এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),১৯ সেপ্টেম্বর : মাঝে সাত বছরের শিশুপুত্র ৷ তার এক হাত ধরে টানছেন মা । অন্যহাত ধরে আছেন বাবা ৷ কেউই একমাত্র সন্তানকে ছাড়তে রাজি নয় । মাঝে শিশুটি তখন কাঁদোকাঁদো মুখে বাবা মায়ের কীর্তি দেখছে ৷ পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা আদালত চত্বরে বিবাহ বিচ্ছিন্ন এই দম্পতির মধ্যে তীব্র উত্তেজনাময় পরিস্থিতি দাঁড়িয়ে দেখছে বেশ কিছু আইনজীবী, ল’ক্লার্ক সহ সাধারণ মানুষ । কিন্তু পারিবারিক বিবাদের কারনে শিশুটিকে উদ্ধার করতে কেউই এগিয়ে যাওয়ার সাহস করেননি । অবশেষে শিশুর মা আমিনা খাতুন তার প্রাক্তন স্বামী সৈয়দ আজিজুল রহমানের হাত থেকে ছেলেকে ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হন । এরপর আমিনা তার ছেলেকে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করেন । পিছু পিছু দৌড়ান আজিজুল রহমানও । কিন্তু ছেলেকে আর ফিরে পাননি তিনি । সন্তানকে না পেয়ে শিশুর মত কাঁদতে শুরু করেন আজিজুল । আজ শুক্রবার এই মর্মস্পর্শী ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় পড়ে যায় এলাকায় ।
আজিজুল রহমানের আইনজীবী মহম্মদ সাদ্দিক হোসেন বলেছেন,’এভাবে সন্তানকে প্রকাশ্যে তার বাবার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না ৷ আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’
জানা গেছে,পূর্ব বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম থানার কেতুগ্রামের মসজিদ পাড়ায় বাপেরবাড়ি আমিনা খাতুন নামে বছর পচিশের ওই বধূর। অন্যদিকে মুর্শিদাবাদ জেলার বড়েঞা থানার সুন্দরপুর গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আজিজুল রহমান । ২০১৫ সালের জুলাই মাসে তাদের দেখাশোনা করে বিয়ে হয়৷ আজিজুল আগে কাতারে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন । এখন তিনি ভিন রাজ্যে কাজ করেন । দম্পতির মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত হল পরকীয়া সন্দেহ । আমিনার কথায়,’সন্দেহের বশে আমার উপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালাত আমার স্বামী । এরপর গত ২৭ জুন ছেলেকে রেখে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় । বাধ্য হয়ে আমি ছেলেকে ফিরে পেতে কাটোয়া মহকুমা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের দ্বারস্থ হই ।’
জানা গেছে,আদালতেতর নির্দেশে ছেলেকে সাথে নিয়ে কাটোয়ায় আসেন সৈদয় আজিজুল রহমান। আদালতে শুনানির শেষে ছেলের অধিকার নিয়ে বেধে যায় হুলুস্থুল কান্ড । আমিনার আইনজীবী ধীরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান,আদালত মামলাটি স্থগিত করে দিয়েছে ৷ তবে সন্তান কার কাছে থাকবে তা এখনও ঠিক হয়নি৷
এদিকে শুনানি শেষে আজিজুল রহমান ছেলেকে নিয়ে মুর্শিদাবাদে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন । ঠিক তখনই ছেলেকে ছোমেরে নিয়ে ছুটে পালিয়ে যান আমিনা খাতুন । আজিজুল ছেলেকে ফিরে পেতে তার পিছু পিছু দৌড়ান । কিন্তু আমিনা তাঁর ছেলেকে সাথে আসা পরিবারের লোকজনদের দিয়ে তাকে কোথাও লুকিয়ে রাখতে সক্ষম হন । আজিজুল আদালত চত্বরে হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকেন ছেলের সন্ধানে । এমনকি তিনি কান্নাকাটি শুরু করে দেন। কিন্তু ছেলেকে আর ফিরে পাননি । আজিজুল জানান যে ছেলেকে ফিরে পেতে যতদূর সম্ভব আইনি লড়াই চালাতে হয় তা চালিয়ে যাবেন । অন্যদিকে আমিনা খাতুন জানান, তিনি কোনো অবস্থাতেই ছেলেকে আর ছাড়বেন না ।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কাটোয়ার মহকুমা শাসক অহিংসা জৈন বলেন,’আদালতের ভিতরে কিছু ঘটেনি । বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি৷’।