প্রশ্ন : বেদান্তের মূল বক্তব্যটি কি সংক্ষেপে ও সহজভাবে বলতে পারেন ?
স্বামী বিবেকানন্দ : আমি একটি গল্প বলিতেছি । শিকার-অন্বেষণে আসিয়া এক সিংহী একপাল মেষ আক্রমণ করিল। শিকার ধরিবার জন্য লাফ দিতে গিয়া সে একটি শাবক প্রসব করিয়া সেখানেই মৃত্যুমুখে পতিত হইল। সিংহশাবকটি মেষপালের সহিত বর্ধিত হইতে লাগিল। সে ঘাস খাইত এবং মেষের মতো ডাকিত। সে মোটেই জানিত না যে, সে সিংহ। একদিন এক সিংহ সবিস্ময়ে দেখিল যে, মেষপালের মধ্যে একটি প্রকাণ্ড সিংহ ঘাস খাইতেছে এবং মেষের মতো ডাকিতেছে। ঐ সিংহকে দেখিয়া মেষের পাল এবং সেই সঙ্গে ঐ সিংহটিও পলায়ন করিল। কিন্তু সিংহটি সুযোগ খুঁজিতে লাগিল, এবং একদিন মেষ-সিংহটিকে নিদ্রিত দেখিয়া তাহাকে জাগাইয়া বলিল—’তুমি সিংহ । সে বলিল, ‘না’, এই বলিয়া মেষের মতো ডাকিতে লাগিল। কিন্তু আগন্তুক সিংহটি তাহাকে একটি হ্রদের ধারে লইয়া গিয়া জলের মধ্যে তাহাদের নিজ নিজ প্রতিবিম্ব দেখাইয়া বলিল, ‘দেখ তো, তোমার আকৃতি আমার মতো কিনা !’ সে তাহার প্রতিবিম্ব দেখিয়া স্বীকার করিল যে, তাহার আকৃতি সিংহের মতো। তারপর সিংহটি গর্জন করিয়া দেখাইল এবং তাহাকে
সেইরূপ করিতে বলিল। মেষ-সিংহটিও সেইরূপ চেষ্টা করিতে লাগিল এবং শীঘ্রই তাহার মতো গভীর গর্জন করিতে পারিল । এখন সে আর মেষ নয়, সিংহ।
বন্ধুগণ,আমি আপনাদের সকলকে বলিতে চাই যে, আপনারা সকলে সিংহের মতো পরাক্রমশালী। যদি আপনাদের গৃহ অন্ধকারাবৃত থাকে,তাহা হইলে কি আপনারা বুক চাপড়াইয়া ‘অন্ধকার, অন্ধকার’ বলিয়া কাঁদিতে থাকিবেন? তাহা নয়। আলো পাইবার একমাত্র উপায় আলো জ্বালা, তবেই অন্ধকার চলিয়া যাইবে । ঊর্ধ্বের আলো পাইবার একমাত্র উপায় অন্তরের মধ্যে আধ্যাত্মিক আলো জ্বালা । তবেই পাপ ও অপবিত্রতারূপ অন্ধকার দূরীভূত হইবে । তোমার উচ্চ প্রকৃতির বিষয় চিন্তা কর ; হীনতার কথা ভাবিও না ।।
“উদ্বোধন কার্যালয়” কলকাতা থেকে প্রকাশিত “বেদান্ত কি এবং কেন(প্রশ্নোত্তর) স্বামী বিবেকানন্দ” থেকে সংগৃহীত ।