এইদিন ওয়েবডেস্ক,শিলিগুড়ি,০৮ আগস্ট : গত বৃহস্পতিবার কোচবিহারের দিনহাটার নাজিরহাট-২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি পঞ্চায়েত সদস্য যুথিকা বর্মণ, বিজেপি ৬ নম্বর মণ্ডল মহিলা মোর্চার সভানেত্রী মলিনা বর্মণ, বিজেপি কর্মী জিতেন্দ্র নাথ বর্মণ এবং বিজেপির প্রাক্তন মণ্ডল সভাপতি তরনী কান্ত বর্মণের বাড়িতে হামলা চালায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা । পরিবারের সদস্যদের ব্যাপক মারধর করা এবং সেই সময় দুষ্কৃতীরা ৮ মাসের গর্ভবতী ওই বধূর পেটে লাথি মারে বলে অভিযোগ । অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় পেট ধরে যন্ত্রণায় কাতরানো ওই অন্তঃসত্ত্বা মহিলার ভিডিও এক্স-এ শেয়ার করে তীব্র নিন্দা জানান রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার ।
আজ শুক্রবার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে ওই মহিলাকে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন এবং তিনি একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন ৷ শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’গত ৬/৮/২০২৫ তারিখে কোচবিহার জেলার দিনহাটা বিধানসভার সাহেবগঞ্জ থানার অন্তর্গত শালমারা গ্রামে শুধুমাত্র বিজেপি সমর্থক হওয়ার অপরাধে শ্রী জিতেন্দ্র নাথ বর্মণের বাড়িতে চড়াও হয়ে তৃণমূলের হার্মাদ বাহিনী ওনার ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মেয়ে; পূরবী বর্মণ কে পেটে লাথি মারে। লাথির আঘাতে ওই অন্তঃসত্তা মহিলার রক্তক্ষরণ শুরু হয় ও ব্যথায় কাতরাতে থাকেন। আমি ঘটনার সম্বন্ধে অবগত হওয়ার পর, বেহাল সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর ভরসা না রেখে প্রথমেই ওনার সু-চিকিৎসার জন্যে শিলিগুড়ির এক বেসরকারি হাসপাতালে ওনাকে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা করাই।’
তিনি আরও লিখেছেন,’এর পর দোষীদের এই জঘন্য অপরাধের জন্য প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করতে পরিবার কে থানায় FIR দায়ের করার ব্যাপারে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়, একইসাথে জাতীয় মহিলা কমিশন ও জাতীয় তফসিলি জাতি কমিশনে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে এই বিষয়ে তথ্য সমগ্র সহ মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে। ভালো খবর হলো পূরবী বর্মণ, যাঁর সন্তান প্রসবের তারিখ ছিল ২০/৮/২০২৫, ওনার আজ এক কন্যা সন্তান জন্ম হয়েছে। এই মুহূর্তে ওরা স্থিতিশীল। আমি এই পুরো ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না, তবে কথা দিচ্ছি যতক্ষণ না পর্যন্ত অপরাধীরা শাস্তি পাচ্ছে, ততক্ষণ আইন সম্মত উপায়ে যা যা করণীয় তার ব্যবস্থা করবো।’
নবজাতক ও চিকিৎসাধীন মায়ের ছবিসহ পাশাপাশি বিরোধী দলনেতা সাহেবজঞ্জ থানায় দায়ের করা এফআইআরের কপিটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন । যেখানে ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে । আসামিদের নাম : উত্তম বর্মন, মানিক বর্মন, মিঠুন বর্মন, সুধা বর্মন, পরেশ বর্মন,খগেন বর্মন, সুধাংশু বর্মন, মনভোলা বর্মন, মদন বর্মন, মৃদুল বর্মন, রঞ্জিত বর্মন, মফিজ শেখ, শহিদুল ইসলাম, আজিজ শেখ, জামাল হোসেন, নবীরউদ্দিন মিয়া এবং দোলন বর্মন (ডনি)সহ আরো অনেকে। যাদের দেখলে ‘চিনতে পারবো’ বলে জানিয়েছেন আবেদনকারী কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার নোটাফালা গ্রামের বাসিন্দা জয়ন্তী বর্মন৷
অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন,’গত ৬/৮/২০২৫ ইং তারিখে অভিযুক্তরা সন্ধ্যা পাঁচটার সময় তার বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ করে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দেয় । প্রতিবাদ করলে তারা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে চলে যায়। এরপর পরের দিন, ৭/৮/২০২৫ ইং তারিখে ফের তারা সকাল ১১টা ২০ মিনিট নাগাদ সশস্ত্র অবস্থায় বাড়িতে ঢুকে পড়ে ।অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে । এক নম্বর আসামি উত্তম বর্মন অন্তঃসত্তা মেয়ে পূরবী বর্মনের লাথি মারে এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলিয়া দেয়। মেয়ের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। এদিকে মানিক বর্মন ও মিঠুন বর্মনের প্ররোচনায় অন্যান্য আসামিরা বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র ভাঙচুর করে । ঘরের আলমারিতে থাকা এক লক্ষ দশ হাজার টাকা এবং তিন ভরি সোনার গয়না ছিনতাই করে । তাকে ও তার জাকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে বন্দুকের বাট ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি মারতে থাকে । চিৎকার চেঁচামেচি করলে গ্রামের লোকজন ছুটে আসলে আসামিরা শূন্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে পালিয়ে যায়।
তার আরও অভিযোগ যে তার মেয়ের বিয়ের প্রাক্কালে একই আসামিরা অনুরূপভাবে তাদের বাড়িঘর ভাঙচুর, টাকা ছিনতাই, গবাদি পশু, গরু, ছাগল ছিনতাই করে ও মেয়ের বিয়ে ভাঙার চেষ্টা করে। অভিযুক্তদের মধ্যে মদন বর্মন বা মদনমোহন বর্মণ হলেন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস অঞ্চল সভাপতি ৷ উল্লেখ্য, সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কায় মাস দুয়েক আগে কলকাতা হাইকোর্ট নাজিরহাটের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য যুথিকা বর্মকে পুলিশি নিরাপত্তার নির্দেশ দিয়েছল । কিন্তু সেই নিরাপত্তার মধ্যেই আজকের এই হামলা পুলিশের ভুমিকা ফের একবার প্রশ্নচিহ্নের মুখে তুলে দিল ।।