প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২০ এপ্রিল : ভোট মিটতে না মিটতে পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও
ভয়াল রুপ নিচ্ছে ’করোনা’ সংক্রমন।এক এক
দিনে ৯০ অধীক মানুষের দেহে ধরা পড়ছে ‘করোনা’ ভাইরাস সংক্রমণ।তারই মধ্যে মঙ্গলবার একদিনে জেলায় ৩২১ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পরেছে । এই অবস্থার মধ্যেই সোমবার মৃত্যু হল হোম-কোয়ারেন্টাইনে থাকা এক কোভিড আক্রান্তের। মৃতর নাম অশোক শেঠ (৫২)।ঘটনাটি ঘটেছে জেলার কালনা ২ ব্লকের বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের মিরহাট গ্রামে। এই মৃত্যুর খবর জানাজানি হতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন মিরহাট এলাকার বাসিন্দারা । আতঙ্কে মৃতর পরিবারকে সমবেদনা জানানোর জন্যেও কেউ এগিয়ে যান নি ।সকাল ১০ টার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অশোক শেঠের মৃতদেহ আগলে বসে থাকেন তাঁর স্ত্রী ।পরে কালনা মহকুমা শাসকের হস্তক্ষেপে কোভিড প্রটোকল মেনে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীরা মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় । তারপর থেকে আপত স্বস্তিতে গ্রামবাসীরা ।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,অশোক
শেঠ পেশায় ছিলেন চাষি । পরিবার সদস্যরা জানিয়েছেন ,দিন দশেক আগে অশোকবাবুর জ্বর , সর্দি কাশি উপশম দেখাদেয়। সেই থেকে তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন ।ব্লক হাসপাতালে করোনা টেস্ট করালে ১৪ এপ্রিল অশোকবাবুর রিপোর্ট ‘পজেটিভ’ আসে ।পরিবার সদস্যরা জানান ,চিকিৎসকের পরামর্শে তার পর থেকে অশোক বাবূ হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে শুরু করেন। দিন গড়ানোর সাথে সাথে অসুস্থতা বাড়তে শুরু করে ।সোমবার বেলা ১০ টা নাগাদ অশোক শেঠ মারা যান।
মৃতর স্ত্রী আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন ,এখন সবাই ভোট নিয়ে ব্যস্ত। তাই তাঁর স্বামীর ভ্যাগ্যে মেলেনি কোভিডের সু-চিকিৎসা । আশা কর্মীরাও কোন খোঁজ খবর নিতে আসতে পারেনি।চিকিৎসক হোম- কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলায় পরিবারের সবাইকে গৃহবন্দি হয়েই থাকতে হয় । সু-চিকিৎসা মিললে হয়তো তাঁর স্বামীকে এইভাবে অকালে চলে যেতে হত না ।
কালনা ২ ব্লক স্বাস্থ আধিকারিক চিকিৎসক
দীপক কুমার যদিও বলেন ,“মৃতর পরিবার যা বলছে তা ঠিক নয় । অশোক শেঠের শারীরিক অসুস্থতা বাড়ার পর তাঁকে বর্ধমাের কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করার কথা বারে বারে বলা হয়েছিল ।কিন্তু কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার সেই কথা শোনেন নি । এমন জ্বর , সর্দি , কাশি আগেও হয়েছিল ,এবারেও সেরে যাবে এমনটা বলে আক্রান্ত ব্যক্তি বাড়িতেই রয়ে গিয়ে ছিলেন । বিষয়টিকে এমন হালকা ভাবে নিয়ে পরিবার ঠিক কাজ করে নি । বিএমওএইচ জানিয়েছেন ,কোভিড প্রটোকল মেনেই রাতে স্বাস্থ্য কর্মীরা মৃতদেহ উদ্ধার করেছে’ ।
স্থানীয় বৈদ্যপুর পঞ্চায়েতের প্রধান মিজানুর রহমানও একই কথা জানিয়েছেন । প্রধান বলেন ,সম্প্রতি তিনিও কোভিড আক্রান্ত হন । এখন সুস্থ রয়েছেন । তা সত্ত্বেও কোভিড আক্রান্ত অশোক শেঠের বাড়িতে সোমবার তিনি চার বার গিয়েছেন । আক্রান্তদের সবার জন্য বিভিন্ন ফল দিয়ে এসেছেন । প্রধান জানান ,অশোক বাবুর স্ত্রী কোভিডের থাবা থেকে মুক্ত থাকলেও শেঠ পরিবারে আরও তিনজন কোভিড আক্রান্ত হয়ছেন । তারাও হোম কোয়ারেন্টানে রয়েছেন ।স্বাস্থ্য দপ্তর কোভিড প্রটোকল মেনে রাতে মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এটাকে গাফিলতি বলা ঠিক নয়“ ।
কোভিড সংক্রমন বেড়ে চলায় চিন্তিত জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর । জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা জানিয়েছেন , “কোভিড নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো ও ‘মাস্ক ’পরা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে । পাশাপাশি সমস্ত জনবহুল এলাকায় সচেতনতা প্রচার চালানোর কথাও বলা হয়েছে“ । জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর এরমধ্যে এক এক দিন ৯০ অধীক মানুষের দেহে করোনা সংক্রমণের হদিশ মিলেছে । তারমধ্যে শুধু মঙ্গলবার একদিনে জেলায় ৩২১ জনের করোনা পজিটিভ ধরা পরেছে । যা এই সময় কালের সর্বোচ্চ বলে মনে করছেন জেলার স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা ।।