়ার আগেই লেনদেন হয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল চত্বরে বা হাসপাতালের বাইরে । হেমরাজ ব্লাড সেন্টারের মেডিক্যাল অফিসার বাণীব্রত আচার্য বলেন,’এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা কি করে বুঝবো যে রক্ত বিক্রি হচ্ছে না ডোনেট করা হচ্ছে ? তবে ব্ল্যাড সেন্টারে দালালদের কারবার চলে না ।’ জানা গেছে,এদিনেও থ্যালাসেমিয়া রোগীর জন্য দুহাজার টাকা দিয়ে এক বোতল রক্ত কিনতে হয়েছে বলে দাবি করেছেন রোগীর পরিবার । বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের সুপার সৌভিক আলম ।।