প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ এপ্রিল : বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। তার সূচনা হয় পয়লা বৈশাখ থেকেই। চৈত্রের বকেয়া কয়েকটা দিন কাটলেই পয়লা বৈশাখ। আপামোর বাঙালি ওই দিনটিতে ঘটা করে পালন করবেন তাঁদের প্রিয় নববর্ষ । তার কাউন্ট ডাউনও ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে।
বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে এখন বিভিন্ন ছাপাখানায় তুঙ্গে উঠছে লাল মলাটের হাল খাতা ও বাংলা পঞ্জিকা সহযোগে ক্যালেন্ডার তৈরির ব্যস্ততা।ঠিক এমনই সময়ে সবার নজর কেড়ে নিয়েছে বর্ধমান শহরের বিধানপল্লীর ’চিত্র কুটিরের’ শতাধীক ছাত্রছাত্রী । পরিবেশ সচেতনতার ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে তারা ভেষজ রং দিয়ে নিজেরাই হাতে এঁকে তৈরি করছে বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডার। যে ক্যালেন্ডারের প্রতি পাতায় থাকছে প্রকৃতি ও পরিবেশ নিয়ে রংবেরঙের আঁকি বুকি ও কোন না কোন সবজি বা ফল মূলের বীজ। এমন অভিনব ক্যালেন্ডার তৈরির ভাবনার তারিফ করেছেন পরিবেশপ্রেমীরা ।
বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডার তৈরির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বহু পুরানো ইতিহাস। সেই ইতিহাস থেকেই জানা গেছে,পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি জাতি নিজেদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে বরনের জন্য বিশেষ কোন একটি দিনকে স্মরণীয় হিসাবে রাখে।বাঙালি জাতির কাছে তেমনই স্মরণীয় দিন হল পয়লা বৈশাখ, অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ । যাকে ঘিরে স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উন্মাদনাও কম ছিল না। কবিগুরুর রচিত ‘এসো হে বৈশাখ- এসো এসো’,এই গান আজও তাই বাংলা নববর্ষকে প্রণবন্ত করে।
এই বাংলা নববর্ষকে সামনে রেখে যে ক্যালেন্ডার তৈরি হয় তার সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীণ ইতিহাস । তার থেকেই জানা যায়,প্রাচীন বাংলার রাজা শশাঙ্কের আমলে শুরু হয় বাংলা সন গণনা হয়। পরবর্তী কালে সূর্য সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে রচিত হিন্দু ’সোলার ক্যালেন্ডার’ থেকে উৎপত্তি হয় বাংলা ক্যালেন্ডারের।এরপর মোঘল সম্রাট আকবর ’কর’ আদায়ের জন্য বাংলা ক্যালেন্ডারের প্রচলন করেন। সময় গড়ানোর সাথে সাথে বাঙালির আভিজাত্যে জায়গা করে নেয় বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডার ।
ইংরেজি নববর্ষের ক্যালেন্ডারের চাহিদা মূলত থাকে সরকারী ছুটি ও নানান কাজকর্মের জন্য। কিন্তু বাংলা নববর্ষের ক্যালেন্ডারে থাকে বাঙালির
নানা আচার অনুষ্ঠান, পুজো পার্বণ, তিথি নক্ষত্রের
অবস্থান ,আমাবশ্যা কিংবা পূর্ণিমার সময় সারণী সহ কত কিছুই না থাকা।তাইতো পয়লা বৈশাখের দিন বাংলা ক্যালেন্ডার আর মিষ্টি দিয়ে শুভেচ্ছা আদান প্রদান করেন বাঙালি ।আর ওই ক্যালেন্ডার
সারাটা বছর বাঙালির ঐতিহ্যের জানান দেয়।
সেই ঐতিহ্য কে আরো ঐতিহ্যময় করে তুলতে
বর্ধমানের চিত্র কুটিরের ছাত্রছাত্রীরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তারা ভেষজ রঙ দিয়ে নিজেরা হাতে এঁকে তৈরি করছে অভিনব ক্যালেন্ডার।ছাত্রছাত্রীদের কথায়,তাঁদের তৈরি ক্যালেন্ডারের প্রতিটি মাসের পাতায় থাকবে তাঁদের আঁকা ছবি।আর তার মধ্যেই লুকানো থাকবে কোনো না কোনো শাকসবজি,ফল মূলের বীজ। এক একটা মাস ফুরালে ফেলে দেওয়া ক্যালেন্ডারের পাতা থেকেই জন্ম নেবে নতুন গাছ ।
চিত্র কুটিরের শিক্ষিকা সুতপা রায় জানান,এমন ক্যালেন্ডার তৈরির ভাবনা সম্পূর্ণ নিজস্ব শধুই নয়
বাংলাতেও বোধ হয় এই প্রথম । এই ক্যালেন্ডার তৈরির জন্য যাবতীয় সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মেমারির পাল্লারোড পল্লীমঙ্গল সমিতি এবং বর্ধমান নেহেরু যুব কেন্দ্র। বর্ধমানের বাইরে কলকাতায় সহ গোটা রাজ্যে যাতে এমন ক্যালেন্ডার জনপ্রিয়তা পায় সেই ব্যাপারেও উদ্যোগ নিচ্ছেন চিত্র কুটিরের কর্তৃপক্ষ। গাছমাস্টার বলে পরিচিত অরুপ চৌধুরী বলেন,এমন ক্যালেন্ডার তৈরির ভাবনাটাই অনবদ্য । ক্যালেন্ডারে গাছের বীজ থাকাটা সম্পূর্ণ একটা নতুন ভাবনা । সবুজায়নে ও পরিবেশ রক্ষায় এমন সহায়ক হতে পারে।।