এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২১ আগস্ট : হৃষ্টপুষ্ট চেহেরারা সাদা পোশাকের এক পুলিশকর্মী রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে । পিছনে ক্যামেরা ও বুম নিয়ে ছুটছেন সাংবাদিকরা । সদ্য বৃষ্টিতে ভেজা রাস্তায় পিছলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় জনৈক এক সাংবাদিককে বলতে শোনা যায়,’পড়ে যাবেন…অনুপবাবু…অনুপবাবু ।’ আর এক সাংবাদিক বলেন, ‘অনুপবাবু…অনুপবাবু…একটু দাঁড়িয়ে যান । পড়ে যাবেন…পড়ে যাবেন ।’ কিন্তু কে শোনে কার কথা । টালমাটাল হয়ে ওই পুলিশকর্মী তখন একটা বহুতল ভবনের গেটের দিকে পড়িমরি করে সমানে দৌড়াচ্ছেন । ওই অবস্থাতেই সাংবাদিকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন,’সঞ্জয়কে কবে থেকে চিনতেন ?’ কেউ বলেন,’পড়ে যাবেন…আস্তে যান ৷’ সেই সময় পিছন থেকে রব ওঠে, ‘ধর ধর’ । শেষে ভবনের নিরাপত্তা রক্ষীকে কার্যত ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে সাংবাদিকদের ক্যামেরা ও প্রশ্নবাণ থেকে বাঁচাতে সক্ষম হন তিনি ।
ভিডিওটি ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে । পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মিডিয়া কো-ইনচার্জ কেয়া ঘোষ ভিডিওটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন । তিনি লিখেছেন,’দেখুন কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্তকে । যখন সাংবাদিকরা আরজি কর মামলার অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তখন তিনি পালিয়ে যান।’
আসলে আরজি কর হাসপাতালের তরুনী চিকিৎসক ‘তিলোত্তমা’ (মৃতার এই নাম দিয়েছেন নেটিজেনরা)কে ধর্ষণ ও নৃশংস বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে । এই মামলায়
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্তকে মঙ্গলবার সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করেছিল সিবিআই । কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তলব পেয়ে দুপুরেই সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছন অনুপ দত্ত । কিন্তু তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছনোর সময় সাংবাদিকরা তার পিছু নেয় । সাংবাদিকরা তাঁর কাছে জানতে চান, তিনি সঞ্জয় রাইকে চিনতেন কি না? এই প্রশ্ন শুনেই পড়িমড়ি করে ছুটে সিজিও কমপ্লেক্সের ভিতরে কোনওক্রমে ঢুকে যান অনুপ দত্ত।
প্রসঙ্গত,আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রাই নামে ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসে সিবিআইয়ের তদন্তে । সিবিআই জানতে পেরেছে যে একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার হয়েও কলকাতা পুলিশের অন্দরে সঞ্জয়ের ছিল প্রবল দাপট । সে সিভিক কলকাতা পুলিশের ফোর্থ ব্যাটেলিয়নের ব্যারাকে থাকত । পুলিশ ওয়েলাফেয়ার বোর্ডের হয়ে কাজ করত সঞ্জয়। বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে অবাধ যাতায়াত ছিল তার। কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্তই সঞ্জয়কে কলকাতা পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ডের কাজে যুক্ত করতে প্রভাব খাটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। পুলিশের বাইক চড়েই ঘুরে বেড়াত সঞ্জয়। পুলিশকর্মী থেকে বাকি সিভিক ভলেন্টিয়াররাও সঞ্জয়কে সমঝে চলত । কলকাতা পুলিশে তার এই প্রবল দাপটের নেপথ্যে ছিল এএসআই অনুপ দত্তর প্রশ্রয় । সেই কারনে ধৃত সঞ্জয় রাই সম্পর্কে তথ্য জানতে এবং আরজি করের তরুনী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যার পর অনুপ দত্তর কি ভূমিকা ছিল তা জানতে সিবিআই তাকে মঙ্গলবার সিজিও কমপ্লেক্সে তলব করেছিল । দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়েছে তাকে । কিন্তু মিডিয়ার ক্যামেরা এবং সাংবাদিকদের প্রশ্নবাণের মুখোমুখি হওয়া থেকে বাঁচতে অনুপ দত্তর ‘দে-দৌড়’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর কেড়েছে ।।