এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),২২ ফেব্রুয়ারী : নিজের গাড়িতে চড়ে রুটিন টহলদারিতে বেড়িয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার থানার বলগোনা বাজারে দুই কিশোরকে ভিক্ষা করতে দেখেছিলেন ভাতার থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত । দৃশ্যটা দেখে প্রসেনজিৎবাবুর সংবেদনশীল মনে আঘাত করে । তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে ওই দুই দুঃস্থ কিশোরের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করবেন । অবশেষে তিনি ভাতার থানার সন্তোষপুরে দুই কিশোরের বাড়িতে গিয়ে তাদের বাবা মাকে নিজের মনের কথা জানান । কিশোরের বাবা-মা এক কথাতে রাজি হয়ে যান । যদিও বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ার সামনে মুখ খোলেননি ভাতার থানার ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত।
তবে ভাতার থানার ওসির এই প্রকার সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলার ডিএএসপি ক্রাইম সুরজিৎ মন্ডল জানান, ভাতার থানার যিনি ভারপ্রাপ্ত ওসি রয়েছেন তিনি বিভন্ন সামাজিক নানান কাজকর্ম করে থাকেন। বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালনের সময় তার এই সমস্ত কর্মকাণ্ড দেখা গেছে । এতে পুলিশের সম্বন্ধে অনেক ধারণা সাধারণ মানুষের পাল্টে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ভাতারের সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা দুই কিশোরের বাবা শেখ আশরোফ শারীরিক প্রতিবন্ধী । মা চম্পা বিবি কাঁথা স্টিচের কাজ করে সংসার চালান । নুন আনতে পান্তা ফুরানো সংসারে সাশ্রয়ের জন্য তার দুই কিশোর সন্তান ইসমাইল শেখ ও আশরাফিল শেখ ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমে পড়ে । ফলে বন্ধ হয়ে যায় তাদের পড়াশোনা । বলগোনার বাজারে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষা করতে ওই দুই কিশোর ।
চম্পা বিবি বলেন, আমার স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম। একটি পালা ঘর নির্মানের জন্য সরকারিভাবে কিছু অনুদান দেওয়া হয় আমাদের । কিন্তু সেই টাকায় ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়নি । তাই আমাদের একমাত্র জমিটা বিক্রি করে ঘরটা কোনরকমে সম্পূর্ণ করি । আর আমাদের কিছু নেই । সংসার চালাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি ।তাই লোক লজ্জার মাথা খেয়ে ছেলেগুলোকে ওই কাজে নামিয়েছি ।তবে বড়বাবু যে আশ্বাস দিয়ে গেলেন তাতে করে ওদেরকে আর ওই কাজে পাঠাবো না ওদের পড়াশোনা করাবো।’
জানা গেছে, আজ বুধবার দুই কিশোরের বাড়িতে যান ওসি প্রসেনজিৎ দত্ত । কিনে নিয়ে যান মুদিখানার সামগ্রী । পাশাপাশি ইসমাইল শেখ ও আশরাফিল শেখের জন্য নিয়ে গিয়েছিলেন বই,খাতা,কলম, স্কুলব্যাগ সহ পড়াশোনার যাবতীয় সামগ্রী । জানা গেছে যে দুই কিশোরের মায়ের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ওসি।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল সেলিম বলেন,’পুলিশ কেবলমাত্র তাদের থানার কাজে ব্যস্ত থাকেন না । তার বাইরেও যে পুলিশ সমাজসেবামূলক কাজ করেন এটাই তার প্রমাণ । ভাতার থানার নতুন বড়বাবু প্রসেনজিৎ দত্ত তার প্রমাণ দিলেন ৷ তিনি আজ ওই দুঃস্থ পরিবারটির জন্য যা করলেন, তার জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয় । আমরা ভাতারবাসী হিসাবে চাইবো উনি সুস্থ থাকুন, সাধারণের মানুষের পাশে সর্বদা থাকুন ।’।