প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৩ জুলাই : সন্তানের জন্ম নেওয়া পরেই তাকে অন্যজনের কাছে হস্তান্তর করে দেওয়ার পরিকল্পনা আগেই সেরে রেখেছিলেন প্রসূতি।সেই মতো নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে অন্য মহিলার নাম নিয়ে প্রসূতি ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে।তবে এত পরিকল্পনা এঁটেও প্রসূতি তাঁর কার্যসিদ্ধি আর করতে পারলেন না।অন্যর হতে সদ্যোজাতকে হস্তান্তরের আগেই প্রসূতি মায়ের এই ছক বানচাল করে দেন হাসপাতালেরই নার্সরা। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার পূর্ব বর্ধমানের কালনা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে।ঘটনা বিষয়ে কালনা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন হাসপাতালেরই সহকারী সুপার । পুলিশ অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে ।
পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায় জানা গিয়েছে,অভিযুক্ত প্রসূতির বাড়ি মেমারি থানা এলাকায় । তিনি নিজের নাম পরিচয় গোপন রেখে সুমিতা যাদব নাম নিয়ে শনিবার কালনা হাসপাতালে ভর্তি হন ।সন্তান প্রসব করার সময় হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালের তরফে সাথে সাথেই প্রসূতিকে ভর্তি করে নেওয়া হয়। ওইদিন দুপুরেই প্রসূতি একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন । তার পরেই হাসপাতালের নার্সরা প্রসূতির কাছে তাঁর স্বামীর নাম জানতে চান।তখন প্রসূতি হাসপাতালে রেজিষ্টারে উল্লেখ থাকা স্বামীর নাম না বলে ভুল নাম বলেন।বিষয়টি সন্দেহ জাগায় নার্সদের ।তারপরেই নার্সরা আর দেরি না করে প্রসূতির তাঁর স্বামীর ভুল নাম বলার বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান । নার্সদের কাছ থেকে এমন চাঞ্চল্যকর অভিযোগ পেয়েই তড়িঘড়ি তদন্তে নামে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। তদন্ত নেমে কর্তৃপক্ষ জেরা শুরু করতেই প্রসূতি নিজের আসল নাম পরিচয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান।
কর্তৃপক্ষ জানতে পারেন,ওই প্রসূতির আসল নাম মৌমিতা পূজার।তিনি মেমারি থানা এলাকার বাসিন্দা।জেরায় শিশু সন্তান স্তান্তরের ছক ফাঁস হয়ে গিয়েছে বুঝতে পেরে প্রসূতি কর্তৃপক্ষকে জানান,তাঁর তিন সন্তান রয়েছে।সেই কারণে এবার জন্মদেওয়া সন্তানকে তিনি তাঁর পরিচিত সাবিত্রী যাদবের বউমা কে দিয়ে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন । তাই তিনি হাসপাতালের খাতায় নিজের আসল নাম গোপন করে সাবিত্রী যাদবের বউমার নাম লখিয়ে ভর্তি হয়ে ছিলেন । আইনমাফিক সাবিত্রীর বউমাই যাতে তাঁর সন্তানের মা হিসাবে বৈধ পরিচয় পায় পাই এই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন বলে প্রসূতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান । এর পরেই কালনা সুপার স্পেশলটি হাসপাতালের সহকারী সুপার গৌতম বিশ্বার ঘটনা সবিস্তার উল্লেখ করে থানায় অভিযোগ জানান ।
সাবিত্রী যাদব যদিও এদিন বলেন,’শিশু সন্তান কেনা বা বিক্রীর কোন ব্যাপার নেই । আমার বউমার কোনও সন্তান নেই।তাই মৌমিতা তাঁর সদ্যোজাত সন্তানকে আমাদের দেবে বলে জানিয়েছিল। তাই আমার বউমার নাম নিয়ে মৌমিতা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ।’ পুলিশ অবশ্য হালকা ভাবে বিষয়টিকে নিতে নারাজ ।অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্তে নেমে খতিয়ে দেখছে সদ্যোজাতকে বিক্রির ছক কষেই প্রসূতি এই কাণ্ড ঘটিয়েছে কি না ।।