এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা,১৬ ডিসেম্বর : মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের অপসারিত তৃণমূল প্রধান ও উত্তর শালদহ এলাকার বাসিন্দা লাভলি খাতুনকে নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল । তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে বিয়ে করে রীতিমতো সংসার ফেঁদে বসার অভিযোগ উঠেছে । শাসকদলের ঘনিষ্ঠতার সুযোগে ‘নকল’ বাবা সাজিয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরির অভিযোগ ওঠে । কলকাতা হাইকোর্টে অভিযোগ সত্যতা প্রমানিত হওয়ার পর পঞ্চায়েতের প্রধানের পদ খোয়াতে হয়েছিল তাকে । তাই লাভলি খাতুনের বাংলাদেশি নাগরিক হওয়া প্রমানিত সত্য । অনেকেই ভেবেছিলেন, এসআইআর-এর পর ভোটার তালিকা থেকে নিশ্চিতভাবে তার নাম বাদ যাবে । কিন্তু তাদের সকলের ভাবনাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে খসড়া ভোটার তালিকায় নাম তুলে ফেলেছেন লাভলি খাতুন । বিষয়টি নিয়ে এখন তোলপাড় চলছে রাজ্য রাজনীতি মহল ।
বিজেপির অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস চক্রান্ত করে ওই বাংলাদেশি মহিলার নাম ভোটার তালিকায় তুলে দিয়েছে । বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক কিষান কেডিয়ার অভিযোগ,’শাসকদল সব জেনেশুনেই বাংলাদেশি লাভলির নাম ভোটার তালিকায় ঢুকিয়েছে। আমরা এই বিষয় নিয়ে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দায়ের করব, যাতে লাভলি খাতুনের নাম বাদ যায়।’ যদিও বিজেপির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি আব্দুর রহিম বকসি ।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, লাভলির প্রকৃত নাম নাসিয়া শেখ। ২০১৫ সালে ভারতে তাঁর ভোটার কার্ড ইস্যু হয়। ২০১৮ সালে ইস্যু হয় বার্থ সার্টিফিকেট । তার বাংলাদেশি হওয়ার অভিযোগ ঘিরে তোলপাড় চলছে বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই । আসলে,হরিশ্চন্দ্রপুরের রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পদ মহিলা (ওবিসি) সংরক্ষিত ছিল। কংগ্রেস-সিপিএম জোট তাকে টিকিট দিয়েছিল । ভোটে জেতেনও তিনি । কিন্তু প্রধান পদ গঠনে আস্থা ভোটের সময় যোগ দেন তৃণমূলে। ওই পঞ্চায়েত একটি সিটের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায় কংগ্রেস-সিপিএম জোটের। তৃণমূল লাভলি খাতুনকে প্রধান নির্বাচিত করে । এদিকে পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী রাহেনা সুলতানা-সহ কয়েকজন লাভলি বিরুদ্ধে বাংলাদেশি নাগরিক, শংসাপত্রের নথি ভুয়ো বলে অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন । বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায় । সেই মামলায় লাভলি খাতুনের শংসাপত্রের নথি ভুয়ো প্রমাণিত হয় । এরপরেই তাকে প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেয় তৃণমূল ।
চলতি বছরে প্রধানের পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর ‘বাংলাদেশি’ লাভলি খাতুনকে তার নিজের দেশে ফেরানোর জোরালো দাবি ওঠে । ইতিমধ্যে এস আই আর শুরু হয় । অনেকে ভেবেছিলেন যে লাভলির নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ যাবে । ২০০২ সালের তালিকায় লাভলির নাম নেই। তিনি সেখানে কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের শেখ মোস্তফাকে বাবা হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে এসআইআর আবহে তাকে নিয়ে ফের একপ্রস্ত বিতর্ক শুরু হয় । লাভলি খাতুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে উত্তর শালদহ এলাকার বিএলও মজিবর রহমান তার ভাসুর হওয়ায় তাকে জোর করে গননা ফর্ম ডিজিটাইজেশন করিয়ে দিয়েছেন । বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বিডিও-এর কাছে অভিযোগও জানান বলে তখন জানিয়েছিলেন বিএলও মজিবর রহমান । কিন্তু আজ খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ্যে আসতেই দেখা যায় লাভলির নাম এসেছে এবং স্বামীর নাম হিসেবে রবিউল ইসলামের নাম দেওয়া রয়েছে। এই বিষয়ে রশিদাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর শালদহ এলাকার ৫৩ নম্বর বুথের বিএলও মজিবর রহমান বলেন,’আমার বুথ থেকে ৩৪ জনের নাম বাদ গিয়েছে। আমাকে নথি যাচাইয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।’ এখন প্রশ্ন উঠছে যে “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী” প্রমানিত তৃণমূলের বহিষ্কৃত পঞ্চায়েত প্রধান লাভলি খাতুনের নাম কি ভোটার তালিকা থেকে আদপেই বাদ যাবে ?

