এইদিন ওয়েবডেস্ক,ঘোর(আফগানিস্তান),২৮ জানুয়ারী : সুইডেন এবং হল্যান্ডে কোরান পোড়ানোর প্রতিবাদে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করছে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন তালিবান । এলাকার ব্যবসায়ী ও গৃহস্থ ব্যক্তিদের রীতিমতো ভয় দেখিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে । শুক্রবার নামাজের পর ঘোর প্রদেশের কেন্দ্রে কোরান পোড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় । ওই বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন তালিবানের তথ্য ও সংস্কৃতির প্রধান আব্দুল হাই জাইম । তিনি সমাবেশে বলেছেন,’ঘোরের লোকেরা কাফেরদের সামনে আত্মহত্যা করতে প্রস্তুত ।’ তালিবানের ওই নেতার ঘোষণার পর এলাকার বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছেন । তাঁদের আশঙ্কা কোরানের প্রতি আনুগত্য দেখানোর জন্য সাধারণ মানুষকে আত্মহত্যায় বাধ্য করতে পারে তালিবানরা ।
আফগান মিডিয়া রিপোর্টে জানা গেছে,ঘোর প্রদেশের কেন্দ্রে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল এবং এই প্রদেশের তালিবান কর্মকর্তা এবং কমান্ডারদের বক্তৃতার মাধ্যমে শেষ হয়েছিল । ঘোরের তালিবান পুলিশ সদর দফতরের মাদকবিরোধী পরিচালক মৌলভি আব্দুল কাদির ওকাশে বক্তব্য রাখার সময় কোরান পোড়ানো দুই সুইডিশ ও ডাচ রাজনীতিবিদকে তালিবানের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি করেছেন । তাদের তুলে দেওয়া না হলে সুইডেন ও নেদারল্যান্ডস মুসলমানদের দ্বারা হুমকির মুখে পড়বে বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি ।
শুধু ঘোর প্রদেশই নয়,তালিবানরা দেশের ১৭ টি প্রদেশ শুক্রবার নামাজের পর বিক্ষোভে অংশ নিতে বাধ্য করেছে সাধারণ মানুষকে । সামাঙ্গন, বালখ এবং জাওজান প্রদেশের বেশ কয়েকজন ইমাম বলছেন যে তালিবান যোদ্ধারা তাদের জুমার নামাজ পড়ার পর সুইডেন বিরোধী মিছিলে অংশ নিতে বাধ্য করেছিল। তালিবানরা তাদের হাতে একটা করে পতাকা ধরিয়ে দেয়,কিছু স্লোগান শিখিয়ে দেয় এবং তাদের নির্দেশ দেয় তারা যেন সুইডেনকে অভিশাপ দেয় এবং তালিবানদের সমর্থনে তাদের আওয়াজ তোলে ।
বালখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফ শহরের বাসিন্দা হাবিবুল্লাহ সংবাদিকের কাছে বলেছেন, বৃহস্পতিবার তালিবানরা বালখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরিফ শহরের সমস্ত দোকানদারদের নির্দেশ দেয় যে তারা যদি বিক্ষোভে অংশ না নেয় তবে তাদের দোকান খোলার অধিকার চিরতরে কেড়ে নেওয়া হবে ।
মাজার-ই-শরীফ শহরের জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল করিম সাংবাদিকদের বলেছেন,’জুমার নামাজের পর তালেবান যোদ্ধারা মসজিদ ও গলি থেকে মুসল্লি ও যুবকদের জোর করে তুলে নিয়ে যায় । বিক্ষোভে অংশগ্রহণের জন্য তাদের হাতে অস্ত্র ধরিয়ে দেওয়া হয় ।’ তিনি আরও বলেন,’তালিবান যোদ্ধারা জুমার নামাজের সময় পুলিশ প্রধান এবং মসজিদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ঘোষণা করেছিল যে এলাকার মানুষকে নামাজের পরে বাধ্যতামূলক ভাবে বিক্ষোভে অংশ নিতে হবে । অন্যথায় তাদের তালিবানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির দ্বারা “আইনি” শাস্তির মুখে পড়তে হবে ।’ সামাঙ্গন প্রদেশের কেন্দ্র আইবাকের বাসিন্দারাও একই অভিযোগ করেছেন ।
জাওজান প্রদেশের রাজধানী শাবেরহান শহরের বাসিন্দা সৈয়দ হামিদুল্লাহ বলেছেন,’আমির আলী শির নাওয়াই’ মসজিদের ইমাম জুমার নামাজের খুতবা চলাকালীন তালেবানের ঘোষণাপত্র পড়েছিলেন । তিনি ঘোষণা করেন,’জুমার নামাজের পরে সমস্ত নামাজিদের সুইডেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশগ্রহণ করতে হবে । পুলিশ এবং গোয়েন্দা সদর দফতরের গাড়ি আপনাকে বিক্ষোভ সমাবেশে নিয়ে যাবে । যদি কোনো ব্যক্তি বিক্ষোভে অংশগ্রহণের বিরোধিতা করে, তাহলে পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগের বাহিনী তাদের গ্রেপ্তার করবে । তারপর তাদের আইনি সুবিধা পর্যন্ত দেওয়া হবে না ।’।