এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,১৫ জুন : নূপুর শর্মার কথিত ধর্মনিন্দার বিতর্কের পর উপসাগরীয় দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ফের স্থিতাবস্থায় এসেছে ৷ সম্পর্ক মজবুত করতে এবার মুখ্য ভূমিকা নিচ্ছে ভারতীয় দেশি গরুর গোবর । ভারত থেকে ১৯২ মেট্রিক টন (১ লাখ ৯২ হাজার কেজি) গোবর কিনছে মুসলিম রাষ্ট্র কুয়েত । গুজরাটের মুন্দ্রা বন্দর থেকে গোবরের প্রথম খেপ কুয়েতে পাঠানো হবে । তবে গোবরের এই রপ্তানি সমবায় পর্যায়ে নয়, সরকারি পর্যায়ে হচ্ছে ।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘অর্গানিক ফার্মার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া’-এর সভাপতি ডঃ অতুল গুপ্তার প্রচেষ্টায় আজ ভারতীয় গরুর গোবর আজ আন্তর্জাতিক পণ্যের স্বীকৃতি অর্জত করেছে । কুয়েতের লামোর নামের একটি কোম্পানি গোবরের অর্ডার দিয়েছে ‘সানরাইজ এগ্রিল্যান্ড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের এই কোম্পানিকে । আজ (বুধবার) কনকাপুরা রেলস্টেশন থেকে গোবরের প্রথম চালান পাঠানো হবে কুয়েতের উদ্দেশ্যে । জয়পুরের কাস্টম বিভাগের তত্ত্বাবধানে টঙ্ক মোড়ে অবস্থিত পিঞ্জরাপোল গোশালার ‘সানরাইজ অর্গানিক পার্কে’ কনটেইনারে গোবর প্যাক করার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেছে ।
কিন্তু কি উদ্দেশ্যে ভারত থেকে গোবর কিনছে কুয়েত ? রিপোর্ট অনুযায়ী, সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতারের বিজ্ঞানীরা ভারতীয় দেশি গরুর গোবরকে অত্যন্ত উপকারী বলে উল্লেখ করেছেন । কুয়েত দেখেছে যে ভারতীয় গোবর ব্যবহারে খেজুরের আকার ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায় । এছাড়া উপসাগরীয় দেশগুলোতে কীটনাশকের কারণে খেজুরের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় জনগণের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোও উপসাগরীয় দেশগুলোতে রপ্তানি করা কীটনাশক বন্ধ করে দিচ্ছে । এই কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর বাজারেও প্রভাব পড়ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে, কীটনাশক দূর করতে গোবর সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা নেয় ।
বিজ্ঞানীদের গবেষণায় দেখা গেছে,গোবরে ০.৫ থেকে ০.৬ শতাংশ নাইট্রোজেন, ০.২৫ থেকে ০.৩ শতাংশ ফসফরাস, ০.২৫ থেকে ০.৩ এবং পটাশ থাকে। পাশাপাশি গোবর সারে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, তামা এবং জিঙ্ক প্রভৃতি উপাদানগুলি । যা মাটিকে উর্বর করে তোলে । এই সব বিষয় বিবেচনা করে প্রথমবারের মতো গোবরের অর্ডার দিয়েছে কুয়েত । ভারতীয় গরুর গোবর খেজুর ফসলের জন্য পাউডার আকারে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছে ওই মুসলিম রাষ্ট্রটি ।
উপসাগরীয় দেশগুলোতে গোবরের চাহিদা এমনই যে, পরিবহন খরচ ৪০ শতাংশ বেশি দিয়ে অর্ডার করা হচ্ছে । সৌদি আরব, কুয়েত ও কাতার এই তিন দেশের পর বাকি উপসাগরীয় দেশগুলোও গোবরের চাহিদা সম্পর্কে সচেতন হয়েছে । জুলাইয়ে আমেরিকা ও কাতারে গোবর রপ্তানি করবে ভারত । উপসাগরীয় দেশের পাশাপাশি ব্রিটেনে ইতিমধ্যেই গোবর থেকে বছরে প্রায় ছয় মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে । সেই কারনে যুক্তরাজ্যের কিছু কোম্পানি ভারতের দেশি গরুর গোবর কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে । প্রতিবেশী দেশ চীন গোবর ব্যবহার করে ১৫ কোটি পরিবারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে । ভারতে কৃষি খাতে পশু পণ্যের সফল ব্যবহার হাজার হাজার বছর ধরে চলে আসছে । পাশাপাশি ভারত ইতিমধ্যেই কৃষি খাতে পশু পণ্য রপ্তানির একটি বড় কেন্দ্র হয়ে উঠেছে । ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতের পশু পণ্য রপ্তানির পরিমান ছিল ২১,১৫৫.৫৬ কোটি টাকা । এদিকে ভারতের ৩০০ মিলিয়ন গবাদি পশু প্রতিদিন প্রায় ৩ মিলিয়ন টন গোবর দেয় । আরও বৃহত্তর আকারে বিদেশে গোবর রপ্তানি করতে দেশের প্রায় সব রাজ্যের সঙ্গে কেন্দ্র সরকার এবার আলোচনায় বসার পরিকল্পনা করেছে বলে জানা গেছে ।
প্রসঙ্গত,গরুর দুধের ঘি’সহ অন্যান্য পণ্য আগে থেকেই বিদেশে যেত। এখন গোবরও যাবে। এতে গোয়াল ও গবাদি পশু পালনকারীদের আয়ও বাড়বে । আর সারা বিশ্বে গো-পণ্যের জন্য একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরিতে ভারতের গোভক্তদের একটি বড় অবদান রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে ।।