জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),১৯ মে : অন্যান্য দিনের মত আজ শুক্রবার সকালে পূর্ব বর্ধমান জেলার পশ্চিম মঙ্গলকোটের গণপুর ফুটবল ময়দানে কোচ প্রেমানন্দ মুখার্জ্জীর তত্ত্বাবধানে ওরা তখন অনুশীলনে মত্ত, সংখ্যায় প্রায় ৬০-৭০ জন। বিভিন্ন কারণে কয়েকজন আসতে পারেনি। হঠাৎ মাঠের পাশে এসে দাঁড়ালো পুলিশের স্টিকার লাগানো একটা চারচাকা গাড়ি। ক্ষণিকের জন্য কিছুটা ভয়ে ও কিছুটা বিস্ময়ে ওদের অনুশীলনে ছেদ পড়ল। অবাক হয়ে ওরা তাকিয়ে দেখল গাড়ি থেকে ট্রাকস্যুট-শার্ট ও স্পোর্টস সু পড়ে নামছেন মঙ্গলকোট থানার আইসি পিণ্টু মুখার্জ্জী। পরিচিত মুখ। মাত্র কয়েকদিন আগেই উনাকে ওরা দেখেছে।আইসি সাহেব ওদের জন্য নিয়ে এসেছেন জার্সি, খেলার প্যাণ্ট ও ফুটবল। মুহূর্তের মধ্যে পরিবেশটাই পাল্টে গ্যালো। ওদের চোখে-মুখে ঝরে পড়ল খুশির আমেজ।
ওরা পশ্চিম মঙ্গলকোটের গণপুর নরেন্দ্র স্মৃতি ফুটবল ক্লাবের কল্যাণী, পূজা, পূর্ণিমা, মেনকা, শিউলি, লতিকা, রূপালী, মানসী, অঞ্জলি, বর্ষা (ছোট), দেবীকা, বর্ষা (বড়), সোম, দেবানন্দ প্রমুখ। বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ওদের চোখে-মুখে। কিন্তু অভাবের সংসারের জন্য খেলার সামগ্রী কেনার সামর্থ্য ওদের অভিভাবকদের নাই । প্রশিক্ষকের সৌজন্যে যেটুকু জুটেছে। আজ সেই খেলার সামগ্রী ওরা পেল মঙ্গলকোট থানার পুলিশ আধিকারিকের কাছ থেকে। প্রত্যেকেই খুব খুশি।
গাড়ি থেকে নামার পর আইসি সাহেব প্রশিক্ষক সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে মহিলা ও পুরুষ ফুটবল দলের অধিনায়কদের হাতে তুলে দেন একসেট করে জার্সি, প্যান্ট ও অনুশীলনের জন্য ফুটবল । বাকিগুলো বিতরণের দায়িত্ব কোচ ও ফুটবলারদের হাতে ছেড়ে দেন। এমনকি ভবিষ্যতেও যেকোনো প্রয়োজনে ওদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি । শুধু তাই নয় তিনি কিছুক্ষণ ওদের অনুশীলন দেখেন । একসময় নিজে গোলকিপিংয়ের ভূমিকা পালন করেন। ওদের সঙ্গে গ্রুপ ছবিও তোলেন।
প্রসঙ্গত,বর্তমান আইসির জন্য বোমের শব্দে ঘুম ভাঙা মঙ্গলকোটের পরিস্থিতি অনেকটাই পাল্টে গেছে। বহু কুখ্যাত দুষ্কৃতি ফিরে এসেছে সমাজের মূল স্রোতে । ফিরে এসেছে খেলাধুলার পরিবেশ । লালডাঙা মাঠে নিয়মিত চলছে ফুটবল সহ বিভিন্ন খেলার অনুশীলন। মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয় ।এককথায় এলাকার পরিবেশ এখন অন্যরকম।
পিন্টুবাবু বললেন,খেলাধুলা এমন একটা জিনিস যা ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ রাখে। সমাজের পরিবেশ ভাল থাকে। যখন এইসব গরীব আদিবাসী ছেলেমেয়েদের কথা ওদের প্রশিক্ষকের কাছ থেকে জানতে পারি,তাই ওদের কিছু খেলার সামগ্রী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।’ তিনি বলেন,’সন্তানতুল্য ছেলেমেয়েগুলোকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এখানে মাঝে মাঝে আসার চেষ্টা করব। একটু উৎসাহ ও সুযোগ পেলে এদের হাত ধরেই হয়তো একদিন বাংলার ফুটবল জগত তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে। সেটা তো আমাদের গর্বের। আমি চাই এদের দেখে অন্যান্য গ্রামের অল্পবয়সী ছেলেমেয়েগুলো মাঠমুখী হোক।’
অন্যদিকে প্রেমানন্দবাবু বললেন,’ভাবতে পারিনি স্বয়ং আইসি সাহেব এইসব ছেলেমেয়েদের হাতে খেলার সামগ্রী তুলে দেবেন। আজ আমি ও আমার ছেলেমেয়েরা গর্বিত। একইসঙ্গে এটা ওদের কাছে বাড়তি প্রেরণা হিসাবে কাজ করবে ।’।