শ্যামসুন্দর ঘোষ,মন্তেশ্বর(পূর্ব বর্ধমান),২৮ নভেম্বর : মায়ের বাবা নিজের হাতে লাগিয়েছিলেন দুটি নারকেল গাছ । বর্তমানে প্রকান্ড ওই দুই নারকেল গাছে ডাবে ভর্তি । এদিকে পরিবারে এক সদস্যের বিয়ের অনুষ্ঠান রয়েছে ৷ দ্রুত বাড়ি নির্মান জরুরি হয়ে পড়েছিল । সেই কারনে ভিটেতে দ্বিতল বাড়ি নির্মানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মন্তেশ্বরে দাউকাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম পাল । কিন্তু বাধ সাধে মাতামহের লাগানো নারকেল গাছ দুটি । দীর্ঘ কয়েকদিন ধরে এনিয়ে পরিবারে আলাপ আলোচনা চলে । সকলেই গাছ দুটি কেটে ফেলার পক্ষ মত দেন । এমনকি ছেলেকে দুশ্চিন্তায় দেখে অরিন্দমবাবুর মা রেখারানীদেবী পর্যন্ত গাছ দুটি কেটে ফেলার অনুমতি দিয়ে দিয়েছিলেন । কিন্তু দাদুর স্মৃতিকে চিরতরে হারিয়ে ফেলতে চাননি ওই পুলিশ আধিকারিক । শেষে গাছ দুটিকে জীবিত রেখেই দ্বিতল বাড়ি নির্মান করিয়ে ফেলেন তিনি । এখন বাড়ির ছাদ ফুঁড়ে উঠে যাওয়া নারকেল গাছ দুটি আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে এলাকায় । অনেকে অভিনব ওই বাড়িটি দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন ।
অরিন্দমবাবু বলেন,’শুধু দাদুর স্মৃতিই নয়,কথায় বলে একটি গাছ একটি প্রাণ । পরিবেশে গাছের কি অবদান সকলেই জানেন । তাছাড়া একটি নারকেল গাছ থেকে আমরা বহু ভাবে উপকৃত হই । ডাবের জল,নারকেল ও নারকেল গাছের পাতা থেকে ঝাঁটা তৈরি হয় । সেই কারিনেও গাছ দুটি কাটতে মন সায় দেয়নি ।’
জানা গেছে,হাওড়া পুলিশ কমিশনারেটের দাসনগর থানার এএসআই পদে কর্মরত রয়েছেন মন্তেশ্বরে দাউকাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা অরিন্দম পাল । বাড়িতে রয়েছেন বাবা বলরাম পাল,মা রেখারানী দেবী, স্ত্রী ও এক কন্যা । কর্মসূত্রে তিনি হাওড়াতেই থাকেন । পরিবারে বিয়ের অনুষ্ঠান থাকায় মাস খানের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন অরিন্দমবাবু । তিনি বলেন,’মন্তেশ্বরে বাড়ি নির্মান জরুরি হয়ে পড়েছিল । কিন্তু একে জায়গা সংকীর্ণ তার উপর দাদুর নিজের হাতে লাগানো নারকেল গাছ দুটি থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল । আমি গাছদুটি রেখে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলাম । তখন পরিবারের অনান্যরা এবং এমনকি রাজমিস্ত্রীরা পর্যন্ত বলেছিল গাছ দুটি থাকলে নাকি বাড়ির ক্ষতি হবে । শেষ পর্যন্ত আমি গাছ দুটি রেখেই বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করতে বলি মিস্ত্রিদের । যখন ক্ষতি হবে দেখা যাবে,এখন তো কোনো ক্ষতি করেনি গাছ দুটো ।’ তিনি আরও জানান,বর্ষার সময় গাছ বেয়ে যাতে জল চুঁইয়ে ঘরে না আসতে পারে তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
এদিকে দুটি গাছ বাঁচানোয় ওই পুলিশ আধিকারিকের প্রশংসা করেছেন এলাকায় ‘গাছ মাস্টার’ বলে পরিচিত রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার প্রাপ্ত অরূপ চৌধুরী । তিনি বলেন,’ওনার এই মানসিক প্রশংসার যোগ্য । তাঁর এই প্রচেষ্টা এলাকায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে ।’।